Best Homeo Doctor

মাড়ি থেকে রক্ত পড়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

মাড়ি থেকে রক্ত পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি কখনও কখনও গম্ভীর পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। সাধারণত, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া হলে তা গাম ডিজিজ বা পাইরিয়ার (periodontal disease) এর লক্ষণ হতে পারে। এটি এক ধরনের প্রদাহ যা মাড়ির স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ:

  1. গাম ডিজিজ (Periodontal disease):
    • গাম ডিজিজের প্রথম পর্যায় হল গিঞ্জিভাইটিস (Gingivitis), যেখানে মাড়ি ফোলাভাব এবং রক্তপাত করে। এটি প্লাক জমে যাওয়ার কারণে ঘটে।
    • যদি গিঞ্জিভাইটিস দীর্ঘ সময় অবহেলা করা হয়, তবে এটি পিরিওডন্টাইটিস (Periodontitis) -এ পরিণত হতে পারে, যা মাড়ি এবং দাঁত সংলগ্ন হাড়ের ক্ষতি করতে পারে।
  2. দাঁত ব্রাশ করা বা ফ্লস করা:
    • কখনও কখনও, অত্যধিক শক্তভাবে দাঁত ব্রাশ করা বা ফ্লস করা মাড়ি থেকে সাময়িক রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যদি মাড়ি ইতিমধ্যে সংবেদনশীল বা প্রদাহিত থাকে।
  3. মুখের শুষ্কতা (Dry Mouth):
    • মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে লালা না থাকলে (যেমন কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ডিহাইড্রেশন), মাড়ি শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যার ফলে রক্তপাত হতে পারে।
  4. ব্রাকিটস বা দাঁত সংক্রান্ত যন্ত্রণা:
    • ব্রাকিটস বা অন্যান্য দাঁতের চিকিৎসা থেকে মাড়ির উপর চাপ পড়লে কিছুটা রক্তপাত হতে পারে, বিশেষত যদি মাড়ি আগেই সংবেদনশীল থাকে।
  5. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
    • ভিটামিন C এর অভাব বা অন্যান্য পুষ্টির অভাবে মাড়ির সুস্থতা হ্রাস পেতে পারে, যা রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
  6. ধূমপান:
    • ধূমপান গামের প্রদাহ বাড়াতে পারে এবং দাঁতের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।
  7. গর্ভাবস্থা:
    • গর্ভাবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মাড়ির সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে।
  8. রক্তজনিত রোগ:
    • কিছু রক্তজনিত রোগ যেমন হেমোফিলিয়া বা প্লেটলেট কম থাকাও মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে।
  9. অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ:
    • কিছু ধরনের ওষুধ যেমন রক্ত পাতলা করার ওষুধ (অ্যান্টিকোএগুল্যান্ট) মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।

মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার লক্ষণ:

  1. দাঁত ব্রাশ বা ফ্লস করার সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়া: মাড়ি ফোলার সাথে সাথে দাঁত ব্রাশ বা ফ্লস করার সময় রক্ত পড়া অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
  2. মাড়ি ফোলা বা লাল হওয়া: প্রদাহের কারণে মাড়ি লালচে বা ফুলে যেতে পারে।
  3. দাঁত বা মাড়ি চারপাশে অস্বস্তি বা ব্যথা: কিছু সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সঙ্গে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষত খাওয়ার সময়।
  4. মুখের খারাপ গন্ধ: মাড়ির সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে মুখে খারাপ গন্ধ আসতে পারে।
  5. দাঁতের নড়বড়ে হওয়া: গামের প্রদাহ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দাঁতগুলো নড়বড়ে হতে পারে।

মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার প্রতিকার:

  1. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা: দিনে কমপক্ষে দুইবার দাঁত ব্রাশ করুন এবং উপযুক্তভাবে মাড়ির যত্ন নিন। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
  2. ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা: দাঁতের মধ্যে জমে থাকা খাবারের কণা এবং প্লাক দূর করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। এটি মাড়ির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
  3. মাউথওয়াশ ব্যবহার করা: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন যা মাড়ির প্রদাহ কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করবে।
  4. গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা: গার্গল করলে মাড়ির প্রদাহ কমতে সাহায্য করে। এটি একটি প্রাকৃতিক উপায়।
  5. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেমন কমলা, আমলকি, লেবু ইত্যাদি, যা মাড়ি ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
  6. ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান মাড়ির প্রদাহ বৃদ্ধি করে এবং দাঁতের ক্ষতি করে, তাই এটি ত্যাগ করা উচিত।
  7. রেগুলার ডেন্টাল চেকআপ: বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁত এবং মাড়ির পরিস্কার ও চেকআপ করান। ডেন্টিস্টের মাধ্যমে স্কেলিং বা পরিষ্কার করা গামের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  8. প্রচুর পানি পান করা: মুখের শুষ্কতা কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যা গামের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
  9. অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি রক্তপাত দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, তবে ডেন্টিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো চিকিৎসা নিতে হতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

যদি মাড়ি থেকে রক্ত পড়া দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে বা এটি গুরুতর হয়ে যায়, তবে ডেন্টিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। গামের প্রদাহ যদি প্রকৃতির দিকে চলে যায়, তবে এটি দাঁত ক্ষয় বা দাঁত হারানোর কারণ হতে পারে, তাই তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেয়া জরুরি।

মাড়ি থেকে রক্ত পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে, তাই নিয়মিত দাঁত ব্রাশ এবং মাড়ির স্বাস্থ্য বজায় রাখা জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *