কানে ঘা (Ear Ulcer) হলো কানের ভিতর বা বাইরের ত্বকে ক্ষত বা আলসার হয়ে যাওয়া। এটি ব্যথা, প্রদাহ এবং কখনো কখনো পুঁজ বের হওয়া সৃষ্টিকারী একটি সমস্যা। কানে ঘা হওয়া সাধারণত কোনো সংক্রমণ, আঘাত বা ত্বক সম্পর্কিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এটি গুরুতর হতে পারে যদি না চিকিৎসা করা হয়।
কারণ:
কানে ঘা হওয়ার প্রধান কারণগুলো হল:
- কানে আঘাত বা ট্রমা:
- কানে আঘাত বা চাপ লাগলে, যেমন কোনো কঠিন বস্তু দিয়ে কানে আঘাত লাগা, এটি কানের ত্বকে ঘা সৃষ্টি করতে পারে।
- ইনফেকশন (ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস):
- কানের ভিতরের অংশে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে, যার ফলে কানের ত্বকে ক্ষত বা ঘা হয়ে যায়। যেমন অটিটিস মিডিয়া বা অটিটিস এক্সটার্না।
- কানের পর্দার ইনফেকশন:
- কানের পর্দা ছিঁড়ে গেলে বা ইনফেকশন হলে কানে ঘা হতে পারে।
- কানের বাইরের অংশে ইনফেকশন (অটিটিস এক্সটার্না):
- কানের বাইরের অংশে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের কারণে ঘা বা আলসার হতে পারে, যা কানের প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- অ্যালার্জি:
- কোনো ধরনের অ্যালার্জি (যেমন ডিটারজেন্ট, প্রসাধনী বা খাবারের অ্যালার্জি) কানের ত্বকে ঘা সৃষ্টি করতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর কানের পরিচ্ছন্নতা:
- কানে বেশি আঙুল বা অন্য কোনো বস্তু প্রবেশ করানো, কানে ময়লা বা ওয়াক্স জমিয়ে রাখা কানের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ঘা সৃষ্টি করতে পারে।
- কানের গহনা পরিধান:
- কিছু কানে গহনা পরার কারণে ত্বকে ক্ষত হতে পারে, বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে।
- টিউমার বা ক্যান্সার:
- খুব বিরল হলেও, কানের ভিতরে বা বাইরের অংশে টিউমার বা ক্যান্সার কানের ত্বকে ঘা তৈরি করতে পারে।
লক্ষণ:
কানে ঘা হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো:
- কানে ব্যথা: কানে ঘা হলে সেখানে তীব্র বা কম ব্যথা হতে পারে, যা কানের ভিতর বা বাইরের অংশে অনুভূত হয়।
- কানে প্রদাহ বা লালচে হওয়া: কানে ঘা হলে কানের ত্বক লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।
- কানে পুঁজ বা তরল স্রাব: কানে ঘা হলে সেখানে থেকে পুঁজ বা তরল স্রাব বের হতে পারে।
- শোনার সমস্যা: কানের ভিতরের অংশে ঘা হলে শোনার সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি কানে তরল জমে থাকে।
- চুলকানি বা অস্বস্তি: কানে ঘা হলে সেখানে চুলকানি বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- কানে গরম লাগা বা উত্তাপ: ঘা বা সংক্রমণের কারণে কানে গরম লাগতে পারে এবং জ্বরও উঠতে পারে।
প্রতিকার:
কানে ঘা হলে কিছু সাধারণ প্রতিকার নেওয়া যেতে পারে:
- কানের পরিষ্কার রাখা:
- কানে অতিরিক্ত ময়লা বা ওয়াক্স জমতে না দেওয়ার জন্য কানের বাইরের অংশ পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে কানের ভিতরে কিছু প্রবেশ করানো উচিত নয়, যাতে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
- অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করা:
- কানে ঘা বা সংক্রমণ হলে অ্যান্টিসেপটিক মলম বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, এটি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- এন্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি ওষুধ:
- যদি কানে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ থাকে, তাহলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি ওষুধ দিতে পারেন।
- যদি প্রদাহ বা ব্যথা থাকে, তাহলে প্রদাহ কমানোর জন্য আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামল এর মতো উপশমকারী ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গরম সেঁক দেওয়া:
- কানে ঘা হলে গরম সেঁক দিতে সাহায্য করতে পারে। এটি ব্যথা কমাতে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, গরম সেঁক দেওয়ার সময় খুব বেশি গরম নয়, যাতে ত্বক পুড়ে না যায়।
- পানি থেকে দূরে রাখা:
- কানের ভিতর ঘা হলে গোসল করার সময় কানে পানি প্রবাহিত হতে দেওয়া উচিত নয়। এটি ইনফেকশন বাড়াতে পারে। তাই কানের ঘা হলে কান সিলিং ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কানের গহনা পরিধান পরিহার করা:
- কানে গহনা পরলে যদি ঘা হয়, তবে তা পরিহার করা উচিত। গহনা পরলে কানের ত্বকে আরও আঘাত বা সংক্রমণ হতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
- যদি কানের ঘা গুরুতর হয় বা দীর্ঘদিন ধরে চলে, তাহলে ENT বিশেষজ্ঞ (কান, গলা, নাক চিকিৎসক) এর পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত, যদি পুঁজ বা রক্তস্রাব হয় বা শোনার সমস্যা হয়।
- অ্যালার্জির চিকিৎসা:
- যদি অ্যালার্জির কারণে কানে ঘা হয়, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধের মাধ্যমে অ্যালার্জি কমানো যেতে পারে।
সতর্কতা:
- কানে ঘা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়, বিশেষত যদি ইনফেকশন বা প্রদাহ খুব তীব্র হয়। এটি কান পেরেক বা শ্রবণ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী কানের ঘা হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।