গলার ক্যান্সার (Throat Cancer) একটি মারাত্মক রোগ যা গলার বিভিন্ন অংশে, যেমন গলার শ্বাসনালী (ফ্যারিঞ্জ), কণ্ঠস্বর (ল্যারিঞ্জ), বা গলায় অন্যান্য টিস্যুর মধ্যে হতে পারে। এটি দ্রুত বাড়তে পারে এবং যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মারাত্মক হতে পারে।
গলার ক্যান্সারের কারণ:
গলার ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু পরিচিত কারণ ও ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়:
- ধূমপান:
- ধূমপান গলার ক্যান্সারের একটি প্রধান কারণ। সিগারেট, সিগার, বা তামাক ব্যবহারের কারণে গলার টিস্যুতে ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে ক্যান্সার হতে পারে।
- অতিরিক্ত মদ্যপান:
- দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মদ্যপান গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ও মদ্যপান একসাথে করলে ঝুঁকি আরও বাড়ে।
- এইচপিভি (HPV) ভাইরাস:
- এইচপিভি ভাইরাস (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস) গলার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হতে পারে, বিশেষ করে কণ্ঠস্বরের অংশে।
- অনুশীলন বা অপর্যাপ্ত খাদ্যাভ্যাস:
- সঠিক পুষ্টির অভাব বা অপর্যাপ্ত ভিটামিন এবং খনিজের কারণে টিস্যু দুর্বল হয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- পরিবারিক ইতিহাস:
- যদি পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তির গলার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- বয়স:
- সাধারণত ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের লোকদের মধ্যে গলার ক্যান্সার দেখা যায় বেশি।
- কিছু পেশার ঝুঁকি:
- যে সব পেশায় ধূমপান, মদ্যপান বা রাসায়নিক পদার্থের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে, সেখানে কর্মরত ব্যক্তির মধ্যে গলার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গলার ক্যান্সারের লক্ষণ:
গলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলি বিভিন্ন ধাপে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণত এগুলো দেখা যায়:
- গলা বা শ্বাসনালীতে ব্যথা:
- গলাব্যথা যা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং স্বাভাবিক চিকিৎসায় ভালো হয় না।
- কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন:
- কণ্ঠস্বর খসখসে বা গলা থেকে হাঁচির মত হতে পারে।
- গলার ভিতরে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি:
- গলা বা শ্বাসনালিতে কিছু আটকে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে।
- খাবার গিলতে কষ্ট:
- খাবার বা পানি গিলতে সমস্যা বা ব্যথা অনুভূতি হতে পারে।
- গলার ফোলা বা গাঁটে যন্ত্রণা:
- গলায় লিম্ফ নোড বা টিউমার গঠন হতে পারে যা হাত দিয়ে অনুভব করা যায়।
- বিশেষভাবে একপাশে ব্যথা:
- কানে বা গলার একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- ওজন কমে যাওয়া:
- বিশেষভাবে খাবার গিলতে কষ্টের কারণে অবাঞ্ছিতভাবে ওজন কমে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট বা সর্দি:
- গলা বা শ্বাসনালীতে কোনো অবরোধের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
প্রতিকার:
গলার ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সাধারণত গলার ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি হলো:
- কেমোথেরাপি:
- কেমোথেরাপি চিকিৎসা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সহায়ক।
- রেডিওথেরাপি:
- রেডিওথেরাপি তেজস্ক্রিয় শক্তির মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।
- সার্জারি (অস্ত্রোপচার):
- গলার টিউমার বা আক্রান্ত অংশ অপসারণ করার জন্য সার্জারি করা হতে পারে, তবে এটি ক্যান্সারের পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে।
- Targeted Therapy বা Immunotherapy:
- কিছু ক্ষেত্রে, ক্যান্সারের কোষগুলিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করা হয়, যা টার্গেটেড থেরাপি হিসেবে পরিচিত। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে।
- পালিয়েটিভ কেয়ার:
- ক্যান্সার যদি অনেক বড় হয়ে যায় এবং চিকিৎসা সম্ভব না হয়, তবে রোগীকে আরামদায়ক জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য পালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়।
গলার ক্যান্সারের প্রতিরোধ:
- ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান একেবারে ত্যাগ করা উচিত।
- মদ্যপান সীমিত করুন: অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
- এইচপিভি প্রতিরোধক টিকা: এইচপিভি ভাইরাসের ঝুঁকি কমাতে টিকা নেওয়া যেতে পারে।
গলার ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।