Best Homeo Doctor

প্রদাহ জনিত জ্বর কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রদাহ জনিত জ্বর (Inflammatory Fever) হলো এমন এক ধরনের জ্বর যা শরীরের কোথাও প্রদাহের কারণে সৃষ্ট হয়। প্রদাহ একটি শারীরিক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরের কোনো অংশে আঘাত বা সংক্রমণ হলে ঘটে এবং এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ হিসেবে কাজ করে। প্রদাহজনিত জ্বর সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, বা শরীরের অন্য কোনো সমস্যা যেমন অটোইমিউন রোগের কারণে হতে পারে।

প্রদাহ জনিত জ্বরের কারণ:

প্রদাহ জনিত জ্বর হতে পারে বিভিন্ন কারণে, এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল:

  1. ইনফেকশন (Infections):
    • ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: যেমন টিউবারকিউলোসিস, টাইফয়েড, ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন), মেনিনজাইটিস ইত্যাদি।
    • ভাইরাল সংক্রমণ: যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা), হেপাটাইটিস, এইচআইভি ইত্যাদি।
    • ফাঙ্গাল ইনফেকশন: কিছু ফাঙ্গাল সংক্রমণ যেমন ক্যান্ডিডিয়াসিস বা হিস্টোপ্লাজমোসিস জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  2. অটোইমিউন রোগ (Autoimmune Diseases):
    • লুপাস (Lupus), রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis), গাউট (Gout) ইত্যাদি অটোইমিউন রোগেও প্রদাহজনিত জ্বর হতে পারে। এই রোগগুলিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই শরীরের সুস্থ কোষে আক্রমণ করে।
  3. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Chronic Inflammation):
    • দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণে ফিভার হতে পারে, যেমন ক্রোনস ডিজিজ বা ইরিটেবল বাওয়েল ডিজিজ (IBD) এর মতো অবস্থা।
  4. ক্যানসার (Cancer):
    • কিছু ধরনের ক্যানসার যেমন লিম্ফোমা বা লিউকেমিয়া প্রদাহজনিত জ্বরের কারণ হতে পারে।
  5. দেহের অভ্যন্তরীণ আঘাত বা চোট (Internal Injury or Trauma):
    • শরীরে আঘাত বা গুরুতর চোটের কারণে প্রদাহ হতে পারে, যা পরে জ্বরের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  6. ড্রাগ বা ঔষধের প্রতিক্রিয়া (Drug Reaction):
    • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যেমন অ্যান্টিবায়োটিকের অ্যালার্জি বা অ্যানালজেসিকস (Pain relievers) এর কারণে।

প্রদাহ জনিত জ্বরের লক্ষণ:

প্রদাহজনিত জ্বরের লক্ষণ সাধারণত শারীরিক প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে থাকে এবং কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. উচ্চ তাপমাত্রা (Fever):
    • তাপমাত্রা ১০০°F (37.8°C) বা তার বেশি হতে পারে, যা কয়েক দিন বা আরও বেশী সময় ধরে থাকতে পারে।
  2. শরীরের ব্যথা (Body Aches):
    • পেশী, জয়েন্ট বা শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে অটোইমিউন রোগগুলিতে।
  3. শরীরের দুর্বলতা (Weakness):
    • প্রদাহের কারণে রোগী দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করতে পারে।
  4. শ্বাসকষ্ট বা কাশি (Cough or Difficulty Breathing):
    • যদি প্রদাহটি ফুসফুসে ছড়িয়ে যায়, তখন শ্বাসকষ্ট বা কাশি হতে পারে।
  5. অস্বাভাবিক ঘাম (Excessive Sweating):
    • সাধারণত রাতে অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে (Night sweats), যা প্রদাহজনিত জ্বরের লক্ষণ।
  6. ্যাশ (Rashes):
    • প্রদাহের কারণে ত্বকে র‍্যাশ বা সোর (red patches) দেখা দিতে পারে, যেমন লুপাস বা কিছু ভাইরাল ইনফেকশনে।
  7. মাথাব্যথা (Headache):
    • প্রদাহের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে।
  8. অস্থিরতা বা টিক (Chorea):
    • কিছু ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে অস্বাভাবিক আন্দোলন বা নাচন দেখা দিতে পারে, যা প্রদাহজনিত স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।

প্রদাহ জনিত জ্বরের প্রতিকার:

প্রদাহজনিত জ্বরের চিকিৎসা সাধারণত তার কারণ অনুসারে করা হয়। কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:

  1. অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা (Antibiotics or Antiviral Medication):
    • যদি প্রদাহের কারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা প্রয়োজন। ভাইরাল সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসাও দেয়া হতে পারে।
  2. এনসিডি (NSAIDs – Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs):
    • আইবুপ্রোফেন, প্যারাসিটামল বা অ্যাসপিরিন প্রদাহ এবং জ্বর কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এগুলি শুধু উপসর্গ কমায়, মূল কারণের চিকিৎসা নয়।
  3. বিশ্রাম এবং তরল গ্রহণ:
    • রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে শরীর সুস্থ হতে পারে এবং প্রদাহ কমে।
  4. অটোইমিউন রোগের জন্য ইমিউনসপ্রেসেন্ট থেরাপি (Immunosuppressive Therapy):
    • কিছু অটোইমিউন রোগের জন্য স্টেরয়েডস বা অন্য ইমিউনসপ্রেসেন্ট ঔষধ দেওয়া হতে পারে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  5. ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy):
    • যদি জয়েন্টের প্রদাহ থাকে, তাহলে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে শারীরিক পেশী এবং জয়েন্টের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা হয়।
  6. পুষ্টিকর খাদ্য এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ:
    • রোগীর শরীরের পুষ্টি বজায় রাখতে সুষম খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদাহ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  7. বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা:
    • প্রদাহ জনিত জ্বরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট চিকিৎসা দরকার হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে:

  • যদি জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় (৩-৫ দিন বা তার বেশি)।
  • যদি জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দেয়।
  • যদি গলাব্যথা বা শরীরে ফোলা থাকে।
  • যদি ্যাশ বা অস্বাভাবিক ঘাম দেখা দেয়।

প্রদাহজনিত জ্বর শরীরের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ বা অটোইমিউন রোগের কারণে হতে পারে, এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে তা গুরুতর পরিস্থিতিতে পরিণত হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *