অ্যালার্জি পোষাপ্রাণী (Pet Allergy) হলো এমন একটি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া যা পোষা প্রাণী, যেমন কুকুর, বিড়াল, গিনিপিগ বা অন্য কোনো পোষা প্রাণী থেকে হয়। এই ধরনের অ্যালার্জি সাধারণত পোষা প্রাণীর শেড হওয়া পশম, লোম, বা তাদের লালা ও মূত্র থেকে নির্গত কিছু প্রোটিনের কারণে তৈরি হয়। কিছু মানুষ পোষা প্রাণী বা তাদের দেহের কিছু উপাদানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে, যার ফলে শরীর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়।
কারণ:
অ্যালার্জি পোষাপ্রাণীর জন্য মূলত তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- প্রোটিন সংক্রমণ: পোষা প্রাণী যেমন কুকুর বা বিড়ালের লোম, পশম বা লালায় কিছু প্রোটিন থাকে। এগুলি মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে, ইমিউন সিস্টেম (প্রতিরোধী ব্যবস্থা) এগুলিকে ক্ষতিকর মনে করে এবং অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
- পোষা প্রাণীর মূত্র ও লালা: পোষা প্রাণীর মূত্র এবং লালা থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। এই পদার্থগুলিতে কিছু প্রোটিন থাকে যা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
- এয়ারবর্ন অ্যালার্জেন: পোষা প্রাণী যেমন বিড়াল বা কুকুরের লোম এবং চামড়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকা বাতাসে ভেসে বেড়ায়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
লক্ষণ:
পোষা প্রাণীর অ্যালার্জি উপসর্গগুলি বিভিন্ন রকম হতে পারে, এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতরও হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলি হল:
- শ্বাস–প্রশ্বাসের সমস্যা:
- হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট।
- গলা খুসখুস করা বা গলা চুলকানো।
- সর্দি বা গলা বেঁধে যাওয়া।
- ত্বকের সমস্যা:
- চুলকানি বা ত্বকে র্যাশ।
- ত্বকে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি।
- একজিমা বা স্কিন ইনফেকশন।
- চোখের সমস্যা:
- চোখ লাল হওয়া বা চুলকানো।
- চোখে অস্বস্তি বা পানি পড়া।
- পেটের সমস্যা:
- বমি বা পেটব্যথা (এটি খুব সাধারণ নয়, তবে কিছু লোকের ক্ষেত্রে পোষা প্রাণীর প্রোটিন গ্রহণে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে)।
- গুরুতর প্রতিক্রিয়া:
- কিছু ক্ষেত্রে, অ্যালার্জি এক্সপোজারের পর অ্যানাফাইল্যাক্সিস হতে পারে, যার মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা দম বন্ধ হয়ে আসা, হালকা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। এটি একটি জরুরি পরিস্থিতি, যার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।
প্রতিকার:
পোষা প্রাণী সংক্রান্ত অ্যালার্জি থেকে মুক্তির জন্য কিছু প্রতিকার গ্রহণ করা যেতে পারে:
- পোষা প্রাণীকে এড়িয়ে চলা: সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিকার হলো পোষা প্রাণী বা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা। যদি আপনি পোষা প্রাণী রাখেন, তবে তাদের স্পর্শ বা কাছাকাছি যাওয়ার পর ধোয়া-মুছা করা প্রয়োজন।
- অ্যান্টিহিস্টামিন ও অন্যান্য ঔষধ: অ্যালার্জির উপসর্গ কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ত্বক চুলকানো, চোখে জ্বালা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসক প্রয়োজনে কিছু স্টেরয়েড বা কোর্টিকোস্টেরয়েডও দিতে পারেন।
- এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার: ঘরের বাতাসে পোষা প্রাণীর লোম বা অ্যালার্জেন কমাতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটি অ্যালার্জি উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।
- ঘরের নিয়মিত পরিষ্কার: পোষা প্রাণী থাকলে ঘরটি নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। তীরবর্ণ, মেঝে এবং আসবাবপত্রের ওপরের ধূলা বা পশম পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
- হাসপাতাল বা চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি উপসর্গগুলি গুরুতর হয়ে যায় বা অ্যানাফাইল্যাক্সিসের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিত্সা পরামর্শ দেবেন।
সতর্কতা:
- শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা: শিশুরা পোষা প্রাণীর অ্যালার্জির জন্য আরও সংবেদনশীল হতে পারে, তাই তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- দূরত্ব বজায় রাখা: পোষা প্রাণী থাকলে, তাদের থেকে কিছু দূরত্ব বজায় রাখুন এবং পোষা প্রাণীর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের পর হাত ও মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই সমস্যা মোকাবেলায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।