Best Homeo Doctor

ট্যারা দৃষ্টি কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ট্যারা দৃষ্টি (Double Vision বা Diplopia) এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি একে একে দুটি ছবি দেখতে পায়, যদিও বাস্তবে একটি ছবি থাকে। এটি চোখ বা মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা থেকে হতে পারে। এই ধরনের দৃষ্টির সমস্যা সরাসরি দৃষ্টিশক্তিতে প্রভাব ফেলে এবং ব্যক্তি অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।

কারণ:

  1. রিফ্র্যাকটিভ ত্রুটি (Refractive Errors):
    • এস্টিগম্যাটিজম (Astigmatism): চোখের কর্নিয়া বা লেন্সের অসম আকারের কারণে দৃষ্টি বিভ্রান্ত হয়ে ট্যারা দৃষ্টি হতে পারে।
    • মায়োপিয়া (Nearsightedness) বা হাইপারমেট্রোপিয়া (Farsightedness): যখন চোখের রিফ্র্যাকশন সঠিক না হয়, তখন সাধারণত ট্যারা দৃষ্টি দেখা যেতে পারে।
  2. চোখের পেশী বা স্নায়ুর সমস্যা:
    • ক্রানিয়াল নার্ভ প্যালেসি (Cranial Nerve Palsy): চোখের পেশী বা স্নায়ুর দুর্বলতা বা অসামঞ্জস্যের কারণে দুটি আলাদা দৃষ্টি তৈরি হতে পারে।
    • মাইস্থেনিয়া গ্রেভিস (Myasthenia Gravis): একটি স্নায়ু-স্নায়ু সমস্যা যা চোখের পেশী দুর্বল করে, ফলে ট্যারা দৃষ্টি দেখা যেতে পারে।
  3. মস্তিষ্কের রোগ:
    • স্ট্রোক (Stroke): মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে ট্যারা দৃষ্টি হতে পারে।
    • টিউমার বা ইনফেকশন (Tumors or Infections): মস্তিষ্কের টিউমার বা ইনফেকশনও দৃষ্টির সমস্যার কারণ হতে পারে।
  4. ডায়াবেটিস: উচ্চ রক্তের চিনির কারণে চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে দৃষ্টিতে সমস্যা, যেমন ট্যারা দৃষ্টি সৃষ্টি হতে পারে।
  5. ক্যাটারাক্ট (Cataract): ছানি পড়লে চোখের লেন্স মেঘলা হয়ে যায়, যার কারণে দৃষ্টির সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং কখনও কখনও ট্যারা দৃষ্টি দেখা যেতে পারে।
  6. অ্যালকোহল বা ড্রাগের প্রভাব: অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা কিছু ড্রাগের প্রভাবে চোখের স্নায়ু বা পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার কারণে ট্যারা দৃষ্টি হতে পারে।
  7. ভিটামিন বা পুষ্টির অভাব: ভিটামিন B12 বা অন্যান্য পুষ্টির অভাবের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা ট্যারা দৃষ্টির কারণ হতে পারে।
  8. চোখের ইনফেকশন বা প্রদাহ: চোখে কোন ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ থাকলে (যেমন, কনজাঙ্কটিভাইটিস বা ইরিটিস), তা দৃষ্টির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

  • দ্বৈত দৃষ্টি: একে একে দুটি ছবি দেখা, যা আসলে একটি ছবি।
  • চোখে চাপ বা ক্লান্তি: চোখের পেশী ক্লান্ত হলে ট্যারা দৃষ্টি হতে পারে।
  • মাথাব্যথা বা ঘোরাঘুরি: দৃষ্টির সমস্যা থেকে মাথাব্যথা এবং ঘোরাঘুরি হতে পারে।
  • দৃষ্টি বিভ্রান্তি: একটি বস্তু দেখে দুটি আলাদা ছবি দেখা যেতে পারে।
  • অস্বস্তি বা জ্বালা: চোখে অস্বস্তি অনুভব করা, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় পর্দার সামনে থাকার পর।

প্রতিকার:

  1. চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার: যদি রিফ্র্যাকটিভ ত্রুটি থাকে, সঠিক চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করুন।
  2. চোখের পেশী বা স্নায়ু চিকিৎসা: যদি চোখের পেশী বা স্নায়ু সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিত্সা বা থেরাপি গ্রহণ করা উচিত।
  3. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যদি ডায়াবেটিস থাকে, তবে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
  4. ক্যাটারাক্ট বা চোখের সার্জারি: যদি ছানি পড়ার কারণে ট্যারা দৃষ্টি হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সার্জারি করতে হবে।
  5. মস্তিষ্কের সমস্যা বা টিউমারের চিকিৎসা: মস্তিষ্কে যদি কোনো সমস্যা থাকে (যেমন স্ট্রোক বা টিউমার), তবে মস্তিষ্কের স্ক্যান এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
  6. অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি চিকিৎসা: যদি চোখে কোন সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  7. বিশ্রাম এবং চোখের ব্যায়াম: চোখের ক্লান্তি থেকে রক্ষা পেতে যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে এবং চোখের ব্যায়াম করা উচিত।

ট্যারা দৃষ্টি যদি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত একজন চোখের বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *