আক্কেল দাঁত কি,কারন,লক্ষন ,প্রতিকার

আক্কেল দাঁত (Wisdom Teeth) হলো মানুষের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে মাড়িতে ভেসে ওঠা দাঁতগুলো, যা সাধারণত শেষদিকের দুইটি বা চারটি দাঁত হিসেবে আসে। এটি সাধারণত সবচেয়ে পরে ওঠে এবং অনেকের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

আক্কেল দাঁতের (Wisdom Teeth) কারণ:

আক্কেল দাঁতের জন্মগ্রহণের প্রধান কারণ হলো মানুষের বিকাশে দেহের প্রাকৃতিক পরিবর্তন। এই দাঁতগুলো মাড়ির পেছনে বা খুব শেষের দিকে ওঠে, এবং প্রাচীন কালেও এসব দাঁত মানবজাতির জন্য উপকারী ছিল কারণ তখনকার খাবার শক্ত বা কাঁচা ছিল। তবে এখন মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হওয়ায়, আক্কেল দাঁত সাধারণত অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে এবং প্রায়ই সমস্যা সৃষ্টি করে।

আক্কেল দাঁতের (Wisdom Teeth) লক্ষণ:

1. মাড়িতে ব্যথা বা অস্বস্তি: আক্কেল দাঁত উঠতে শুরু করলে মাড়িতে ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। এটি দাঁতের এলাইনমেন্টে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
2. মাড়ির ফুলে যাওয়া: আক্কেল দাঁত উঠতে গিয়ে মাড়ির চারপাশে ফোলা এবং লাল হয়ে যেতে পারে। কিছু মানুষ এতে কাঁপুনি বা জ্বর অনুভব করে।
3. মুখে খোলার সময় অস্বস্তি: আক্কেল দাঁত উঠতে গেলে অনেক সময় মুখ খুলতে বা কথা বলতে অস্বস্তি হয়, বিশেষ করে যদি দাঁতটি সঠিকভাবে না ওঠে।
4. শিরা বা গলায় ব্যথা: কখনও কখনও আক্কেল দাঁতের ব্যথা গলা বা শিরায় ছড়িয়ে যেতে পারে, যা সাধারণত অন্য রোগের সাথে মিলে যেতে পারে।
5. মুখের খারাপ গন্ধ: দাঁত ওঠার সাথে সাথে সংক্রমণ হওয়া বা খাদ্য আটকে যাওয়ার কারণে খারাপ গন্ধ বা স্বাদ অনুভূত হতে পারে।
6. শিরায় চাপ অনুভূতি: আক্কেল দাঁতের উপরে চাপ অনুভূত হলে মাড়ি সংক্রান্ত ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
7. গলার ও মুখের মাংসপেশি টান ধরার মতো অনুভূতি: আক্কেল দাঁত উঠতে গিয়ে গলার মাংসপেশি বা মুখের পেশি কিছুটা টান ধরতে পারে।

আক্কেল দাঁতের (Wisdom Teeth) প্রতিকার:

1. গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা: আক্কেল দাঁত ওঠার কারণে মাড়িতে ব্যথা হলে গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা উপকারী হতে পারে। এটি ব্যথা কমাতে এবং প্রদাহ প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
2. ব্রাশিং ও ফ্লসিং: নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করতে ব্রাশ এবং ফ্লস ব্যবহার করুন। আক্কেল দাঁত ওঠার সময় মাড়ির চারপাশে খাবার জমতে পারে, যা সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাবার সরিয়ে রাখার জন্য পরিষ্কার রাখতে হবে।
3. ব্যথা উপশমকারী ওষুধ: ব্যথা বা অস্বস্তি কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা বা সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
4. ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়া: মাড়ির প্রদাহ কমানোর জন্য ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। তবে এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হতে হবে।
5. সৌজন্য চিকিৎসা: দাঁতের পরিস্থিতি গুরুতর হলে, বিশেষত যদি দাঁতটি সঠিকভাবে উঠতে না পারে বা মাড়ির মধ্যে আটকে থাকে, তখন ডেন্টিস্টের মাধ্যমে সার্জারি করা হতে পারে। কখনও কখনও আক্কেল দাঁত অপসারণ করতে হয় (Tonsillectomy)।
6. সার্জারির মাধ্যমে দাঁত তোলা: যদি আক্কেল দাঁত পুরোপুরি উঠতে না পারে বা যদি এটি সঠিকভাবে মাড়িতে জায়গা না পায়, তাহলে ডেন্টিস্টের মাধ্যমে এটি অপসারণ করা হতে পারে। এই ধরনের অপারেশনকে বলা হয় টনসিলেকটমি (Wisdom Tooth Extraction)।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

• যদি আক্কেল দাঁত ওঠার সময় খুব বেশি ব্যথা বা সংক্রমণ হয়, কিংবা এটি স্বাভাবিকভাবে উঠে না, তাহলে একজন ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।
• যদি দাঁতটির অবস্থান এমনভাবে থাকে যে এটি দাঁতের এলাইনমেন্ট বা মাড়ির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, তবে ডেন্টিস্ট এটি অপসারণ করার পরামর্শ দিতে পারেন।

আক্কেল দাঁত সাধারণত একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, কিন্তু যদি এটি সমস্যা সৃষ্টি করে বা অস্বস্তি বাড়ায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।