Best Homeo Doctor

কণ্ঠনালি প্রদাহ কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

কণ্ঠনালি প্রদাহ (Laryngitis) হল গলার মধ্যে অবস্থিত কণ্ঠনালির প্রদাহ। এটি সাধারণত কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা এবং গলার ব্যথা সৃষ্টি করে। কণ্ঠনালি বা ল্যারিঙ্ক্স (Larynx) হল শ্বাসনালী ও কণ্ঠস্বরের অংশ, এবং এতে দুটি ভোকালকর্ড থাকে যা শ্বাসনালী থেকে বাতাস বের হতে দেয় এবং কণ্ঠস্বর তৈরি করে।

কণ্ঠনালি প্রদাহের কারণ:

কণ্ঠনালি প্রদাহ সাধারণত দুই ধরনের হয়:

  1. তীব্র কণ্ঠনালি প্রদাহ (Acute Laryngitis): এটি সাধারণত সংক্রমণের কারণে হয় এবং কিছু দিনেই সেরে যায়।
  2. দীর্ঘস্থায়ী কণ্ঠনালি প্রদাহ (Chronic Laryngitis): এটি দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে এবং সাধারণত ক্রনিক রোগের কারণে হয়।

কণ্ঠনালি প্রদাহের সাধারণ কারণ:

  1. ভাইরাল সংক্রমণ (Viral Infection):
    • সাধারণ সর্দি, ফ্লু বা অন্য ভাইরাসজনিত রোগ কণ্ঠনালি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  2. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ (Bacterial Infection):
    • কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়া (যেমন স্ট্রেপটোকোক্কাস) কণ্ঠনালির প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যদিও ভাইরাল সংক্রমণ বেশি সাধারণ।
  3. অতিরিক্ত কণ্ঠস্বর ব্যবহার (Voice Strain):
    • অতিরিক্ত চিৎকার, উচ্চস্বরে কথা বলা বা দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার কারণে কণ্ঠনালিতে চাপ পড়ে, যার ফলে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
  4. অ্যালার্জি:
    • ধূলিকণিকা, পলল, বা অ্যালার্জির কারণে কণ্ঠনালিতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এটি গলার শুষ্কতা এবং অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
  5. ধূমপান:
    • ধূমপান কণ্ঠনালির প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, কারণ ধূমপানের ধোঁয়া গলার টিস্যুর জন্য ক্ষতিকর।
  6. এসিড রিফ্লাক্স (Acid Reflux):
    • গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাগিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বা এসিড রিফ্লাক্সও কণ্ঠনালির প্রদাহের কারণ হতে পারে, যেখানে পাকস্থলী থেকে এসিড গলার দিকে উঠে আসে।
  7. এয়ার পল্যুশন বা দূষণ:
    • দূষিত বাতাস বা ধূলিময় পরিবেশে বসবাস করলে গলায় প্রদাহ হতে পারে।
  8. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ:
    • মানসিক চাপ বা উদ্বেগও গলার শুষ্কতা এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

কণ্ঠনালি প্রদাহের লক্ষণ:

  1. কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন (Hoarseness):
    • কণ্ঠস্বর খুশখুশ বা ভাঙা হয়ে যেতে পারে। এটি সাধারণত গলা শুষ্ক বা সুরে পরিবর্তন হয়।
  2. গলা ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • গলায় ব্যথা, খুশখুশ বা গলার মধ্যে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হতে পারে।
  3. গলা পরিষ্কার করতে চাওয়া:
    • কণ্ঠনালি প্রদাহের কারণে গলা পরিষ্কার করতে বা কাশির জন্য অনেক সময় চেষ্টা করা হয়, কিন্তু এটি তেমন কার্যকর হয় না।
  4. বয়স কম হলে কথা বলা বা শ্বাস নিতে সমস্যা:
    • শিশুদের ক্ষেত্রে কণ্ঠনালি প্রদাহের কারণে কথা বলা বা শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে, যা জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
  5. বমি বা বমির অনুভূতি:
    • কিছু ক্ষেত্রে এসিড রিফ্লাক্স বা প্রদাহের কারণে বমি বা বমির অনুভূতি দেখা দিতে পারে।
  6. শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসে কষ্ট:
    • কণ্ঠনালি প্রদাহের কারণে শ্বাস নিতে বা শ্বাসে কষ্ট হতে পারে।
  7. কাঁপুনির অনুভূতি বা জ্বর:
    • যদি প্রদাহের কারণে সংক্রমণ হয়ে থাকে, তবে জ্বর এবং কাঁপুনির অনুভূতি হতে পারে।

কণ্ঠনালি প্রদাহের প্রতিকার:

  1. গলা বিশ্রাম (Voice Rest):
    • অতিরিক্ত কথা বলা বা চিৎকার করা থেকে বিরত থাকুন। গলা বিশ্রাম গলার সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  2. পানি তরল পান করুন:
    • গলা শুষ্ক না রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং তরল পান করুন। হালকা গরম পানি বা লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
  3. ধূমপান পরিহার করুন:
    • ধূমপান কণ্ঠনালির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, তাই এটি থেকে বিরত থাকা উচিত।
  4. গরম বা ঠাণ্ডা পানির ব্যবহার:
    • খুব ঠাণ্ডা বা গরম পানি না খেয়ে, গরম পানি পান করুন। এটি গলার শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  5. এয়ার হিউমিডিফায়ার ব্যবহার:
    • ঘরে শুষ্ক পরিবেশ হলে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন যাতে গলা আর্দ্র থাকে।
  6. অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ:
    • প্রদাহ কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
  7. গলার জন্য গরম সেঁক:
    • গলায় গরম সেঁক দেওয়া বা গরম পানিতে ভাপ নেয়া কণ্ঠনালির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  8. অ্যান্টিহিস্টামিন বা অ্যালার্জি ওষুধ:
    • যদি অ্যালার্জির কারণে কণ্ঠনালি প্রদাহ হয়ে থাকে, তাহলে অ্যান্টি-হিস্টামিন ওষুধ সাহায্য করতে পারে।
  9. ডাক্তারের পরামর্শ:
    • যদি কণ্ঠনালি প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়, অথবা যদি এতে শ্বাসকষ্ট বা গুরুতর লক্ষণ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা অন্য কোনো গুরুতর কারণ থাকতে পারে, যা অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।

সতর্কতা:

  • কণ্ঠনালি প্রদাহের কারণে যদি কণ্ঠের পরিবর্তন দীর্ঘ সময় ধরে থাকে (৩ সপ্তাহ বা তার বেশি), তবে এটি গুরুতর কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, যেমন ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগ। তাই দীর্ঘস্থায়ী গলা সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

কণ্ঠনালি প্রদাহ সাধারণত চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়, তবে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *