Best Homeo Doctor

কলহপ্রিয় কারন লক্ষন প্রতিকার

কলহপ্রিয় (Argumentative or Quarrelsome Nature) হলো এমন একটি মানসিক বা আচরণগত প্রবণতা, যেখানে ব্যক্তি প্রায়ই ঝগড়া বা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং কারো সঙ্গে অহেতুক বা অকারণীয়ভাবে তর্ক-বিতর্ক করতে থাকে। কলহপ্রিয়তা মানুষের সামাজিক সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপের সৃষ্টি করতে পারে।

কলহপ্রিয়তার কারণ (Causes of Quarrelsome Nature):

১. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: যখন কেউ মানসিকভাবে চাপগ্রস্ত থাকে বা উদ্বেগ অনুভব করে, তখন সে অধিকাংশ সময় চরম প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং তর্ক করতে পারে। ২. অসন্তুষ্টি বা হতাশা: যদি কেউ তার জীবনে কিছু না পায় বা তার আশা পূর্ণ না হয়, তখন সে নিজের frustration (অসন্তুষ্টি) অন্যদের সঙ্গে কলহ করে প্রকাশ করে। ৩. শিশুকালে অভ্যস্ততা: কিছু শিশু বা বড়রা ছোটবেলায় যদি ঘন ঘন কলহের মধ্যে বড় হয়ে ওঠে, তবে তাদের মধ্যে কলহপ্রিয় আচরণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ৪. কমিউনিকেশন স্কিলের অভাব: যদি কেউ তার অনুভূতি বা চিন্তাভাবনা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারে, তখন সে কথা বলার জন্য তর্কে জড়িয়ে পড়ে। ৫. অধিক অহংকার বা আত্মবিশ্বাসের অভাব: কেউ যদি নিজেকে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে অথবা কম আত্মবিশ্বাসী হয়, তবে সে অন্যদের সঙ্গে অহেতুক বিরোধ তৈরি করতে পারে। ৬. প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব: কিছু মানুষ সবসময় নিজেদের সঠিক প্রমাণ করতে চায় এবং অন্যদের ভুল ধরতে আগ্রহী থাকে, ফলে কলহ সৃষ্টি হয়। ৭. ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যা: ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা পারিবারিক অশান্তি, যেমন দাম্পত্য সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি বা অন্যান্য সংকটের কারণে কলহপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

কলহপ্রিয়তার লক্ষণ (Symptoms of Quarrelsome Nature):

১. অযথা তর্ক করা: ছোট-খাটো বিষয়েও বিরোধ তৈরি করা বা অহেতুক ঝগড়া করা। ২. অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি: ক্রমাগত তর্কের কারণে অন্যদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করা। ৩. অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক মনোভাব: কিছু মানুষ যখন কোনো বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা নিজের অবস্থান ছাড়তে চায় না এবং অন্যদের মতামত গ্রহণে অনিচ্ছুক থাকে। ৪. এগিয়ে যেতে না পারা: তর্কের কারণে মানুষের মধ্যে সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা কমে যায়, কারণ তারা সবসময় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকে। ৫. মনোভাবের পরিবর্তন: কখনো কখনো ব্যক্তির আচরণ খুব আক্রমণাত্মক বা চরমপন্থী হতে পারে, যেমন গালিগালাজ করা বা শারীরিক আক্রমণ করা। ৬. অন্যদের প্রতি বিরক্তি বা হতাশা: কলহপ্রিয় ব্যক্তি অন্যদের প্রতি অনৈতিক বা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে, যা সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কলহপ্রিয়তার প্রতিকার (Treatment for Quarrelsome Nature):

১. আত্মবিশ্লেষণ (Self-reflection): প্রথমে ব্যক্তি নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারে। কেন তিনি কলহ করেন, তার আসল কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। একবার এটি বুঝতে পারলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

২. দৃঢ় কিন্তু শান্ত মনোভাব: যদি আপনি কলহপ্রিয় হন, তবে চেষ্টা করুন আপনার মনোভাব স্থির এবং শান্ত রাখতে। তর্কের সময়, সৎ এবং সহনশীল মনোভাব ধরে রাখা প্রয়োজন।

৩. কমিউনিকেশন স্কিল উন্নয়ন: আপনার মতামত সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য উন্নত যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেন কোনো পরিস্থিতিতে তর্ক-বিতর্ক না হয়, বরং সমস্যার সমাধান বের করা যায়।

  1. মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন: মাইন্ডফুলনেস বা যোগব্যায়াম, যা আপনার মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। মন শান্ত হলে, আপনি দ্রুত উত্তেজিত হবেন না এবং ক্রুদ্ধ হয়ে তর্কে জড়াবেন না।
  2. মনোবিদ বা কাউন্সেলিং: যদি কলহপ্রিয়তার সমস্যাটি খুব গাঢ় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT) কলহের আচরণ পরিবর্তন করতে সহায়ক।
  3. ধৈর্য সহনশীলতা: অন্যদের প্রতি ধৈর্য এবং সহানুভূতি দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। মনের মধ্যে বিরোধ থাকলে সেটা নিজেদের মধ্যে সমাধান করা উচিত, তর্কের মাধ্যমে নয়।
  4. পরিবারের সহায়তা: পরিবার বা কাছের বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা সমাধান করা। পরিবার যদি সচেতন থাকে এবং পরামর্শ দেয়, তবে কলহ কমানো সহজ হতে পারে।

কলহপ্রিয়তা মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলতে পারে, বিশেষ করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। তাই এটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে জীবন আরো শান্তিপূর্ণ এবং সুখময় হয়ে ওঠে।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *