Best Homeo Doctor

যোনি ক্যান্ডিডিয়াসিস কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

যোনি ক্যান্ডিডিয়াসিস (Vaginal Candidiasis) হল একটি ছত্রাকজনিত সংক্রমণ যা মূলত ক্যান্ডিডা (Candida) প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট হয়। সাধারণত, ক্যান্ডিডা মোল্ড (fungus) মূত্রনালী এবং যোনির মতো শরীরের কিছু অংশে থাকে এবং এটি স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত থাকে। তবে যখন শরীরের প্রাকৃতিক ব্যালান্স ভেঙে যায়, তখন এই ছত্রাক অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং যোনিতে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।

যোনি ক্যান্ডিডিয়াসিসের কারণ:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • মেনোপজ বা গর্ভাবস্থা সময়ে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ক্যান্ডিডা ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটতে পারে।
    • গর্ভনিরোধক পিল বা হরমোন থেরাপি ব্যবহারের কারণে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়ে ক্যান্ডিডা সংক্রমণ হতে পারে।
  2. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা:
    • অতিরিক্ত চিনি খাওয়া বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে এবং ক্যান্ডিডা ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
  3. অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার:
    • অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়া (যেগুলি সাধারণত ছত্রাকের বৃদ্ধি বাধা দেয়) নষ্ট করে ফেলতে পারে, যার ফলে ক্যান্ডিডা ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটতে পারে।
  4. স্ট্রেস উদ্বেগ:
    • মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং ক্যান্ডিডা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  5. অস্বাস্থ্যকর পরিধান:
    • টাইট পোশাক, বিশেষত সিন্থেটিক পোশাক, যেগুলিতে শ্বাসপ্রশ্বাস কম হয়, তা যোনির আশপাশে আর্দ্রতা সৃষ্টি করে, যা ক্যান্ডিডা ছত্রাকের বৃদ্ধি সহায়ক হতে পারে।
  6. ডায়াবেটিস:
    • ডায়াবেটিস রোগীরা ক্যান্ডিডা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে, কারণ অতিরিক্ত রক্তে শর্করার পরিমাণ তাদের শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে।
  7. অসুস্থ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunocompromised states):
    • যেসব মানুষ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল (যেমন HIV, ক্যান্সার বা কেমোথেরাপি চিকিত্সা গ্রহণকারী) তাদের মধ্যে ক্যান্ডিডা সংক্রমণ হওয়া সহজ।

যোনি ক্যান্ডিডিয়াসিসের লক্ষণ:

  1. যোনিতে চুলকানি জ্বালা:
    • যোনিতে চুলকানি, জ্বালা বা আক্রমণজনিত অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
  2. অস্বাভাবিক স্রাব:
    • সাধারণত সাদা, দইয়ের মতো (curd-like) স্রাব দেখা যায়। স্রাবের গন্ধ তীব্র হতে পারে।
  3. যৌন সম্পর্কের সময় ব্যথা:
    • ক্যান্ডিডা সংক্রমণের কারণে যৌন সম্পর্কের সময় যোনিতে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  4. যোনির ফুলে যাওয়া বা লালচে হওয়া:
    • যোনির আশপাশে লালচে বা ফুলে যাওয়া দেখা যেতে পারে।
  5. পেটের নিচে ব্যথা:
    • কিছু ক্ষেত্রে পেটের নিচে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, তবে এটি সাধারণত খুব তীব্র হয় না।
  6. জ্বালাপোড়া:
    • প্রস্রাব করার সময় বা স্নান করার সময় যোনির আশপাশে জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে পারে।

যোনি ক্যান্ডিডিয়াসিসের প্রতিকার:

  1. অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ:
    • ওষুধ যেমন ফ্লুকোনাজোল বা ক্লোত্রিমাজল (Clotrimazole) – এগুলি সাধারণত ক্যান্ডিডা সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিফাঙ্গাল (antifungal) ওষুধ। এই ধরনের ওষুধ সোজাসুজি যোনির মধ্যে বা মাউথ থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
    • অধিকাংশ ক্ষেত্রে, ওভার দ্য কাউন্টার (OTC) অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা ট্যাবলেটও কার্যকর হতে পারে।
  2. প্রाकृतिक উপায়:
    • প্রোবায়োটিকস: প্রোবায়োটিকস যেমন ইউগার্ট (yogurt) বা ল্যাক্টোব্যাসিলাস (Lactobacillus) ব্যাকটেরিয়া যোনির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং ক্যান্ডিডার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।
    • কোকোনাট অয়েল: কোকোনাট অয়েলে অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ থাকে, যা কিছু মহিলার জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে এটি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  3. হাইজিন বজায় রাখা:
    • যোনি পরিচ্ছন্নতা: যোনি এলাকাকে শুকনো এবং পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত গরম বা আর্দ্র পরিবেশ ক্যান্ডিডার বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
    • সিন্থেটিক বা টাইট পোশাক পরিধান এড়িয়ে চলুন। কাপড়ের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস হতে দেওয়া উচিত, তাই তুলা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক কাপড় পরিধান করা উপকারী।
  4. স্ট্রেস কমানো:
    • মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম, ধ্যান বা শিথিলতার অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
  5. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
    • ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এটি ক্যান্ডিডার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে।
  6. ডাক্তারের পরামর্শ:
    • যদি ক্যান্ডিডা সংক্রমণ পুনরায় ঘটে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে একটি ডাক্তারী পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। কখনও কখনও এটি অন্য কোনো underlying রোগের কারণ হতে পারে, যা চিকিৎসা প্রয়োজন।

মনে রাখবেন:

যোনি ক্যান্ডিডিয়াসিস একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি যদি বারবার ঘটে বা খুব বেশি অসুবিধা সৃষ্টি করে, তবে একটি সঠিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক আপনার উপসর্গের ভিত্তিতে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *