মেজাজ হলো একটি মানসিক বা আবেগিক অবস্থা, যা মানুষের অনুভূতি এবং আচরণে প্রতিফলিত হয়। এটি কারো মনোভাব বা মুডের অবস্থা, যা কখনো শান্ত, সুখী, উত্তেজিত, রাগান্বিত, অথবা হতাশ হতে পারে। মেজাজের পরিবর্তন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত এবং এটি তার আচরণ, প্রতিক্রিয়া এবং সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
মেজাজের কারণ:
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: অতিরিক্ত চাপ বা উদ্বেগ মানুষের মেজাজকে খিটখিটে বা অস্থির করে দিতে পারে।
- শারীরিক অসুস্থতা: অসুস্থতা, বিশেষ করে শারীরিক যন্ত্রণা বা ক্লান্তি, মেজাজ খারাপ করতে পারে।
- অত্যধিক পরিশ্রম বা অনিদ্রা: ভালোভাবে বিশ্রাম না নেওয়া বা পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া মেজাজের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
- অপ্রাপ্তি বা হতাশা: জীবনের লক্ষ্য বা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ না হলে, মেজাজ খারাপ হতে পারে।
- অভ্যন্তরীণ বৈষম্য বা সমস্যা: ব্যক্তিগত সমস্যা বা সম্পর্কের জটিলতা মেজাজে পরিবর্তন আনতে পারে।
- হরমোনাল পরিবর্তন: শারীরিক বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তনে (যেমন: ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা বা থাইরয়েডের সমস্যা) মেজাজের ওঠানামা হতে পারে।
- মাদক বা অ্যালকোহল: অ্যালকোহল বা মাদকের ব্যবহারের কারণে মেজাজের দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।
মেজাজের লক্ষণ:
- অস্থির বা বিরক্ত অনুভূতি: সাধারণত মন খারাপ বা রাগান্বিত অনুভূতি।
- দুঃখ বা হতাশা: জীবনে অন্ধকার দৃষ্টিভঙ্গি দেখা, বিষণ্ণতা অনুভব করা।
- অতিরিক্ত উত্তেজনা: কিছু সময়ের জন্য খুব উচ্ছ্বাসিত, খুশি বা চঞ্চল হয়ে ওঠা।
- রাগ বা ক্রোধ: তুচ্ছ ব্যাপারে দ্রুত রেগে যাওয়া বা বিরক্ত হওয়া।
- মনোযোগের অভাব: কিছুর প্রতি আগ্রহ বা মনোযোগ হারানো, স্বাভাবিক কাজকর্মে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া।
- আবেগের খামখেয়ালি পরিবর্তন: এক সময় অত্যন্ত খুশি বা হাস্যকর, আবার অন্য সময় বিষণ্ণ বা রেগে থাকা।
মেজাজের প্রতিকার:
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সঠিক পরিমাণে ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়াম মেজাজের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
- মানসিক প্রশান্তি: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম মেজাজ শান্ত করতে সাহায্য করে।
- মানসিক বিশ্রাম: শারীরিক বা মানসিক বিশ্রাম নেওয়া, ধীরে ধীরে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ তৈরি করা।
- মনের অনুভূতি প্রকাশ করা: নিজের মনের অবস্থা বা অনুভূতি কাছের মানুষদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। এটি চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- শখ ও বিনোদন: প্রিয় কাজ বা শখের মাধ্যমে মনকে ভালো রাখা এবং মেজাজ ভালো রাখা।
- অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলা: কাজের চাপ কমানো, একটানা দীর্ঘ সময় কাজ না করা এবং বিশ্রাম নেওয়া।
- বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া: যদি মেজাজের সমস্যাটি গুরুতর হয়ে ওঠে এবং দীর্ঘ সময় থাকে, তবে একজন মনোচিকিৎসক বা পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া।
মেজাজের ওঠানামা খুবই স্বাভাবিক, তবে যদি তা জীবনযাত্রার মানে প্রভাব ফেলে, তবে এর যথাযথ চিকিৎসা বা সমাধান প্রয়োজন হতে পারে।