চোখে কমদেখা বা দৃষ্টিহীনতা (হিপোভিজন) হল এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে দেখতে পারেন না বা তাদের দৃষ্টি কম হয়ে যায়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
চোখে কমদেখার কারণ:
- বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের দৃষ্টি কমে যেতে পারে। এটি সাধারণত প্রেসবাইপিয়া নামে পরিচিত, যেখানে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের ফোকাস করার ক্ষমতা কমে যায়।
- কাচবন্দি রোগ: যেমন, কাচবন্দি রোগ, যেখানে চোখের স্বচ্ছ অংশ (কর্নিয়া) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দৃষ্টি কমিয়ে দেয়।
- রেটিনার সমস্যা: রেটিনা (চোখের পেছনে লেন্সের অংশ) সংক্রান্ত রোগ যেমন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, রেটিনা ডিসপ্লেসিয়া, বা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন চোখে কমদেখার কারণ হতে পারে।
- গ্লুকোমা: এটি চোখের পেছনে চোখের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- ক্যাটার্যাক্ট: চোখের লেন্সে মেঘাচ্ছন্নতা সৃষ্টি হয়, যার ফলে দৃষ্টি হালকা বা ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।
- আঘাত বা ইনজুরি: চোখে কোনো ধরনের আঘাত বা ইনজুরি দৃষ্টি কমিয়ে দিতে পারে।
- অতিরিক্ত চোখের চাপ: যদি অতিরিক্ত চোখের চাপ থাকে, তবে চোখে তীব্র ব্যথা হতে পারে এবং দৃষ্টি কমে যেতে পারে।
- জেনেটিক সমস্যা: কিছু ধরনের জেনেটিক রোগ যেমন স্টারগার্ট ডিজিজ বা রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা চোখে কমদেখার কারণ হতে পারে।
- প্রসূতি সম্পর্কিত সমস্যা: গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলা প্রেগন্যান্সি-সম্পর্কিত দৃষ্টিশক্তি সমস্যা অনুভব করতে পারেন, যেমন হাইপারটেনশন বা প্রেগন্যান্সি গ্লুকোমা।
চোখে কমদেখার লক্ষণ:
- ঝাপসা দৃষ্টি: একাধিক ছবি দেখা বা দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া।
- আলো বা অন্ধকারে দেখতে সমস্যা: বিশেষত রাতে বা কম আলোতে দেখতে সমস্যা হওয়া।
- রঙের পার্থক্য বোঝার অসুবিধা: রঙের পার্থক্য সঠিকভাবে দেখতে না পারা।
- প্রতি নির্দিষ্ট পয়েন্টের দৃষ্টি হারানো: একটি নির্দিষ্ট জায়গা বা বস্তু দেখতে অসুবিধা হওয়া।
- চোখের ক্লান্তি: চোখে ভারী বা ক্লান্তি অনুভব হওয়া।
- ডাবল ভিশন (Double vision): একাধিক ছবি বা ছবি বিভক্ত হয়ে দেখানো।
- ধূসর বা মেঘাচ্ছন্ন দৃষ্টি: চোখের সামনে ধূসর বা মেঘাচ্ছন্ন কিছু দেখার অনুভূতি।
চোখে কমদেখার প্রতিকার:
- চোখের পরীক্ষা: নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে বা পরিবারে চোখের রোগ থাকলে।
- চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স: চোখে কমদেখা হলে চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চোখের সার্জারি: যেমন, ক্যাটার্যাক্ট সার্জারি বা ল্যাসিক অপারেশন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
- দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র: কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র (যেমন ম্যাগনিফাইয়ার) বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৃষ্টির উন্নতি করা যেতে পারে।
- ওষুধের ব্যবহার: গ্লুকোমা বা অন্য কোনো রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
- প্রতিকারমূলক জীবনধারা: স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, সঠিক ঘুম এবং চোখের বিশ্রাম রাখা দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী হতে পারে।
এছাড়া, চোখে কমদেখার উপসর্গ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ কিছু রোগের আগাম চিকিৎসা সঠিক দৃষ্টি রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।