Best Homeo Doctor

মহিলাদের অভারি সমস্যা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

মহিলাদের অভারি সমস্যা (Pelvic Inflammatory Disease – PID) হলো জরায়ু, ডিম্বাশয়, টিউব এবং পেটের অন্যান্য অংশে প্রদাহ হওয়া। এটি সাধারণত যৌন সংক্রমণ (যেমন, গনোরিয়া বা চিটন) থেকে সৃষ্টি হয়, কিন্তু এর অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং চিকিৎসা না করলে এটি আরও জটিল হতে পারে, যেমন বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ক্ষতি।

মহিলাদের অভারি সমস্যার কারণ:

  1. যৌন সংক্রমণ (Sexually Transmitted Infections – STIs):
    • গনোরিয়া (Gonorrhea), ক্ল্যামিডিয়া (Chlamydia), ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis) ইত্যাদি যৌন সংক্রমণ (STIs) PID-এর প্রধান কারণ। এই ইনফেকশনগুলি সাধারণত যোনি বা জরায়ুর মধ্য দিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে জরায়ু, টিউব এবং ডিম্বাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
  2. অস্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক:
    • অস্বাস্থ্যকর বা একাধিক যৌন সঙ্গী থাকা, কনডম ব্যবহারে অনীহা, বা যৌন সম্পর্কের সময় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  3. বাচ্চা হওয়ার পর বা গর্ভপাতের সময় সংক্রমণ:
    • গর্ভাবস্থার পর বা গর্ভপাতের পরে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে সংক্রমণ হতে পারে, যা PID তৈরি করতে পারে।
  4. ইউটেরাস বা জরায়ুর অস্ত্রোপচার:
    • জরায়ুর অস্ত্রোপচার বা সিজারিয়ান সেকশনের পরে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যা PID সৃষ্টি করতে পারে।
  5. ডিভা বা কপার IUD (Intrauterine Device) ব্যবহার:
    • কিছু ক্ষেত্রে, IUD-এর ব্যবহার PID-এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষত যখন IUD স্থানান্তরের সময় কোনও সংক্রমণ ঘটে।
  6. দীর্ঘ সময় ধরে যৌন সম্পর্কের আগে চিকিৎসা না করা:
    • কখনও কখনও দীর্ঘসময় ধরে untreated STI বা অন্যান্য সমস্যা PID-এর সৃষ্টি করতে পারে।

মহিলাদের অভারি সমস্যার লক্ষণ:

PID-এর লক্ষণ অনেকটা সাধারণ এবং একে অন্য রোগের সাথে মিলেও যেতে পারে। তাই সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার জন্য লক্ষণগুলির প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি।

  1. পেটের নীচে ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • পেটের নীচের অংশে তীব্র বা মাঝারি ধরনের ব্যথা, যা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। এটি কখনও কখনও অনিয়মিত হয়ে থাকে।
  2. যৌন সম্পর্কের সময় ব্যথা:
    • যৌন সম্পর্কের সময় বা পরে ব্যথা অনুভূত হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ।
  3. অস্বাভাবিক যোনি স্রাব:
    • PID-এর কারণে যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব হতে পারে, যা ঘন, হলুদ বা সবুজ রঙের হতে পারে এবং এতে দুর্গন্ধও থাকতে পারে।
  4. জ্বর বা শীতলতা:
    • PID-এ সংক্রমণ হওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা জ্বর এবং শীতলতার সাথে আসে।
  5. মাসিকের সমস্যা:
    • মাসিকের সময় অনিয়মিত রক্তপাত বা অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।
  6. নিচের পেটে ব্যথা এবং শরীরের দুর্বলতা:
    • পেটে অস্বস্তি এবং ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
  7. পাছের দিকে ব্যথা:
    • কখনও কখনও, PID এর কারণে পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

মহিলাদের অভারি সমস্যার প্রতিকার:

PID-এর চিকিৎসা দ্রুত করা উচিত, কারণ এটি আরও গুরুতর সমস্যা যেমন বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে।

  1. অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি (Antibiotic Therapy):
    • PID-কে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এটি ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে এবং রোগের বিস্তার রোধ করতে সহায়ক হয়।
    • চিকিৎসক সাধারনত একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করবেন, কারণ PID সাধারণত একাধিক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে।
  2. অপারেশন বা সার্জারি:
    • যদি PID এর কারণে কোনো অঙ্গের ক্ষতি হয়ে থাকে, বা যদি গুরুতর সংক্রমণ হয়, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউব বা ডিম্বাশয় অপসারণ করতে হতে পারে।
  3. বেদনানাশক (Pain Relief):
    • ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সেগুলি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
  4. পুনরায় ইনফেকশন এড়ানোর জন্য সচেতনতা:
    • PID-এর ঝুঁকি কমাতে যৌন সম্পর্কের সময় কনডম ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে যৌন সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়।
  5. বিশ্রাম সুষম খাদ্য:
    • সঠিক পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উচিত।
  6. গর্ভনিরোধক ব্যবস্থাপনা:
    • PID-এর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে গর্ভনিরোধক পিল বা অন্য উপায় ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
  7. সময়ের মধ্যে চিকিত্সা:
    • PID হল একটি সংক্রমণ, তাই এটি দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এই অবস্থায় যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ু এবং ডিম্বাশয়ের স্থায়ী ক্ষতি তৈরি করতে পারে।

উপসংহার:

PID একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা না করা হলে বন্ধ্যাত্ব বা অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এর লক্ষণ দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যৌন স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে PID প্রতিরোধ সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *