Best Homeo Doctor

সামাজিক ভীতির কারণ,লক্ষন,প্রতিকার

সামাজিক ভীতি (Social Anxiety) বা সামাজিক উদ্বেগ হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি সামাজিক পরিবেশ বা মানুষের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে ভয় বা অস্বস্তি অনুভব করেন। এটি সাধারণত সামাজিক পরিস্থিতিতে বিশেষত জনসমক্ষে কথা বলা, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা মূল্যায়িত হওয়ার বিষয়ে এক ধরনের অতিরিক্ত উদ্বেগ বা ভয় সৃষ্টি করে। সামাজিক ভীতি ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কাজকর্ম এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

সামাজিক ভীতির কারণ:

সামাজিক ভীতির বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. জীবনের অভিজ্ঞতা: অতীতে কোনো সামাজিক পরিস্থিতিতে অস্বস্তি, অপমান, বা ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক ভীতি তৈরি করতে পারে। যেমন, স্কুলে বন্ধুদের কাছে হাস্যকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া বা জনসমক্ষে কথা বলার সময় কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া।
  2. অতিরিক্ত আত্মসচেতনতা: অনেক সময় ব্যক্তি তার নিজস্ব আচরণ, কথাবার্তা বা শরীরী ভাষা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করেন, যার ফলে তিনি আরও বেশি উদ্বিগ্ন হন এবং ভয়ে ভুগতে পারেন।
  3. পারিবারিক বা পরিবেশগত প্রভাব: কিছু পরিবারে খুব বেশি কড়া বা অত্যধিক সুরক্ষিত পরিবেশে বড় হওয়া শিশুর মধ্যে সামাজিক ভীতি সৃষ্টি হতে পারে। তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস কমে গিয়ে সামাজিক পরিস্থিতির প্রতি ভয় সৃষ্টি হতে পারে।
  4. বংশগত কারণ: গবেষণায় দেখা গেছে যে সামাজিক ভীতি কিছুটা বংশগত হতে পারে। কিছু মানুষের মধ্যে এটি জন্মগতভাবে থাকে, অর্থাৎ তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সামাজিক উদ্বেগ থাকতে পারে।
  5. বিষণ্ণতা বা উদ্বেগজনিত সমস্যা: যারা সাধারণত উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগেন, তাদের মধ্যে সামাজিক ভীতি বা উদ্বেগের প্রবণতা বেশি থাকতে পারে।
  6. শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু শারীরিক সমস্যা, যেমন রক্তচাপ বা শ্বাসকষ্ট, সামাজিক পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
  7. সামাজিক চাপ বা প্রত্যাশা: এক্ষেত্রে, সঙ্গীর, সহকর্মীর বা সমাজের প্রত্যাশা থেকে সামাজিক ভীতি সৃষ্টি হতে পারে। যেমন, সামাজিক মহল বা অনুষ্ঠানে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে না পারার চিন্তা।

সামাজিক ভীতির লক্ষণ:

সামাজিক ভীতির লক্ষণগুলি শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রকাশ পেতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. শারীরিক লক্ষণ:
    • হাত ও পায়ের কাঁপুনি বা ঘাম হওয়া।
    • মুখমণ্ডলে লালচে ভাব বা গরম অনুভূতি।
    • বুকের মধ্যে চাপ বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা।
    • পেট খারাপ হওয়া বা বমি বমি ভাব।
    • মাথা ঘোরা বা অবচেতনভাবে শরীরের অস্বস্তি।
  2. মানসিক লক্ষণ:
    • উদ্বেগ বা আতঙ্ক অনুভব করা।
    • অন্যদের দ্বারা বিচার বা অপমানের ভয় অনুভব করা।
    • নিজের সামাজিক দক্ষতা নিয়ে সংশয় বা আত্মবিশ্বাসের অভাব।
    • অপরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভয় বা অস্থিরতা অনুভব করা।
  3. আচরণগত লক্ষণ:
    • সামাজিক পরিবেশ এড়িয়ে চলা বা পার্টি বা জনসমক্ষে যাওয়া এড়িয়ে যাওয়া।
    • ভীড় বা জনসমক্ষে নির্দিষ্ট সময় বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা।
    • অন্যদের সামনে নিজেকে কম আত্মবিশ্বাসী বা নিস্তেজ হিসেবে দেখা।
    • কথা বলার সময় মুদ্রা পরিবর্তন বা হীনমন্যতা অনুভব করা।

সামাজিক ভীতির প্রতিকার:

সামাজিক ভীতি দূর করার জন্য কিছু প্রতিকার বা চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যা কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় সমৃদ্ধি আনতে সাহায্য করতে পারে। কিছু সাধারণ প্রতিকার হল:

  1. মনোথেরাপি (থেরাপি):
    • কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT): এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর থেরাপি, যা সামাজিক ভীতির চিকিৎসায় সাহায্য করে। CBT-র মাধ্যমে, ব্যক্তি তার অযৌক্তিক চিন্তা ও বিশ্বাসগুলো চিহ্নিত করে এবং তা পরিবর্তন করতে শিখে, যাতে সমাজের সামনে দাঁড়িয়ে কম উদ্বেগ অনুভব করেন।
  2. শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম: শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা মেডিটেশন দ্বারা উদ্বেগ কমানো যেতে পারে। গভীর শ্বাস নেয়া এবং মনোযোগ দিয়ে শ্বাসের দিকে মনোযোগী হওয়া মনকে শান্ত করতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
  3. ধীরে ধীরে সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রবেশ করা: সামাজিক ভীতির মোকাবেলায় ধীরে ধীরে ছোট ছোট সামাজিক পরিবেশে প্রবেশ করা খুবই কার্যকর হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি এক্সপোজার থেরাপি নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে, ব্যক্তি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন এবং উদ্বেগ কমাতে পারেন।
  4. নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো: সামাজিক দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা, যেমন কথাবার্তা বলার সময় শারীরিক ভাষা বা চোখের যোগাযোগের উপযুক্ত ব্যবহার। এতে ব্যক্তি নিজের মধ্যে সামাজিক পরিস্থিতির প্রতি আত্মবিশ্বাস অনুভব করতে পারেন।
  5. সামাজিক সহায়তা: বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্য বা সাইকোলজিস্টের সাহায্য গ্রহণ করা। যখন আপনি অন্যদের সহায়তা পান, তখন সামাজিক ভীতি কাটানো সহজ হতে পারে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের সহায়তা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সহায়ক হয়।
  6. আত্মসম্মান বৃদ্ধি: নিজেকে স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে মূল্যায়ন করতে শিখুন। সামাজিক ভীতি অনেক সময় আত্মসম্মান বা আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে হয়ে থাকে, তাই নিজের ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করুন এবং সেগুলোকে মূল্যায়ন করুন।
  7. পেশাগত সাহায্য গ্রহণ করা: যদি সামাজিক ভীতি গুরুতর হয়ে থাকে, তাহলে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোবিদের সাহায্য নেওয়া উচিত। তারা চিকিৎসা এবং মনোথেরাপির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করতে পারেন।

সামাজিক ভীতি একটি সাধারণ মানসিক অবস্থা, যা সঠিক থেরাপি, সহায়তা এবং মনোযোগের মাধ্যমে কাটিয়ে উঠা সম্ভব। তবে, এটি মোকাবেলা করতে সময় ও অধ্যবসায় প্রয়োজন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *