Best Homeo Doctor

ভুলে যাওয়ার কারণ, লক্ষন,প্রতিকার

ভুলে যাওয়া (Amnesia) হলো স্মৃতি হারানোর বা কিছু নির্দিষ্ট তথ্য মনে রাখতে না পারার একটি অবস্থা। এটি সাধারণত মস্তিষ্কের কার্যকারিতার সমস্যা বা শারীরিক বা মানসিক আঘাতের কারণে ঘটতে পারে। স্মৃতির এই ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।

ভুলে যাওয়ার কারণ:

ভুলে যাওয়ার কিছু প্রধান কারণ হল:

  1. মস্তিষ্কের আঘাত: মস্তিষ্কের কোন অংশে আঘাত পাওয়া বা চোট পাওয়া যেমন ট্রমা, দুর্ঘটনা বা স্ট্রোক স্মৃতি হারানোর কারণ হতে পারে।
  2. অ্যালকোহল বা মাদক ব্যবহার: অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক সেবনও স্মৃতির ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে।
  3. ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার রোগ: বয়স বাড়ার সাথে সাথে, বিশেষত আলঝেইমার রোগের মতো শারীরিক অসুস্থতায় স্মৃতির ক্ষতি হতে পারে। এটি পুরনো স্মৃতি হারানো এবং নতুন তথ্য মনে রাখতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
  4. মানসিক চাপ বা ট্রমা: মানসিক আঘাত বা অতিরিক্ত চাপের কারণে, কোনো দুর্ঘটনা বা দুঃখজনক ঘটনার স্মৃতি মুছে যেতে পারে। কখনও কখনও মানুষ অনিচ্ছাকৃতভাবে ট্রমাটিক স্মৃতি ভুলে যেতে পারে।
  5. স্মৃতির অপসারণ: অনেক সময় কিছু স্মৃতি বা তথ্য বিশেষভাবে মন থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, বিশেষত যেগুলি মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে।
  6. শারীরিক রোগ: কিছু শারীরিক অসুস্থতা যেমন হার্টের সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে ভুলে যাওয়া হতে পারে।
  7. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে, যেমন সিডেটিভস বা স্নায়ু সংক্রান্ত ঔষধ।

ভুলে যাওয়ার লক্ষণ:

ভুলে যাওয়ার কিছু প্রধান লক্ষণ হল:

  1. তথ্য মনে রাখতে না পারা: নতুন তথ্য বা ঘটনাগুলি মনে রাখতে অসুবিধা অনুভব করা।
  2. পুরোনো স্মৃতি হারানো: পুরনো স্মৃতি বা জীবনযাপনের অঙ্গন সম্পর্কে ভুলে যাওয়া, যেমন নিজের পরিচয়, প্রিয়জনের নাম, পরিবার বা বন্ধুদের ব্যাপারে অজ্ঞান হওয়া।
  3. মনে না রাখতে পারা দৈনন্দিন কাজ: নিয়মিত কাজ যেমন রান্না, জামা পরা, বা সঠিক সময়ে কোথাও যাওয়া মনে রাখতে সমস্যা হওয়া।
  4. পরিচিত জায়গায় বিভ্রান্তি: পরিচিত স্থানে বা পরিবেশে হাঁটতে গিয়ে বিভ্রান্তি অনুভব করা বা পথ ভুলে যাওয়া।
  5. অস্বাভাবিক আচরণ: মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ বা অপরিচিত পরিস্থিতিতে এক ধরনের উদ্বেগ বা ভয় অনুভব করা।

ভুলে যাওয়ার প্রতিকার:

ভুলে যাওয়ার জন্য কিছু প্রতিকার বা চিকিত্সা হতে পারে, যা নিচে তুলে ধরা হলো:

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: স্মৃতিভ্রংশ বা ভুলে যাওয়ার সমস্যায় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্ক বা স্মৃতির সমস্যা দ্রুত নির্ণয় করতে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে সহায়ক হতে পারে।
  2. মস্তিষ্কের ব্যায়াম: মস্তিষ্ককে সচল রাখার জন্য পাজল খেলা, ধাঁধা, গাণিতিক সমাধান, বই পড়া, স্মৃতির খেলা ইত্যাদি কাজ করতে পারে।
  3. শারীরিক ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে, বিশেষত হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
  4. পুষ্টিকর খাবার: সঠিক পুষ্টি গ্রহণ যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন B12 এবং ফলমূল, শাকসবজি স্মৃতির ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
  5. মনোযোগী জীবনযাপন: মানসিক চাপ কমানো, ধ্যান বা মেডিটেশন করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম নিশ্চিত করা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
  6. ঔষধ গ্রহণ: কিছু স্মৃতি সংক্রান্ত রোগ যেমন আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়া জন্য চিকিৎসক বিশেষ ঔষধ বা থেরাপি প্রস্তাব করতে পারেন।
  7. যোগাযোগ বৃদ্ধি: বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সাথে বেশি সময় কাটানো, চর্চা বা আলোচনা স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  8. মেমরি টেকনিক ব্যবহার: স্মৃতি ধরে রাখার জন্য টেকনিক যেমন স্মৃতি চিত্র বা নোট তৈরি করা, স্মৃতি পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে রাখা।

ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিভ্রংশ একটি জটিল এবং কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তাই যথাযথ সময়ে চিকিৎসা এবং সহায়তা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *