Best Homeo Doctor

প্রসবান্তিক স্তনে দুধের অভাব কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রসবান্তিক স্তনে দুধের অভাব (Postpartum Lactation Failure) হলো এমন একটি সমস্যা যেখানে মা জন্মের পর পর্যাপ্ত স্তনদুধ উৎপন্ন করতে পারেন না। স্তনদুধ শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুর প্রথম পুষ্টির উৎস এবং এতে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে যা শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। স্তনে দুধের অভাব হলে শিশুর পুষ্টি সমস্যা হতে পারে, যা মা এবং শিশুর জন্য উদ্বেগের বিষয়।

প্রসবান্তিক স্তনে দুধের অভাবের কারণ:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • গর্ভাবস্থার শেষে এবং প্রসবের পর হরমোনাল পরিবর্তন ঘটে, যা দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। ডোপামিন ও প্রোলাকটিনের ভারসাম্যহীনতা স্তনদুধ উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  2. শিশুর স্তনপান করার সমস্যা (Latch issues):
    • শিশুর সঠিকভাবে স্তনপান না করা, অর্থাৎ সঠিক ল্যাচ না হওয়া, দুধ উৎপাদন হ্রাস করতে পারে। শিশুর ভুলভাবে স্তন ধরার কারণে স্তনদুধ সঠিকভাবে বের হতে পারে না।
  3. দুধ উৎপাদনে বিলম্ব:
    • কিছু মায়ের ক্ষেত্রে প্রথম কয়েকদিনে দুধ উৎপাদন শুরু হতে দেরি হতে পারে। এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া হলেও কিছু ক্ষেত্রে দুধ উৎপাদন বিলম্বিত হতে পারে।
  4. শিশুর প্রতি আগ্রহের অভাব:
    • কিছু শিশু জন্মের পর প্রথম দিনগুলিতে স্তনদুধ খেতে ইচ্ছুক না হতে পারে। এটি শিশুর সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং মায়ের দুধ উৎপাদনও কম হতে পারে।
  5. মানসিক চাপ উদ্বেগ:
    • মায়ের মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা স্তনদুধের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবে দুধ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  6. অপুষ্টি বা দুর্বলতা:
    • যদি মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব থাকে (যেমন, ভিটামিন বা প্রোটিনের অভাব), তবে স্তনদুধ উৎপাদনেও সমস্যা হতে পারে। শারীরিক দুর্বলতা বা বিশ্রামের অভাবও এর কারণ হতে পারে।
  7. যেকোনো শারীরিক সমস্যা:
    • মায়ের কোনো শারীরিক সমস্যা যেমন স্তনের কোনো রোগ, স্তনে ফাটল বা ইনফেকশন, বা সিজারিয়ান অপারেশন হতে পারে, যার কারণে স্তনদুধ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  8. কৃত্রিম দুধ বা বোতল ব্যবহারের কারণ:
    • যদি শিশুকে প্রথমদিকে কৃত্রিম দুধ বা বোতল দিয়ে খাওয়ানো হয়, তাহলে শিশুর স্তনদুধ খাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে। এতে দুধ উৎপাদনও কম হতে পারে।

প্রসবান্তিক স্তনে দুধের অভাবের লক্ষণ:

  1. শিশুর ক্রমাগত ক্ষুধার অনুভূতি:
    • শিশুর যদি প্রায়ই ক্ষুধা অনুভব হয় এবং সে পর্যাপ্ত স্তনদুধ না পায়, তবে এটি দুধের অভাবের লক্ষণ হতে পারে। শিশু প্রায়ই অস্থির হয়ে কাঁদে এবং স্তন থেকে সঠিকভাবে দুধ নিতে পারে না।
  2. শিশুর অস্বস্তি বা কান্না:
    • যদি শিশুর পর্যাপ্ত দুধ না পাওয়া যায়, তবে তা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং শিশু ক্ষুধার কারণে প্রচুর কান্না করতে পারে।
  3. শিশুর ওজন বৃদ্ধি না হওয়া:
    • যদি শিশুর ওজন স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি না পায় বা যদি শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, তবে এটি দুধের অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
  4. দুধের পরিমাণ কম হওয়া:
    • মায়ের স্তনে দুধের পরিমাণ কম হলে, বা স্তনে কোনো দুধ অনুভব না হলে, এটি স্তনে দুধের অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
  5. স্তনে ফাটল বা ব্যথা:
    • স্তনদুধের অভাবের কারণে স্তনে জমে থাকা দুধ ফেটে যেতে পারে, ফলে স্তনে ব্যথা বা ফাটল দেখা দিতে পারে।

প্রসবান্তিক স্তনে দুধের অভাবের প্রতিকার:

  1. শিশুকে নিয়মিত স্তনপান করানো:
    • শিশুকে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর স্তনপান করানোর চেষ্টা করুন। এর ফলে স্তনে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং শিশুর পুষ্টির অভাব পূর্ণ হবে।
  2. স্তনে সঠিক ল্যাচ (Latch) নিশ্চিত করা:
    • শিশুকে সঠিকভাবে স্তন ধরানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্তনের সঠিক অবস্থান এবং ল্যাচের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন ভালোভাবে চালানো সম্ভব হয়। চিকিৎসক বা স্তনপান বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।
  3. অতিরিক্ত পানি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:
    • মায়ের পুষ্টির অভাব মায়ের দুধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। পর্যাপ্ত পানি, প্রোটিন, ভিটামিন, এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বাড়ানো যায়।
  4. বিশ্রাম শিথিলতা:
    • মায়ের শরীরকে ভালোভাবে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম মায়ের শরীরের শক্তি এবং দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। মানসিক চাপ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  5. গরম বা ঠান্ডা সেঁক:
    • স্তনে গরম সেঁক দেওয়া স্তনদুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কিছু সময় স্তনে গরম পানির সেঁক বা স্নান করা উচিত।
  6. বুকের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধি:
    • কিছু মায়ের ক্ষেত্রে বুকের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে দুধের গুল্ম (Herbal supplements), যেমন মিষ্টি আলু, অশ্বগন্ধা বা ফেনুগ্রীক (fenugreek) ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এগুলির ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  7. পুষ্টিসমৃদ্ধ ভেষজ সাপ্লিমেন্টস:
    • ভেষজ চা বা সাপ্লিমেন্টস যেমন মোরিঙ্গা বা অশ্বগন্ধা দুধের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, তবে এগুলি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
  8. প্রোফেশনাল সহায়তা:
    • যদি স্তনদুধের উৎপাদন সমস্যা persists করে, তবে পেডিয়াট্রিশিয়ান বা ল্যাকটেশন কনসালটেন্টের সাহায্য নেওয়া উচিত। তারা মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যক্তিগতভাবে উপদেশ ও সহায়তা প্রদান করতে পারবেন।

উপসংহার:

প্রসবান্তিক স্তনে দুধের অভাব একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে, তবে এটি যথাযথ পদক্ষেপ এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। শিশু এবং মা উভয়ের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্তনদুধের উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *