কান পাকা (Ear infection or Otitis Media) বলতে কানের ভিতরের অংশে সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে ঘটে, যা কানের ব্যথা, শোনার সমস্যা, এবং অন্যান্য উপসর্গের সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণভাবে, এটি কানের পর্দার (Tympanic Membrane) ভিতরের অংশে বা কানের টিউবের (Eustachian tube) প্রদাহ বা ইনফেকশনের কারণে ঘটে থাকে।
কারণ:
কান পাকার প্রধান কারণগুলি হল:
- ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ:
- কানের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণ করলে কানে প্রদাহ ও ইনফেকশন হতে পারে, যা কান পাকার প্রধান কারণ। এটি সাধারণত ঠাণ্ডা, সর্দি বা গলা ব্যথার পরিণতি হিসাবে ঘটে।
- এয়ার টিউবের বাধা:
- কানের শোঁকার টিউব (Eustachian tube) যদি ব্লক হয়ে যায় বা 제대로 কাজ না করে, তাহলে কানের ভিতরে চাপ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে তরল জমে, যা কানে পাকা হতে সাহায্য করতে পারে।
- ভাইরাল সংক্রমণ (যেমন সর্দি বা ফ্লু):
- সর্দি, ফ্লু, বা অন্য কোনো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ কানের টিউবের ভিতরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং কান পাকা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।
- কানে ময়লা বা ওয়াক্স জমা:
- কানে অতিরিক্ত ময়লা বা ওয়াক্স জমে গেলে কানের শোঁকার টিউব ব্লক হতে পারে, যার ফলে কানের ভিতরে চাপ সৃষ্টি হয় এবং ইনফেকশন হতে পারে।
- অ্যালার্জি:
- ঠাণ্ডা বা ধুলাবালি থেকে অ্যালার্জি, যা কানের টিউবের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং কান পাকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গোসল বা সাঁতার কাটার সময় পানি ঢোকা:
- সাঁতার কাটার সময় বা গোসল করার সময় পানি কানে ঢুকে কানের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য জীবাণুর প্রবাহ ঘটাতে পারে, যা কান পাকার কারণ হতে পারে।
- কানের আঘাত বা ট্রমা:
- কানে কোনো আঘাত বা চাপের কারণে কানের ভিতরে ইনফেকশন বা প্রদাহ হতে পারে।
লক্ষণ:
কান পাকার লক্ষণগুলো সাধারণত এইভাবে থাকতে পারে:
- কানে ব্যথা: কানের ভিতরে বা বাইরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত শোয়ার সময় বা ঠাণ্ডা লাগলে বেড়ে যায়।
- কানে চাপ বা পূর্ণতার অনুভূতি: কানে ভারী বা চাপ অনুভূতি থাকতে পারে, কারণ কানের ভিতরে তরল জমে যায়।
- কানে স্রাব বা পুঁজ: কানে থেকে গা dark ় বা হলুদ রঙের পুঁজ বের হতে পারে, যা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে।
- শোনা সমস্যা: কানে ইনফেকশন হলে শুনতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি কানের পর্দা ফেটে যায়।
- উত্তাপ বা জ্বর: কানে ইনফেকশন থাকলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে (জ্বর)।
- চুলকানি বা অস্বস্তি: কানে অস্বস্তি, চুলকানি বা জ্বালা অনুভূত হতে পারে।
- মাথাব্যথা: কানে প্রদাহের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
প্রতিকার:
কান পাকা হলে কিছু সাধারণ প্রতিকার গ্রহণ করা যেতে পারে:
- অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি ওষুধ:
- চিকিৎসক যদি মনে করেন যে কানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়েছে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হতে পারে। এছাড়া, প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি ওষুধও দেয়া হতে পারে।
- গরম সেঁক দেওয়া:
- কানে ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে। একটি পরিষ্কার কাপড়ে গরম পানি নিয়ে কানে সেঁক দিন।
- কানের স্রাব পরিষ্কার করা:
- কানে অতিরিক্ত ময়লা বা ওয়াক্স জমে থাকলে তা পরিষ্কার করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে কানের ওয়াক্স পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু নিজে কানে কিছু ঢুকিয়ে পরিষ্কার করবেন না, কারণ এটি ইনফেকশন বাড়াতে পারে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও জলপান:
- শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে তরল (জল, ফলের রস) পান করা উচিত।
- ওষুধের সাহায্যে কানের টিউবের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা:
- যদি কানে চাপ বা পূর্ণতার অনুভূতি থাকে, তবে চিকিৎসক ডিকংজেস্ট্যান্ট ওষুধ দিতে পারেন যা কানের টিউবের চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- অ্যালার্জি ও ঠাণ্ডার চিকিৎসা:
- যদি অ্যালার্জি বা ঠাণ্ডার কারণে কান পাকা হয়ে থাকে, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন বা ঠাণ্ডার চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
- কানের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা:
- কানে ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে কানে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম না লাগাতে চেষ্টা করুন। তাপমাত্রার পরিবর্তন কানের অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
- যদি কান পাকা সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর আঘাত বা ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা যায় (যেমন স্রাব বা শোনার সমস্যা), তবে অবশ্যই একজন ENT (কান, গলা, নাক বিশেষজ্ঞ) চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
সতর্কতা:
কানে ইনফেকশন বা কান পাকা দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার বা শোনার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।