Best Homeo Doctor

স্তম্বিতভাবের কারণ,লক্ষন,প্রতিকার

স্তম্বিতভাব (Frozen or Stunned Feeling) হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতি সামনে পড়লে শারীরিক বা মানসিকভাবে স্থির হয়ে যান, তাদের মস্তিষ্ক বা শরীর কোনো প্রতিক্রিয়া বা কর্মক্ষমতা দেখাতে পারে না। এটি সাধারণত শক, ভয়, বা অত্যধিক মানসিক চাপের কারণে ঘটে। অনেক সময় যখন কেউ কোনো বড় ধাক্কা, অপ্রত্যাশিত বা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তখন তাদের মধ্যে একটি “স্তম্বিত” (frozen) অবস্থা সৃষ্টি হয়, যেখানে তারা ঠিক কী করবে বা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা বুঝতে পারেন না।

স্তম্বিতভাবের কারণ:

স্তম্বিত বা “ফ্রিজ” অবস্থার কিছু সাধারণ কারণ হতে পারে:

  1. ভয় বা আতঙ্ক:
    • কোনো অপ্রত্যাশিত বা বিপদজনক পরিস্থিতি যেমন দুর্ঘটনা, ভয়াবহ ঘটনা, বা আক্রমণের সম্মুখীন হলে, ব্যক্তির শরীর স্বাভাবিকভাবে ভয় পেয়ে “ফ্রিজ” হতে পারে। এটি বেঁচে থাকার ইন্সটিংক্ট হিসেবে কাজ করে, যেখানে ব্যক্তির শরীর প্রতিক্রিয়া দেয় না, যাতে তারা বিপদের সময় নিরাপদে থাকতে পারে।
  2. মানসিক চাপ বা দুঃখ:
    • অত্যাধিক মানসিক চাপ, দুঃখ বা শোকের কারণে ব্যক্তি স্তম্ভিত হয়ে পড়তে পারেন। যেমন, বড় ধরনের জীবনযাত্রার পরিবর্তন (মৃত্যু, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, চাকরি হারানো ইত্যাদি) ব্যক্তির মানসিক অবস্থা এতটাই প্রভাবিত করতে পারে যে, তারা মুহূর্তের জন্য শূন্য হয়ে যান এবং কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
  3. ঐতিহাসিক ট্রমা বা আঘাত:
    • পূর্বের শারীরিক বা মানসিক আঘাত বা ট্রমার (যেমন শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, বা অন্য কোনো বড় ধরনের শোক) ফলে লোকের মধ্যে স্তম্ভিত হওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে। ট্রমা বা পূর্ব অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি তাদের মানসিক অবস্থাকে এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যে, তারা শক বা স্তম্ভিত অবস্থায় চলে যান।
  4. অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি বা অবিশ্বাস্য ঘটনা:
    • এমন কোনো ঘটনা যা খুবই অবিশ্বাস্য বা অপ্রত্যাশিত মনে হয়, তা অনেক সময় ব্যক্তিকে স্তম্ভিত করে। যেমন, কোনো খারাপ খবর শোনা বা এমন কোনো ঘটনা যা বিশ্বাস করতে পারা কঠিন, তা শারীরিক ও মানসিকভাবে অবশ করে দেয়।
  5. অতিরিক্ত শোক বা বিপদের সম্মুখীন হওয়া:
    • যখন কোনো মানুষ অতিরিক্ত শোক বা দুঃখজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু বা কোনো বড় বিপর্যয়, তখন তার মস্তিষ্ক বা শরীর শক অবস্থায় চলে যেতে পারে এবং ব্যক্তিটি কিছুক্ষণের জন্য কোনোরকম প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ নিতে অক্ষম হয়ে পড়েন।

স্তম্বিতভাবের লক্ষণ:

স্তম্বিত বা শক অবস্থার কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. মানসিক লক্ষণ:
    • পরিস্থিতির প্রতি কোনও প্রতিক্রিয়া না দেওয়া, শূন্য অনুভব করা।
    • হতাশা বা বিমূঢ়তা অনুভব করা, কিছু ভাবতে না পারা বা সিদ্ধান্ত নিতে না পারা।
    • গভীর শোক, অসহায়ত্ব, বা বিভ্রান্তি অনুভব করা।
    • জীবনে কোনো উদ্দেশ্য বা মানে হারানো মনে হওয়া।
  2. শারীরিক লক্ষণ:
    • শারীরিকভাবে অবশ বা স্থির হয়ে থাকা, কোন কিছু করতে না পারা।
    • ঘাম, শ্বাসকষ্ট বা হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া।
    • শরীরের কোনও অংশে টান বা শিথিলতা অনুভব করা।
    • শীতল বা গরম অনুভূতি, পেশীতে টান বা চাপ অনুভূত হওয়া।
  3. আচরণগত লক্ষণ:
    • কোনো ধরনের অঙ্গভঙ্গি বা কথা না বলা, চোখের সামনে কিছু না দেখা বা কোনও প্রকার প্রতিক্রিয়া না দেখানো।
    • নিজেকে আড়াল করে রাখা বা অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
    • কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে পড়া।

স্তম্বিতভাবের প্রতিকার:

স্তম্বিত বা শক অবস্থায় থাকা মানুষের জন্য কিছু সহায়ক প্রতিকার রয়েছে, যা তাদের দ্রুত মানসিক এবং শারীরিকভাবে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারে:

  1. শান্তির শ্বাসপ্রশ্বাসের অভ্যাস:
    • শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যেমন গहरी শ্বাস নেওয়া এবং ধীরে ধীরে ছেড়ে দেওয়া, ব্যক্তিকে শান্ত করতে সহায়তা করতে পারে। এটি মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  2. শরীরিক শিথিলতা এবং যোগব্যায়াম:
    • যোগব্যায়াম বা শিথিলতা ব্যায়াম শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং ব্যক্তি শক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
  3. মনের মধ্যে পুনঃমূল্যায়ন করা:
    • নিজেকে এবং পরিস্থিতিকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করুন। আপনি যা অনুভব করছেন তা স্বীকার করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার অনুভূতিগুলোকে বুঝতে চেষ্টা করুন।
    • যদি আপনি বিপদ বা শক অনুভব করছেন, তবে নিজেকে বলুন, “এটি একটি পরিস্থিতি, যা আমি কাটিয়ে উঠতে পারব।”
  4. মনোচিকিৎসা বা কাউন্সেলিং:
    • একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া খুবই কার্যকর হতে পারে। তাদের সহায়তায় আপনি শক বা স্তম্ভিত অবস্থায় আসার কারণগুলো খুঁজে বের করতে পারেন এবং সেগুলোর মোকাবিলা করার উপায় শিখতে পারেন।
  5. সহযোগিতা চাওয়া:
    • বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলুন। তাদের সাপোর্ট আপনাকে মানসিকভাবে শান্ত হতে এবং পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
  6. ধীরে ধীরে পরিস্থিতির সাথে অভ্যস্ত হওয়া:
    • যখন আপনি স্তম্ভিত হয়ে পড়েন, তখন দ্রুত সবকিছু সমাধান করার জন্য নিজেকে চাপ দেবেন না। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির সাথে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করুন এবং সময়ের সাথে সাথে আপনিও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবেন।
  7. মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা:
    • নিজেকে ভালবাসুন এবং আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিন। ভালো খাওয়া, বিশ্রাম, এবং শারীরিক কার্যকলাপ আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।

উপসংহার:

স্তম্বিতভাব একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে যখন কোনো ব্যক্তির সামনে ভয় বা শকপূর্ণ ঘটনা আসে। তবে, এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব এবং এর জন্য সহায়ক চিকিৎসা, শিথিলতা, এবং সময়ের প্রয়োজন। সুস্থ মানসিকতা বজায় রেখে এবং নিজের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে এই অবস্থার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *