Best Homeo Doctor

রাতকানা কারন,লক্ষন,প্রতিকার

রাতকানা (Nyctalopia) বা রাতে কম দেখার সমস্যা একটি চোখের রোগ যা সাধারণত রাতের বেলা বা কম আলোতে দৃষ্টির সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি উন্নত করতে অসুবিধা সৃষ্টি করে যখন আলোর পরিমাণ কম থাকে। রাতকানা সাধারণত আলোকস্বল্প পরিবেশে বা সন্ধ্যা ও রাতের বেলা চোখে ঝাপসা বা মুশকিল দেখার সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কারণ:

রাতকানার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে:

  1. ভিটামিন A এর অভাব:
    • ভিটামিন A চোখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ভিটামিনের অভাব রাতকানার একটি প্রধান কারণ। ভিটামিন A এর অভাবে রেটিনার “রods” কোষগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা রাতের বেলা দৃষ্টির সমস্যা সৃষ্টি করে।
  2. রেটিনাল ডিজেনারেশন (Retinal Degeneration):
    • রেটিনার কোষের ক্ষতি বা পতন, যেমন retinitis pigmentosa নামক রোগের কারণে রাতকানা হতে পারে। এতে রেটিনা (চোখের পেছনের অংশ) ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায় এবং আলোর অভাবেও দেখা সমস্যা তৈরি হয়।
  3. ক্যাটারাক্ট (Cataracts):
    • চোখের লেন্সের অস্পষ্টতা বা মেঘলা হওয়াকে ক্যাটারাক্ট বলা হয়। ক্যাটারাক্টের কারণে আলো ঠিকভাবে চোখে প্রবাহিত হয় না, যার ফলে রাতের বেলা দৃষ্টি দুর্বল হয়ে যায়।
  4. গ্লুকোমা (Glaucoma):
    • গ্লুকোমা একটি চোখের রোগ, যেখানে চোখের ভিতরে চাপ বেড়ে যায় এবং এটি রেটিনার ক্ষতি করতে পারে। এই কারণে রাতে দৃষ্টি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
  5. হাইপারমেট্রোপিয়া (Hypermetropia):
    • চোখের দূরদৃষ্টি (farsightedness) হলে, বিশেষত কম আলোতে চোখকে কষ্টে দেখতে হতে পারে এবং রাতে দৃষ্টি মুশকিল হয়ে ওঠে।
  6. ডায়াবেটিস (Diabetes):
    • ডায়াবেটিস দীর্ঘ সময় ধরে চললে রেটিনার ক্ষতি হতে পারে (ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি) যা রাতে দৃষ্টির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  7. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
    • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন, অ্যান্টিহিস্টামিন, ব্যথানাশক, বা স্নায়ুবিক ওষুধ, চোখের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং রাতে দৃষ্টি কম হতে পারে।
  8. আলোবোধী কোষের দুর্বলতা:
    • রেটিনায় আলোকবোধী কোষের ক্ষতির কারণে রাতের বেলায় দৃষ্টি দুর্বল হতে পারে। এটি সাধারণত বয়সের সাথে হতে পারে, তবে কিছু জেনেটিক রোগের কারণে এটি আগেই হতে পারে।

লক্ষণ:

রাতকানার প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. রাতের বেলা বা অন্ধকারে দৃষ্টির সমস্যা: সন্ধ্যা বা রাতের বেলা চোখের সামনের দৃশ্য ঝাপসা বা অস্পষ্ট হয়ে যায়।
  2. ঝাপসা বা মূর্ছনা দৃষ্টি: কম আলোতে বা অন্ধকারে চোখে সঠিকভাবে কিছু দেখা কঠিন হয়ে পড়ে।
  3. আলো কমলে দৃষ্টির দুর্বলতা: দিনের বেলা ভালো দেখতে পারলেও, রাতে বা আলোর অভাবে চোখের দৃষ্টি দুর্বল বা ঝাপসা হয়ে যায়।
  4. চোখে চাপ বা অস্বস্তি: কিছু সময় চোখে অস্বস্তি বা ভারি অনুভূতি হতে পারে যখন আপনি অন্ধকার পরিবেশে থাকেন।

প্রতিকার:

রাতকানা প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য কিছু উপায় রয়েছে:

  1. ভিটামিন A এর সম্পূরক ব্যবহার:
    • ভিটামিন A এর অভাব হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন A এর সম্পূরক ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন গাজর, ডিম, দুধ, মাছ, শাকসবজি খাওয়া উচিত।
  2. চোখের সঠিক যত্ন:
    • চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার মাধ্যমে চোখের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ। চোখের লেন্স বা ক্যাটারাক্টের চিকিৎসা করা উচিত।
  3. ক্যাটারাক্ট সার্জারি:
    • যদি ক্যাটারাক্টের কারণে রাতকানা হয়, তবে সঠিক সময়ে ক্যাটারাক্ট সার্জারি করা যেতে পারে।
  4. গ্লুকোমার চিকিৎসা:
    • গ্লুকোমার কারণে রাতকানা হলে চোখের চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত চিকিৎসা ও চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
  5. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
    • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েট, ব্যায়াম এবং নিয়মিত চিকিৎসা করা উচিত যাতে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (diabetic retinopathy) প্রতিরোধ করা যায়।
  6. লেজার চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার:
    • কিছু ক্ষেত্রে রেটিনাল ডিজেনারেশন বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যা থাকলে লেজার চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
  7. চোখের ব্যায়াম:
    • চোখের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করতে কিছু চোখের ব্যায়াম করা যেতে পারে যা দৃষ্টির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
  8. আলোয়ারন বা সংস্থান:
    • রাতে ভালোভাবে দেখার জন্য পর্যাপ্ত আলো রাখা এবং গাড়ি চালানোর সময় ভাল আলো ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

যদি রাতে দৃষ্টি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা প্রচণ্ড হয়ে থাকে, তবে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। নির্দিষ্ট সমস্যার ভিত্তিতে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করা হবে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *