Best Homeo Doctor

জলযুক্ত চোখ কারন,লক্ষন,প্রতিকার

জলযুক্ত চোখ (Watery Eyes) বা চোখে অতিরিক্ত পানি আসা একটি সাধারণ চোখের সমস্যা, যেখানে চোখ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে অতিরিক্ত পানি বা জল ঝরতে থাকে। এটি একটি উপসর্গ যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এটি সাধারণত চোখের অস্বস্তি বা সমস্যা সৃষ্টি করে।

কারণ:

জলযুক্ত চোখের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন:

  1. চোখের শুষ্কতা (Dry Eye Syndrome):
    • অবাক লাগলেও, চোখের শুষ্কতার কারণে অনেক সময় চোখে জল আসে। যখন চোখ শুষ্ক হয়, তখন চোখ স্বাভাবিকভাবে পানি তৈরির জন্য অতিরিক্ত স্রাব করতে শুরু করে, যার ফলে চোখে জল আসে।
  2. অ্যালার্জি (Allergic Conjunctivitis):
    • পোলেন, ধুলাবালি, পশুর লোম, বা কেমিক্যালের প্রতি অ্যালার্জি হলে চোখে জল আসা সাধারণ। অ্যালার্জি চোখের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার কারণে চোখে অতিরিক্ত পানি ঝরে।
  3. কনট্যাক্ট লেন্স (Contact Lenses):
    • কনট্যাক্ট লেন্স পরার কারণে চোখের শুষ্কতা বা অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে, যা অতিরিক্ত পানির স্রাব তৈরি করতে পারে।
  4. অপটিক্যাল বা ভিজ্যুয়াল স্ট্রেন (Visual Strain):
    • দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে কাজ করা, বই পড়া বা অন্যান্য চোখের চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে চোখে অস্বস্তি এবং অতিরিক্ত পানি ঝরতে পারে।
  5. চোখের ইনফেকশন (Eye Infection):
    • চোখে সংক্রমণ বা প্রদাহ যেমন কনজাঙ্কটিভাইটিস (Conjunctivitis) বা পুসির কারণে চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরতে পারে।
  6. ক্যাটারাক্ট (Cataract):
    • চোখের লেন্সে মেঘলা বা অস্পষ্টতা (ক্যাটারাক্ট) থাকলে, এটি দৃষ্টির সমস্যা তৈরি করে এবং চোখে অতিরিক্ত পানি আসতে পারে।
  7. চোখের পাপড়ির সমস্যা (Eyelid Problems):
    • চোখের পাপড়ির ভেতর বা বাইরের অংশে কোনো সমস্যা যেমন মিচিং পাপড়ি (entropion) বা আউটওয়ার্ড রোলিং (ectropion) চোখের পানির স্রাব বৃদ্ধি করতে পারে।
  8. নাকের সাইনাস সমস্যা (Sinus Problems):
    • নাকের বা সাইনাসের সমস্যাগুলো, যেমন সাইনাস ইনফেকশন, চোখের চারপাশের অংশে চাপ তৈরি করতে পারে এবং চোখে জল আসার কারণ হতে পারে।
  9. বয়সজনিত পরিবর্তন (Age-Related Changes):
    • বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের পানি উৎপাদনকারী গ্রন্থি দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে অতিরিক্ত পানি আসতে পারে।

লক্ষণ:

জলযুক্ত চোখের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  1. চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরা: চোখে বেশি বেশি পানি আসা।
  2. চোখে অস্বস্তি: চোখে জ্বালা বা চুলকানির অনুভূতি।
  3. চোখে লালচে ভাব: চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যেতে পারে।
  4. ঝাপসা দৃষ্টি: চোখে অতিরিক্ত পানি আসার কারণে দৃষ্টির সমস্যা হতে পারে, যেমন ঝাপসা দৃষ্টি বা সান্নিধ্যে কিছু দেখতে অসুবিধা।
  5. চোখে পুঁজ বা ময়লা জমা: যদি চোখে সংক্রমণ থাকে, তবে পুঁজ বা ময়লা জমে থাকতে পারে।

প্রতিকার:

জলযুক্ত চোখের প্রতিকার ব্যবস্থাগুলি নির্ভর করে এর কারণের উপর। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার রয়েছে যা উপকারী হতে পারে:

  1. অ্যালার্জির চিকিৎসা:
    • অ্যালার্জির কারণে যদি চোখে জল আসে, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন চোখের ড্রপ বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো (যেমন পোলেন বা পশুর লোম) থেকে দূরে থাকা উচিত।
  2. চোখের শুষ্কতা প্রতিরোধ:
    • চোখের শুষ্কতা থেকে জলযুক্ত চোখ হতে পারে, তাই চোখে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে বা দীর্ঘ সময় স্ক্রীন বা পড়াশোনা করার সময় বিরতি নিতে হবে।
  3. কনট্যাক্ট লেন্সের যত্ন:
    • কনট্যাক্ট লেন্স পরার সময় সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং প্রয়োজনে লেন্স পরা বন্ধ রাখতে হবে। যদি চোখে শুষ্কতা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে বিশেষ চোখের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  4. চোখে গরম সেঁক:
    • গরম সেঁক চোখের প্রদাহ কমাতে এবং অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে। একটি পরিষ্কার কাপড়ে গরম পানি ভিজিয়ে চোখের উপর প্রয়োগ করতে পারেন।
  5. চোখের ড্রপ:
    • চোখের পানি বা প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ড্রপগুলি চোখের আরাম প্রদান করে এবং চোখের জল কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  6. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা:
    • যদি চোখে লালচে ভাব বা প্রদাহ থাকে, তবে চোখে মেকআপ বা কসমেটিক্স ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। চোখে সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  7. নাকের সাইনাস সমস্যা চিকিৎসা:
    • সাইনাসের সমস্যা থাকলে, নাকের উপরের চাপ কমাতে উপযুক্ত চিকিৎসা বা ঔষধ গ্রহণ করা উচিত।
  8. চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • যদি জলযুক্ত চোখ দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, বা চোখের উপর কোনো গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, তবে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার:

জলযুক্ত চোখ সাধারণত অস্থায়ী এবং চিকিৎসাযোগ্য। তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। চোখের যত্ন এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাটি সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *