চোখ চুলকানো একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক কারণেই হতে পারে। এটি কখনও কখনও অস্থায়ী হতে পারে, আবার কখনও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাও হতে পারে। চোখ চুলকানোর সময়, চোখে অস্বস্তি, জ্বালাপোড়া, সর্দি, বা অ্যালার্জির উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
চোখ চুলকানোর কারণ:
- অ্যালার্জি:
- পলিন (মৌসুমি অ্যালার্জি): ফুলের রেণু বা মাটির ধুলা।
- ঘরোয়া অ্যালার্জি: ধূলিকণার মধ্যে উপস্থিত ক্ষুদ্র অণু, পশুর লোম, বা ঘরবাড়ির ময়লা।
- মাশরুম বা অন্যান্য জীবাণু: এই ধরনের অ্যালার্জির কারণে চোখে চুলকানি এবং লালভাব হতে পারে।
- চোখের সংক্রমণ (কনজাংটিভাইটিস):
- চোখের গোলাপি বা লাল হওয়া এবং চোখ চুলকানোর একটি সাধারণ কারণ হতে পারে কনজাংটিভাইটিস (যাকে পিঙ্ক আইও বলা হয়), যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়।
- শুষ্ক চোখ:
- যখন চোখের সামনে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকে, তখন তা শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার বা খোলামেলা পরিবেশে থাকতে হতে পারে।
- অবাঞ্ছিত মাকড়সা বা ধুলা:
- চোখে যদি ধুলা বা মাকড়সা ঢুকে পড়ে, তবে তা চোখ চুলকানোর কারণ হতে পারে।
- কসমেটিক বা মেকআপ ব্যবহার:
- কিছু লোকের মেকআপ বা কসমেটিক পণ্যের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা চোখে চুলকানি সৃষ্টি করে।
- চোখের নিচে বা আশপাশে ত্বকের সমস্যাঃ
- চোখের চারপাশে ত্বকের ইনফেকশন বা অ্যালার্জি চোখে চুলকানি তৈরি করতে পারে।
- কনট্যাক্ট লেন্সের ব্যবহার:
- দীর্ঘক্ষণ কন্ট্যাক্ট লেন্স পরিধান করলে চোখে অস্বস্তি বা চুলকানি হতে পারে, বিশেষ করে যদি লেন্স সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয়।
চোখ চুলকানোর লক্ষণ:
- চোখের চুলকানি: চোখে অসহ্য চুলকানি অনুভব করা।
- লালচে বা ফুলে যাওয়া চোখ: চোখে জ্বালা এবং লালচে ভাব আসা।
- চোখের পানি পড়া বা স্রাব: চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি পড়া বা স্রাব হওয়া।
- চোখে ঝাপসা বা ঘোলা দেখার সমস্যা: চোখ চুলকানোর সাথে মাঝে মাঝে দৃষ্টির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- চোখের চারপাশে লাল বা কালো রিং: চোখের চারপাশে লাল হওয়া বা কালো রিং তৈরি হতে পারে।
চোখ চুলকানোর প্রতিকার:
- অ্যালার্জির জন্য ওষুধ:
- যদি অ্যালার্জি কারণে চোখ চুলকায়, তবে অ্যালার্জি প্রতিরোধক চোখের ড্রপ বা অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট নিতে পারেন।
- চোখের হাইজিন বজায় রাখা:
- চোখে হাত না দেয়া, নিয়মিত চোখ পরিষ্কার করা, বিশেষ করে চোখের আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
- কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার:
- শুষ্ক চোখের জন্য কৃত্রিম অশ্রু (Eye drops) ব্যবহার করা যেতে পারে, যা চোখের শুষ্কতা কমাবে।
- মেকআপ পরিহার:
- যদি কসমেটিক বা মেকআপ ব্যবহার করেই চোখ চুলকাচ্ছে, তবে সেই পণ্যগুলো পরিহার করা উচিত এবং ন্যাচারাল বা অ্যালার্জি-ফ্রি পণ্য ব্যবহার করা উচিত।
- কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারে বিরতি নেয়া:
- কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় নিয়মিত বিরতি নিন, যাতে চোখে চাপ কম পড়ে এবং চোখ শুষ্ক না হয়।
- গরম বা ঠান্ডা কমপ্রেস:
- গরম বা ঠান্ডা কমপ্রেস ব্যবহার করলে চোখের অস্বস্তি কমতে পারে এবং চুলকানি উপশম হয়।
- কন্ট্যাক্ট লেন্স পরিষ্কার রাখা:
- কন্ট্যাক্ট লেন্স নিয়মিত পরিষ্কার ও যত্নসহ ব্যবহার করা উচিত, যাতে চোখে সংক্রমণ বা অস্বস্তি না হয়।
- চোখের ডাক্তারের পরামর্শ:
- যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চোখের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চোখ চুলকানো সাধারণত কিছু সময়ের জন্য বিরক্তিকর হলেও সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।