Best Homeo Doctor

নাসাল পলিপাস কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

নাসাল পলিপাস (Nasal Polyps) হল নাকের শ্লেষ্মা আবরণের মেমব্রেনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা নাসাল কেভিটি বা সাইনাসের ভেতরের অংশে ছোট বা বড় পলিপ আকারে তৈরি হতে পারে। পলিপাস নাসিকায় একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষত যাদের দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জি, সাইনোসাইটিস বা অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগ রয়েছে তাদের মধ্যে।

কারণ:

  1. অ্যালার্জি: অ্যালার্জির কারণে নাকের ভিতরে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে পলিপাস তৈরি হতে পারে। যেমন, ধূলা, পলিন, পশুর লোম, মোল্ড ইত্যাদি।
  2. দীর্ঘস্থায়ী সাইনোসাইটিস (Sinusitis): সাইনোসাইটিস বা সাইনাসের প্রদাহ দীর্ঘসময় ধরে থাকলে নাসিকায় পলিপাস সৃষ্টি হতে পারে।
  3. অ্যাস্থমা: যারা অ্যাস্থমার সমস্যায় ভোগেন, তাদের মধ্যে নাসাল পলিপাসের সমস্যা বেশি দেখা যায়।
  4. এনফ্লামেটরি রোগ: শরীরের প্রদাহজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস বা গুরুতর অ্যালার্জির কারণে পলিপাস তৈরি হতে পারে।
  5. ইনফেকশন: কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে পলিপাস তৈরি হতে পারে, বিশেষত সাইনোসাইটিস বা নাসাল ইনফেকশনের কারণে।
  6. জেনেটিক কারণ: কিছু মানুষের মধ্যে বংশগতভাবে নাসাল পলিপাস হতে পারে।

লক্ষণ:

  1. নাকে জ্যাম বা বন্ধ হয়ে যাওয়া: নাসিকায় পলিপাস থাকলে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হতে পারে।
  2. নাক দিয়ে সর্দি ঝরা: পলিপাসের কারণে নাক থেকে সর্দি বা শ্লেষ্মা নিঃসৃত হতে পারে।
  3. মাথাব্যথা বা মুখের চাপ: পলিপাস সাইনাসের ভিতরে চাপ তৈরি করতে পারে, যা মাথাব্যথা বা মুখের চারপাশে ব্যথার কারণ হতে পারে।
  4. গন্ধ বা স্বাদ হারানো: নাসিকায় পলিপাস থাকলে গন্ধ বা স্বাদ কমে যেতে পারে।
  5. শ্বাসকষ্ট: বিশেষ করে রাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, যেটি নাকের ভিতরের শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হয়।
  6. নাক থেকে পুঁজ বা ম্লান তরল বের হওয়া: পলিপাসের কারণে নাক থেকে পুঁজ বের হতে পারে, যা প্রদাহ বা সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে।
  7. কফ বা দীর্ঘস্থায়ী কাশি: কিছু ক্ষেত্রে, পলিপাসের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে।
  8. মুখে বা চোখে অস্বস্তি: পলিপাসের কারণে চোখের চারপাশে অস্বস্তি বা চাপ অনুভূতি হতে পারে।

প্রতিকার:

  1. নাসাল স্প্রে বা ড্রপ ব্যবহার: নাসাল পলিপাসের চিকিৎসায় স্টেরয়েড নাসাল স্প্রে বা ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  2. অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ: যদি অ্যালার্জির কারণে পলিপাস হয়, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  3. গরম স্যালাইন সলিউশন দিয়ে নাক পরিষ্কার করা: নাসাল স্প্রে বা স্যালাইন সলিউশন দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে শ্লেষ্মা দূর হয় এবং শ্বাস নিতে সহজ হয়।
  4. স্টেরয়েড ওষুধ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, যদি পলিপাস বড় হয় বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি করে, তাহলে স্টেরয়েড ওষুধ (oral steroids) ব্যবহার করা হতে পারে।
  5. অ্যান্টিবায়োটিক (যদি সংক্রমণ থাকে): যদি পলিপাস সংক্রমিত হয়ে থাকে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
  6. অপারেশন (সার্জারি): যদি পলিপাস বড় হয় বা ঔষধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে সার্জারির মাধ্যমে পলিপাস অপসারণ করা হতে পারে। সাইনাস সার্জারি বা এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি সাধারণত পলিপাস অপসারণের জন্য করা হয়।
  7. নাসাল ডিকনজেস্ট্যান্ট: নাকের শ্লেষ্মা কমাতে বা নাকের জ্যাম খুলতে নাসাল ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে (কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহার না করা উত্তম)।
  8. সুষম খাদ্য বিশ্রাম: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

যদি নাসিকায় পলিপাসের লক্ষণ থাকে বা আপনি দীর্ঘ সময় ধরে সমস্যায় ভুগছেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক সাধারণত সাইনোসাইটিস, অ্যালার্জি, বা অন্যান্য সমস্যাগুলি পরীক্ষা করে এবং সঠিক চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার (যদি প্রয়োজন হয়) পরামর্শ দিতে পারেন।

এভাবে, নাসাল পলিপাস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *