Best Homeo Doctor

জিহ্বায় ক্যান্সার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জিহ্বায় ক্যান্সার (Tongue Cancer) হলো মুখের একটি ধরনের ক্যান্সার, যা মূলত জিহ্বার কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা মিউটেশন শুরু হয়। এটি মুখগহ্বরের ক্যান্সারের একটি অংশ, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি জিহ্বার সামনের অংশে (অ্যান্টেরিয়র পার্ট) হয়, তবে জিহ্বার পেছনের অংশেও (পোস্টেরিয়র পার্ট) হতে পারে।

জিহ্বায় ক্যান্সারের কারণ:

জিহ্বায় ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু বিষয় রয়েছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়:

  1. তামাক সেবন: তামাক (ধূমপান, সিগারেট, পুতি বা তামাক চিবানো) জিহ্বায় ক্যান্সারের প্রধান কারণ। তামাকের মধ্যে থাকা কেমিক্যালের কারণে জিহ্বার কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে।
  2. অ্যালকোহল পান: অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে যখন তামাকের সঙ্গে মিশ্রিত হয়।
  3. ভাইরাস সংক্রমণ: HPV (Human Papillomavirus) ভাইরাসের সংক্রমণ মুখের ক্যান্সারের একটি বড় কারণ হতে পারে। HPV ভাইরাসের কারণে জিহ্বায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  4. বয়স: সাধারণত বয়স বেশি হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  5. পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারে কেউ মুখ বা জিহ্বার ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকে, তবে বংশগতভাবে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  6. দীর্ঘকালীন দন্তযন্ত্রের অস্বস্তি: দাঁতের সমস্যা, বিশেষত তীক্ষ্ণ দাঁত বা ব্রিজ, যা দীর্ঘদিন ধরে মুখের ভেতরে ক্ষত তৈরি করে, তা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  7. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: তাজা ফলমূল এবং সবজি না খাওয়া এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত ও প্রসেসড খাবার খাওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  8. বিশেষ কিছু জৈবিক কারণ: হরমোনাল পরিবর্তন বা অন্যান্য শারীরিক অবস্থাও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

জিহ্বায় ক্যান্সারের লক্ষণ:

জিহ্বায় ক্যান্সারের লক্ষণ সাধারণত প্রথমে খুব স্পষ্ট হয় না, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা দেখে সন্দেহ করা যায়:

  1. জিহ্বার একপাশে বা পুরোপুরি ক্ষত বা স্ফীততা: জিহ্বায় কোনো উঁচু, মাংসল গুটি বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
  2. লাল বা সাদা দাগ: জিহ্বায় লাল বা সাদা দাগ বা আলসারের মত কিছু দেখা দিতে পারে, যা ক্ষত বা জমাট বাধা কোষের ফল হতে পারে।
  3. ব্যথা বা অস্বস্তি: জিহ্বায় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার সময় বা কথা বলার সময়।
  4. খাওয়ার সময় কষ্ট বা অস্বস্তি: গলার পেছনে বা মুখের ভিতরে খাবার খাওয়ার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, এবং খাবার নেমে যাওয়ার সমস্যাও হতে পারে।
  5. রক্তপাত: জিহ্বায় ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে রক্তপাত হতে পারে, বিশেষত যখন এটি কোনো আঘাত বা চাপের সঙ্গে মিলিত হয়।
  6. স্বাদ অনুভূতির পরিবর্তন: ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে বা পুরো মুখে স্বাদ পরিবর্তন বা খাবার থেকে অস্বাভাবিক স্বাদ পাওয়া যেতে পারে।
  7. মুখের খারাপ গন্ধ: যদি কোনো চূড়ান্ত ক্ষত বা আলসার থাকে তবে এটি মুখে খারাপ গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
  8. গলা বা মুখে কোনো ফোলা বা স্ফীতি: নীচের চোয়াল বা গলায় ফোলা বা স্ফীতি দেখা যেতে পারে।

জিহ্বায় ক্যান্সারের প্রতিকার:

জিহ্বায় ক্যান্সারের চিকিৎসা তার ধরণ, স্তর এবং রোগীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি:

  1. সার্জারি (অস্ত্রোপচার): যদি ক্যান্সার শুরু হয় এবং এটি প্রচুর পরিমাণে না ছড়ায়, তবে অস্ত্রোপচার দ্বারা ক্যান্সার আক্রান্ত অংশটি অপসারণ করা হতে পারে। কখনও কখনও জিহ্বার একটি অংশ বা পুরো অংশও অপসারণ করতে হতে পারে।
  2. রেডিওথেরাপি (Radiotherapy): রেডিওথেরাপি হলো ক্যান্সার কোষের উপর তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করা। এটি ক্যান্সারের কোষগুলিকে ধ্বংস করে দিতে সাহায্য করে এবং অপারেশনের পরে বা অপারেশন ব্যতিরেকে করা যেতে পারে।
  3. কেমোথেরাপি (Chemotherapy): কেমোথেরাপি সাধারণত ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যান্সার সেলের বংশবৃদ্ধি থামাতে সহায়ক হতে পারে, বিশেষত যখন ক্যান্সার অতিরিক্ত ছড়িয়ে পড়ে।
  4. টার্গেটেড থেরাপি (Targeted Therapy): এটি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মধ্যে ক্যান্সার কোষের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়।
  5. বায়োপসি (Biopsy): ক্যান্সারের নির্দিষ্ট ধরণ ও স্তর জানার জন্য বায়োপসি করা হয়। এটি ক্যান্সারের সঠিক চিকিত্সা পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করে।
  6. পেইন ম্যানেজমেন্ট: ক্যান্সারের ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পেইন ম্যানেজমেন্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এতে রোগীকে আরাম দেওয়া সম্ভব হয়।
  7. ফিজিওথেরাপি: অস্ত্রোপচারের পর যদি মুখের কোনো অংশ কাটা হয় বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তবে মুখের মাংসপেশী সুস্থ রাখতে ফিজিওথেরাপি সহায়ক হতে পারে।
  8. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সঠিক পুষ্টি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক সমর্থন ক্যান্সার রোগীর দ্রুত সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটি সাহায্য করতে পারে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  • তামাক বা মাদকদ্রব্য এড়িয়ে চলা: তামাক, সিগারেট বা অন্য কোনো ধরণের মাদক দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
  • অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলা।
  • HPV টিকা নেওয়া: HPV ভাইরাসের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে HPV টিকা গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ: ফলমূল, শাকসবজি, এবং সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহণ করা, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

বয়স, পারিবারিক ইতিহাস এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা যদি উপযুক্তভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়, তবে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে ক্যান্সারের প্রাথমিক স্তরে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *