Best Homeo Doctor

ব্রেন স্ট্রোকের কারণ,লক্ষন,প্রতিকার

ব্রেন স্ট্রোক (Brain Stroke) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বা রক্তনালীর ফাটল ঘটে, ফলে মস্তিষ্কের কিছু অংশে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাব হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যেতে পারে। এটি একটি জীবননাশক অবস্থায় পরিণত হতে পারে, এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

. ব্রেন স্ট্রোকের কারণ:

ব্রেন স্ট্রোকের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:

(i) ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke):

এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের স্ট্রোক এবং সাধারণত ঘটে যখন মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যেমন:

  • থ্রম্বোসিস (Thrombosis): রক্তনালীর ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি হওয়া।
  • এম্বোলিজম (Embolism): শরীরের অন্য কোনো জায়গা থেকে রক্তের অংশ মস্তিষ্কে চলে গিয়ে রক্তনালী বন্ধ করে দেওয়া।

(ii) হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke):

এই ধরনের স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে রক্তপাত শুরু হয়। এর কারণ হতে পারে:

  • উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure): দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ থাকার ফলে রক্তনালী দুর্বল হয়ে ফেটে যেতে পারে।
  • অ্যানিউরিজম (Aneurysm): রক্তনালীর প্রাচীর দুর্বল হয়ে গিয়ে ফাটলে রক্তক্ষরণ ঘটে।
  • রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা (Blood clotting disorder): কিছু ওষুধ বা শারীরিক সমস্যার কারণে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে গেলে রক্তপাত হতে পারে।

. ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ:

স্ট্রোকের লক্ষণগুলি সাধারণত আকস্মিকভাবে দেখা দেয় এবং তীব্র হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • মুখের একপাশে অবসন্নতা বা অস্বাভাবিকতা (Facial drooping): মুখের একপাশে অবসন্ন বা পিপঁড়িযুক্ত হওয়া, হাসির সময় অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে।
  • হাত বা পায়ের একপাশে দুর্বলতা বা অবশ হয়ে যাওয়া (Weakness or numbness in one arm/leg): হাত বা পায়ের একপাশে শক্তি বা অনুভূতি হারানো।
  • বলার সমস্যা (Difficulty speaking): ভাষাগত সমস্যা, এমনকি কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে না পারা।
  • দৃষ্টি সমস্যা (Vision problems): চোখের সামনে অন্ধকার, ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি হারানো।
  • মাথা ব্যথা (Severe headache): আকস্মিক ও তীব্র মাথা ব্যথা, বিশেষত সাথে বমি বমি ভাব।
  • অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য হারানো (Loss of balance or coordination): চলাফেরায় অসুবিধা, ভারসাম্য হারানো বা হোঁচট খাওয়া।

. ব্রেন স্ট্রোকের প্রতিকার:

ব্রেন স্ট্রোকের চিকিৎসা খুবই সময়সাপেক্ষ এবং দ্রুত প্রতিকার প্রয়োজন:

(i) দ্রুত চিকিৎসা (Immediate Medical Attention):

স্ট্রোকের প্রথম লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসক বা অ্যাম্বুলেন্স ডাকা উচিত। “টাইম ইজ ব্রেন” – যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, ততই মস্তিষ্কের ক্ষতি কম হবে।

(ii) স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা:

  • ইস্কেমিক স্ট্রোকের জন্য: রক্তনালী খুলে দিতে বা রক্ত প্রবাহ পুনরুদ্ধার করতে থ্রোমবোলাইসিস (clot-busting) বা স্টেন্ট লাগানো হতে পারে।
  • হেমোরেজিক স্ট্রোকের জন্য: রক্তপাত কমানোর জন্য অস্ত্রোপচার বা মেডিকেল ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তনালী বন্ধ করার জন্য সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

(iii) স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন (Rehabilitation):

স্ট্রোকের পর রোগীকে পুনর্বাসন চিকিৎসা নিতে হতে পারে, যার মধ্যে ফিজিক্যাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, এবং বিভিন্ন পুনর্বাসন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে।

(iv) যথাযথ চিকিৎসা (Proper Medications):

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • স্ট্রোকের পর পুনরাবৃত্তি রোধ: স্ট্রোকের পরকারণে, রক্ত পাতলা করার ওষুধ (Anticoagulants) দেয়া হতে পারে।
  • লাইফস্টাইল পরিবর্তন: সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা, এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

. স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়:

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, বিশেষ করে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ ও কম চর্বিযুক্ত খাবার।
  • ব্যায়াম: প্রতিদিন কিছু শারীরিক ব্যায়াম করা।
  • ধূমপান মদ্যপান বন্ধ করা: স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে এগুলি পরিহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।

স্ট্রোক একটি অত্যন্ত গুরুতর অবস্থা এবং এটি দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে যাতে আপনার জীবন রক্ষা করা যায়।

Top of Form

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *