গলগণ্ড কি,কারন,লক্ষন, প্রতিকার

গলগণ্ড (Thyroid) বা থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনে অবস্থিত একটি ছোট অঙ্গ, যা শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড গ্রন্থি দুইটি প্রধান হরমোন থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইআইওডোথাইরোনিন (T3) উৎপন্ন করে, যা শরীরের শক্তির উৎপাদন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, মস্তিষ্কের কার্যক্রম, হৃদযন্ত্রের গতি এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিচালনা করে।

থাইরয়েড গ্রন্থি সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সাধারণত গলগণ্ড বা থাইরয়েড ডিজঅর্ডারের কারণ হতে পারে। এটি অনেক ধরনের হতে পারে, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত বা অপ্রতুল কার্যক্রম (হাইপোথাইরয়েডিজম, হাইপারথাইরয়েডিজম), বা থাইরয়েডে সিস্ট বা টিউমার হওয়া।

গলগণ্ড (Thyroid) বা থাইরয়েডের সমস্যা:

1. হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism):
   • এটি ঘটে যখন থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন করতে পারে না। এর ফলে শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
2. হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism):
   • এটি ঘটে যখন থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত পরিমাণে হরমোন উৎপন্ন করে। এর ফলে শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া দ্রুত হয়ে যায়।
3. থাইরয়েড গ্রন্থির সিস্ট বা নডিউল:
   • থাইরয়েড গ্রন্থিতে কটু গঠন বা সিস্ট বা টিউমার সৃষ্টি হতে পারে, যা গলগণ্ডের মতো আকার নেয়। এই নডিউল বা সিস্ট সাধারণত বিনাইন (benign) হতে পারে, তবে কখনও কখনও ক্যান্সার হতে পারে।

গলগণ্ড বা থাইরয়েড সমস্যা হওয়ার কারণ:

1. জোডিনের অভাব:
   • থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে জোডিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জোডিনের অভাব হলে থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং গলগণ্ড হতে পারে।
2. অটোকিউমিউন রোগ:
   • হ্যাশিমোটো থাইরয়ডাইটিস (Hashimoto’s thyroiditis) বা গ্রেভস‘ ডিজিজ (Graves’ disease) মতো রোগে শরীর নিজেই থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে, যার ফলে হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে।
3. জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস:
   • থাইরয়েড সমস্যা বা ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে, আপনার গলগণ্ড বা থাইরয়েডের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
4. বয়স ও লিঙ্গ:
   • মহিলাদের এবং ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে থাইরয়েড সমস্যার ঝুঁকি বেশি।
5. থাইরয়েড গ্রন্থির টিউমার:
   • থাইরয়েড গ্রন্থিতে টিউমার বা ক্যান্সার হওয়া (যদিও খুব কমই হয়) গলগণ্ড বা থাইরয়েড সমস্যার কারণ হতে পারে।

গলগণ্ড বা থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ:

1. গলার সামনের দিকে ফোলা (গলগণ্ড):
   • গলা বা থাইরয়েড গ্রন্থির আশেপাশে ফোলা, যা গলায় একটি দৃশ্যমান বা অনুভূত বল তৈরি করতে পারে। এটি সাধারণত থাইরয়েডের সমস্যা বা নডিউল দ্বারা ঘটে।
2. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
   • হাইপোথাইরয়েডিজম:
     • ক্লান্তি, অবসাদ, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, ত্বকের শুষ্কতা, চুল পড়া, মেজাজের পরিবর্তন।
   • হাইপারথাইরয়েডিজম:
     • দ্রুত হৃদস্পন্দন, অতিরিক্ত ঘাম, অস্থিরতা, অস্বাভাবিক ভাবে ওজন কমে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা।
3. গলা বা কণ্ঠে পরিবর্তন:
   • গলার ভিতরে ব্যথা বা কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হতে পারে, যা গলগণ্ড বা থাইরয়েডে কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
4. শ্বাসকষ্ট বা খাদ্য গিলতে কষ্ট:
   • থাইরয়েড গ্রন্থির ফোলাভাবের কারণে শ্বাস নিতে বা খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে।
5. বমি বা বমির অনুভূতি:
   • থাইরয়েডের সমস্যা এমনকি পাচনতন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে বমি বা অস্বস্তি হতে পারে।

গলগণ্ড বা থাইরয়েডের সমস্যা সমাধানের প্রতিকার:

1. ওষুধ:
   • হাইপোথাইরয়েডিজম: হরমোনের অভাব পূরণের জন্য থাইরক্সিন বা অন্যান্য থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ দেয়া হয়।
   • হাইপারথাইরয়েডিজম: থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমানোর জন্য ওষুধ যেমন, থায়ামজোল বা প্রপিলথিওউরাসিল দেয়া হয়।
2. থাইরয়েড গ্রন্থির অপসারণ বা সার্জারি:
   • যদি থাইরয়েড গ্রন্থির নডিউল বা টিউমার থাকে এবং তা চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে না যায়, তবে সার্জারি করা হতে পারে। কখনও কখনও পুরো থাইরয়েড গ্রন্থি অপসারণ করা হয়।
3. রেডিওআইসোটোপ থেরাপি:
   • হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড টিউমারের জন্য কিছু ক্ষেত্রে রেডিওআইসোটোপ থেরাপি দেয়া হয়, যাতে অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন কমানো যায়।
4. জোডিন সাপ্লিমেন্ট:
   • যদি জোডিনের অভাব থাকে, তবে জোডিন সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্যতালিকায় জোডিন সমৃদ্ধ খাবার (যেমন সল্ট) অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
5. লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
   • সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

গলগণ্ড বা থাইরয়েড সমস্যার জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং সময়মতো চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।