দাঁতে পোকাধরা (Tooth Decay or Cavities) হল দাঁতের এক ধরনের রোগ, যেখানে দাঁতের এনামেল (outermost layer) এবং ডেন্টিন (inner layer) ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে ছোট গর্ত বা ক্ষত সৃষ্টি হয়। এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা দাঁতের স্বাস্থ্যকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে। দাঁতের পোকাধরা মূলত ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে এবং এটি যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে দাঁত হারানোর কারণও হতে পারে।
দাঁতে পোকাধরা (Cavity) বা দাঁতের ক্ষয়ের কারণ:
- প্লাক ও ব্যাকটেরিয়া: দাঁতে প্লাক জমা হওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। এই ব্যাকটেরিয়া দাঁত ও মাড়ির মধ্যে শর্করা বা চিনি দিয়ে খাওয়ার পর দাঁতে অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে থাকে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়, যা দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়।
- দাঁত পরিষ্কার না করা: নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করা বা ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার না করা, দাঁতে প্লাক জমা হতে দেয়, যা দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টি করে।
- মুখের শুষ্কতা: লালার মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার হয়, তাই মুখে লালা কম হলে দাঁতে পোকা ধরার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- ভিটামিন ও মিনারেলসের অভাব: ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন D এর অভাবে দাঁতের এনামেল দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
- ধূমপান বা তামাক ব্যবহার: ধূমপান বা তামাক ব্যবহারে দাঁত ক্ষয়ে যেতে পারে এবং গামের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- জন্মগত সমস্যা: কিছু মানুষ জন্মগতভাবে নরম বা দুর্বল এনামেল নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, যা দাঁতে পোকা ধরার ঝুঁকি বাড়ায়।
- অতিরিক্ত অম্লীয় খাবার বা পানীয়: লেবু, টমেটো বা সোডা জাতীয় অম্লীয় পানীয় খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের দাঁত ও মাড়ির সমস্যার ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে।
দাঁতে পোকাধরা (Cavity) বা দাঁতের ক্ষয়ের লক্ষণ:
- দাঁতে গর্ত বা দাগ: দাঁতের ওপর সাদা, বাদামী বা কালো দাগ বা গর্ত দেখা যায়, যা দাঁতের ক্ষয়ের ইঙ্গিত দেয়।
- ব্যথা বা অস্বস্তি: দাঁতে পোকাধরা হলে সাধারণত দাঁতে ব্যথা হতে পারে, বিশেষত ঠাণ্ডা বা গরম খাবার খাওয়ার সময়।
- খাবারের মধ্যে আটকে যাওয়া: দাঁতে গর্ত সৃষ্টি হলে খাবার আটকে যেতে পারে এবং এটি অস্বস্তি বা ব্যথার কারণ হতে পারে।
- দাঁতের সংবেদনশীলতা: দাঁতে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, গরম, মিষ্টি বা তিক্ত খাবার খাওয়ার সময় সংবেদনশীলতা অনুভূত হতে পারে।
- মুখে খারাপ গন্ধ: দাঁতে পোকা ধরা হলে মুখে খারাপ গন্ধ বা স্বাদ আসতে পারে, কারণ ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়।
- দাঁত নড়বড়ে হওয়া: যদি দাঁত অনেক ক্ষয়ে গিয়ে হাড়ের কাছাকাছি পৌঁছায়, তবে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।
দাঁতে পোকাধরা (Cavity) বা দাঁতের ক্ষয়ের প্রতিকার:
- নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা: দিনে অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করুন। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন যা দাঁতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায়।
- ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা: দাঁতের মধ্যে জমে থাকা খাবারের কণা ও প্লাক পরিষ্কার করতে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন।
- মাউথওয়াশ ব্যবহার করা: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন যা দাঁতের ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং দাঁত সুস্থ রাখে।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, পনির, ডিম, শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
- চিনি ও মিষ্টি কম খাওয়া: চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত, কারণ এগুলো দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি করে।
- ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান বা তামাক ব্যবহার করলে দাঁত ক্ষয়ে যেতে পারে, তাই এটি ত্যাগ করা জরুরি।
- দাঁতের স্কেলিং ও ক্লিনিং: বছরে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁত স্কেলিং বা পরিষ্কার করান যাতে প্লাক ও টারটার দূর হয় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় থাকে।
- দাঁতের ফিলিং: যদি দাঁতে গর্ত বা ক্ষয় হয়ে থাকে, তবে ডেন্টিস্টের মাধ্যমে ফিলিং করা প্রয়োজন। এটি দাঁতের গর্ত পূর্ণ করে দাঁতকে আবার শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- ডেন্টিস্টের পরামর্শ: দাঁতে পোকা ধরলে এবং ব্যথা হলে ডেন্টিস্টের কাছে দ্রুত পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডেন্টিস্ট দাঁতের সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসা করবেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ:
দাঁতে পোকা ধরলে তা সাধারণত স্কেলিং বা ফিলিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। তবে যদি দাঁত আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রুট ক্যানাল বা দাঁত তুলে ফেলা প্রয়োজন হতে পারে।
দাঁতের পোকাধরা বা ক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।