Best Homeo Doctor

কড়াগলা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

কড়াগলা (Laryngitis) একটি গলাব্যথার অবস্থা যেখানে কণ্ঠনালি বা গলার ভেতরের অংশে প্রদাহ ঘটে। এটি সাধারণত গলার অস্বস্তি, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন এবং শ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কড়াগলা সাধারণত ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, অতিরিক্ত কণ্ঠস্বর ব্যবহার, এলার্জি বা অন্যান্য কারণে হতে পারে।

কড়াগলার কারণ:

  1. ভাইরাল সংক্রমণ (Viral Infection):
    • সাধারণ সর্দি, ফ্লু বা গলার ভাইরাসের কারণে কড়াগলা হতে পারে। এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
  2. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Infection):
    • কখনও কখনও ব্যাকটেরিয়ার কারণে কণ্ঠনালি প্রদাহ হতে পারে, তবে এটি কম হয়। স্ট্রেপটোকোক্কাস ব্যাকটেরিয়া অন্যতম কারণ।
  3. অতিরিক্ত কণ্ঠস্বর ব্যবহার (Voice Strain):
    • অতিরিক্ত কথা বলা, চিৎকার করা, গান গাওয়া বা দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চস্বরে কথা বললে কণ্ঠনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  4. ধূমপান:
    • ধূমপান কণ্ঠনালির জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে গলার শুষ্কতা ও প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
  5. এলার্জি:
    • পলল, ধূলিকণিকা বা অন্যান্য পরিবেশগত অ্যালার্জির কারণে গলায় প্রদাহ হতে পারে।
  6. এসিড রিফ্লাক্স (Acid Reflux):
    • পেটের এসিড যদি খাদ্যনালীতে উঠে আসে, তাহলে গলার অংশে সংক্রমণ সৃষ্টি হতে পারে, যা কড়াগলার কারণ হতে পারে।
  7. এয়ার পলিউশন:
    • দূষিত বাতাস, গ্যাস বা অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানও কণ্ঠনালির প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

কড়াগলার লক্ষণ:

  1. কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন (Hoarseness):
    • কণ্ঠস্বর খুশখুশ বা ভাঙা হয়ে যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কণ্ঠস্বর সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতে পারে।
  2. গলা ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • গলায় ব্যথা, খুশখুশ অনুভূতি বা কণ্ঠনালিতে চাপ অনুভূত হতে পারে।
  3. গলা পরিষ্কার করতে চাওয়া:
    • কণ্ঠনালি প্রদাহের কারণে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু এতে তেমন উপকার হয় না।
  4. কাঁপুনির অনুভূতি বা জ্বর:
    • যদি প্রদাহ ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল কারণে হয়ে থাকে, তবে জ্বর ও কাঁপুনির অনুভূতি থাকতে পারে।
  5. শ্বাস কষ্ট:
    • কিছু ক্ষেত্রে কণ্ঠনালি প্রদাহ শ্বাসে কষ্ট তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে।
  6. গলা শুষ্কতা:
    • গলায় শুষ্কতা, জ্বালাপোড়া বা গলা ভেঙে যাওয়ার অনুভূতি থাকতে পারে।

কড়াগলার প্রতিকার:

  1. গলা বিশ্রাম (Voice Rest):
    • কণ্ঠনালি বা গলা যাতে পুনরুদ্ধার হতে পারে, সেজন্য অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। যতটা সম্ভব কণ্ঠ ব্যবহার কম করুন।
  2. পানি তরল পান করুন:
    • পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং গরম তরল (যেমন গরম চা, মধু ও লেবু) পান করতে পারেন। এটি গলার শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করবে।
  3. গরম সেঁক বা স্টিম নেওয়া:
    • গলার আরাম পেতে গরম পানি দিয়ে ভাপ নেওয়া বা গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে। এটি কণ্ঠনালিকে শিথিল করতে সাহায্য করবে।
  4. ধূমপান পরিহার করুন:
    • ধূমপান কণ্ঠনালির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, সুতরাং ধূমপান বন্ধ করুন।
  5. গলা পরিষ্কার করতে চেষ্টা করুন:
    • গলা পরিষ্কার করতে বা সর্দি কমাতে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করতে পারেন। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
  6. এয়ার হিউমিডিফায়ার ব্যবহার:
    • শুষ্ক পরিবেশে গলা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাই ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
  7. ওষুধ:
    • প্রদাহ কমানোর জন্য কিছু সাধারণ অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন) সেবন করতে পারেন। তবে ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
  8. মধু বা আদা:
    • মধু ও আদা গলার প্রদাহ কমাতে সহায়ক। গরম পানিতে মধু বা আদা মিশিয়ে পান করলে এটি আরাম প্রদান করতে পারে।
  9. অ্যালার্জি ওষুধ:
    • যদি অ্যালার্জি কারণে কণ্ঠনালি প্রদাহ হয়, তবে অ্যালার্জির ওষুধ (অ্যান্টিহিস্টামিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।
  10. ডাক্তারের পরামর্শ:
    • যদি কণ্ঠনালি প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর লক্ষণ থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। বিশেষ করে যদি প্রদাহের কারণে কণ্ঠস্বর না আসে বা শ্বাসে সমস্যা হয়।

সতর্কতা:

  • যদি কণ্ঠনালি প্রদাহ তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলে, অথবা যদি কণ্ঠস্বর হারানোর সাথে সাথে গলায় ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কড়াগলা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এবং যথাযথ চিকিৎসা ও বিশ্রাম দিয়ে সহজেই সেরে যায়। তবে যদি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর সমস্যা হয়ে থাকে, তবে তা চিকিৎসকের নজরদারি প্রয়োজন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *