Best Homeo Doctor

পাইরিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

পাইরিয়া (Pyria) বা গাম ডিজিজ (Periodontal Disease) হলো মাড়ির (গামের) প্রদাহজনিত একটি রোগ যা সাধারণত প্লাক এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে। এটি দাঁত ও মাড়ির মধ্যে সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি দাঁত হারানোর কারণও হতে পারে।

পাইরিয়ার (গাম ডিজিজ) কারণ:

  1. প্লাক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ: দাঁতের উপরে জমে থাকা প্লাক, যা মূলত ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র অণু দিয়ে গঠিত, গামের প্রদাহ সৃষ্টি করে। যদি প্লাক নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয়, তবে এটি গাম ডিজিজের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  2. দাঁত পরিষ্কার না করা: যদি আপনি নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করেন বা ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার না করেন, তবে খাবারের কণা এবং ব্যাকটেরিয়া মাড়িতে জমে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. ধূমপান বা তামাক ব্যবহার: ধূমপান বা তামাক ব্যবহার গামের প্রদাহ এবং পাইরিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  4. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টির অভাব, বিশেষ করে ভিটামিন C এর অভাব, গাম ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়।
  5. হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা, মাসিক চক্র বা অন্যান্য হরমোনাল পরিবর্তন মাড়ির সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে, যার কারণে গামে প্রদাহ হতে পারে।
  6. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীরা গাম ডিজিজের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে।
  7. জীবাণু সংক্রমণ: কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস মাড়ির প্রদাহ বাড়াতে পারে, যা পাইরিয়া সৃষ্টি করে।
  8. মুখের শুষ্কতা: মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে লালা না থাকলে (যেমন, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া), তা গামের সংক্রমণ বাড়াতে পারে।
  9. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অপর্যাপ্ত ঘুম, অতিরিক্ত চাপ, বা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মাড়ির স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

পাইরিয়ার (গাম ডিজিজ) লক্ষণ:

  1. গামের লালচে বা ফুলে যাওয়া: গামের প্রদাহ হলে তা লালচে বা ফুলে উঠতে পারে। গাম সাধারণত কোমল এবং রক্তপাত করে।
  2. গাম থেকে রক্তপাত: দাঁত ব্রাশ বা ফ্লস করার সময় গাম থেকে রক্ত পড়তে পারে। এটি গাম ডিজিজের অন্যতম লক্ষণ।
  3. মুখের খারাপ গন্ধ: গাম থেকে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ফলে মুখে খারাপ গন্ধ বা স্বাদ থাকতে পারে।
  4. গামের শিথিলতা বা দূর হয়ে যাওয়া: যদি গাম ডিজিজ গুরুতর হয়ে যায়, তবে গাম দাঁত থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে এবং দাঁতের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
  5. দাঁতের নড়বড়ে হওয়া: মাড়ির প্রদাহের কারণে দাঁত নড়বড়ে বা অস্থির হয়ে যেতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে মাড়ি সংক্রমিত হয়ে দাঁতের সহায়ক টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  6. দাঁত বা মাড়ির চারপাশে পুঁজ: যদি গামে সংক্রমণ ঘটে, তবে পুঁজ বের হতে পারে, যা আরও সংক্রমণ এবং প্রদাহের লক্ষণ।
  7. দাঁতে বা মাড়িতে ব্যথা: কিছু সময় গামে প্রদাহ ও সংক্রমণের কারণে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষত খাবার খাওয়ার সময়।
  8. অস্বস্তি বা জ্বর: গুরুতর গাম ডিজিজের ক্ষেত্রে জ্বর এবং অস্বস্তি হতে পারে, যা শরীরের একটি প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

পাইরিয়ার (গাম ডিজিজ) প্রতিকার:

  1. নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা: দাঁত এবং মাড়ি সুস্থ রাখার জন্য দিনে কমপক্ষে দুটি বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
  2. ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার: দাঁতের মধ্যে জমে থাকা খাবারের কণা এবং প্লাক দূর করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  3. মাউথওয়াশ ব্যবহার: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন যা ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং গামের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  4. গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা: গার্গল করলে গামে প্রদাহ কমতে সাহায্য করে। এটি একটি প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে কাজ করে।
  5. ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান বা তামাক ব্যবহার মাড়ির প্রদাহ বাড়ায়, তাই এটি ত্যাগ করা উচিত।
  6. ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাদ্য: ভিটামিন C গামের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, তাই ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন কমলা, আমলকি, লেবু ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
  7. রেগুলার ডেন্টাল চেকআপ: বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁত এবং মাড়ির পরিস্কার ও চেকআপ করান। ডেন্টিস্টের মাধ্যমে স্কেলিং বা পরিষ্কার করা গামের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  8. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, যেমন শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম এবং প্রোটিন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং গামের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  9. প্রচুর পানি পান করা: মুখে শুকিয়ে যাওয়ার কারণে মাড়ির প্রদাহ বৃদ্ধি পায়, তাই প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন।
  10. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি গামের প্রদাহ গুরুতর হয় এবং বাড়তে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য চিকিৎসা নিতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

যদি গামের প্রদাহ বা পাইরিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গাম থেকে পুঁজ বের হয়, তবে ডেন্টিস্টের কাছে দ্রুত পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী স্কেলিং, রুট প্লানিং, বা অন্য কোনো চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন।

পাইরিয়া থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *