Best Homeo Doctor

নাক খোটা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

নাক খোটা (Nasal Bleeding / Epistaxis) হল নাক থেকে রক্ত পড়া। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নাকের ভেতরে রক্তনালীগুলি খুব সূক্ষ্ম এবং সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত এটি গুরুতর কোনো সমস্যা নয়, তবে যদি বারবার হয় বা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে এটি অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

কারণ:

  1. শুষ্ক আবহাওয়া: শীতকালে বা শুকনো আবহাওয়ায় নাকের শ্লেষ্মা শুষ্ক হয়ে গিয়ে রক্তনালীগুলির ক্ষতি হতে পারে।
  2. নাকের উপর অতিরিক্ত চাপ: নাক চেপে ধরা, অযথা নাক খোঁচানো বা খুব জোরে হাঁচি দেওয়ার কারণে নাসিকা শ্লেষ্মা আবরণে ক্ষতি হতে পারে, ফলে রক্তপাত হতে পারে।
  3. অ্যালার্জি: নাসাল অ্যালার্জির কারণে নাকের ভিতরের শ্লেষ্মা আচ্ছাদন প্রদাহিত হয়ে রক্তপাত হতে পারে।
  4. সংক্রমণ বা সাইনোসাইটিস: নাকের ভিতরের প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে রক্তপাত হতে পারে।
  5. নাকের আঘাত: দুর্ঘটনাবশত নাকের আঘাত বা আঘাতজনিত কারণে নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে।
  6. এন্টিকোআগুলেন্ট (Blood Thinners) ওষুধের ব্যবহার: যারা রক্ত পাতলা করার জন্য ঔষধ সেবন করেন (যেমন, অ্যাসপিরিন বা ওয়ারফারিন), তাদের নাক থেকে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  7. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনও নাক খোটার একটি কারণ হতে পারে।
  8. হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা বা হরমোনের পরিবর্তনও নাকের রক্তনালীগুলিকে অতি সংবেদনশীল করে দিতে পারে, যার ফলে রক্তপাত হতে পারে।
  9. সামান্য রক্তনালীর ত্রুটি: কিছু মানুষের নাকে রক্তনালী অত্যন্ত সংবেদনশীল বা দুর্বল থাকতে পারে, যার কারণে খুব সামান্য আঘাতেও রক্তপাত ঘটে।

লক্ষণ:

  1. নাক থেকে রক্ত পড়া: নাক খোটার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল নাক থেকে রক্ত পড়া। এটি সামান্য হতে পারে বা প্রচুর পরিমাণে হতে পারে।
  2. শ্বাস নিতে কষ্ট: রক্তপাতের ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
  3. মুখে বা গলায় রক্ত যাওয়ার অনুভূতি: যদি রক্ত গলা দিয়ে নিচে চলে যায়, তবে এটি গলায় বা মুখে রক্ত যাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
  4. চোখে বা মুখে চাপ অনুভূতি: কিছু ক্ষেত্রে, রক্তপাতের কারণে চোখ বা মুখের ভেতরে চাপ অনুভূতি হতে পারে।
  5. অস্থিরতা বা অল্পতেই মাথা ঘোরা: যদি রক্তপাত বেশি হয়, তবে মাথা ঘোরা বা অস্থিরতা অনুভূত হতে পারে।

প্রতিকার:

  1. নাক সোজা রাখা: নাক থেকে রক্ত পড়লে প্রথমে মাথা সামান্য সামনে ঝুঁকে রেখে নাক সোজা রাখুন। মাথা উঁচু করলে রক্ত গলায় গিয়ে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।
  2. নাক চেপে ধরা: আঙুল দিয়ে নাকের দুটি পাশ (নাসাল কভিটিতে) ৫-১০ মিনিটের জন্য চাপ দিয়ে ধরুন। এতে রক্তপাত বন্ধ হতে সাহায্য করবে।
  3. গরম বা ঠান্ডা সেঁক: নাকের বাইরে ঠান্ডা বা গরম সেঁক (প্যাক) প্রয়োগ করতে পারেন। ঠান্ডা সেঁক রক্তনালী সংকুচিত করে রক্তপাত কমাতে সাহায্য করে।
  4. সলিউশন বা নাসাল স্প্রে ব্যবহার: যদি নাকের শুষ্কতা কারণে রক্তপাত হয়, তবে স্যালাইন সলিউশন বা নাসাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
  5. অতিরিক্ত নাক খোঁচানো বা চাপ দেওয়া এড়ানো: নাক খোঁচানো বা অতিরিক্ত চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এটি রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
  6. শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করতে গরম বাষ্প: শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করতে গরম বাষ্প নিতে পারেন।
  7. পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখা: শুষ্ক আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বজায় রাখতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। এটি নাকের ভিতরের শ্লেষ্মা আচ্ছাদনকে শুষ্ক হতে দেয় না।
  8. রক্তপাতের পর বিশ্রাম: যদি রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়, তবে কিছু সময় বিশ্রাম নিন এবং পরবর্তী সময়ে কোনো চাপ বা উত্তেজনা এড়িয়ে চলুন।
  9. চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি রক্তপাত বারবার হয় বা বেশি হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি উচ্চ রক্তচাপ, রক্তসংক্রান্ত সমস্যা বা অন্য কোনো রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

  • যদি নাক থেকে নিয়মিত রক্ত পড়ে বা রক্তপাত খুব বেশি হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • চিকিৎসক নাকের ভিতরে খোলা ক্ষত সেলাই করতে বা রক্তনালী বন্ধ করতে চিকিৎসা করতে পারেন।
  • কিছু ক্ষেত্রে, যদি নাকের রক্তপাত খুব গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে ডাক্তার লেজার থেরাপি বা কৌশলগত চিকিৎসা প্রয়োগ করতে পারেন।

নাক খোটার সমস্যা সাধারণ হলেও, যদি এটি চলতে থাকে বা গুরুতর হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *