Best Homeo Doctor

শিশুদের দন্ত কালিন পীড়া কি,কারন,লক্ষন ,প্রতিকার

শিশুদের দন্ত কালিন পীড়া (Teething Pain) হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যখন শিশুর দন্ত মাড়ি দিয়ে বের হতে শুরু করে। এই সময় শিশুরা অনেক সময় অস্বস্তি, ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গের শিকার হতে পারে। এটি সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে, তবে কিছু শিশুর ক্ষেত্রে দন্ত উঠতে একটু দেরি হতে পারে বা আগে শুরু হতে পারে।

শিশুদের দন্ত কালিন পীড়ার কারণ:

  • দাঁত ওঠার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া: শিশুদের দন্ত ওঠা একটি প্রাকৃতিক শারীরিক প্রক্রিয়া। যখন শিশুর মাড়ির নিচে দাঁত গজাতে শুরু করে, তখন মাড়ি স্ফীত এবং কোমল হয়ে ওঠে, যা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

শিশুদের দন্ত কালিন পীড়ার লক্ষণ:

  1. মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া:
    • দন্ত ওঠার সময় মাড়ি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং সেখানে কিছুটা শক্ত হয়ে যেতে পারে।
  2. শিশুর অস্বস্তি কান্না:
    • শিশুরা সাধারণত দন্ত ওঠার সময় অস্বস্তি অনুভব করে এবং বারবার কান্না করতে পারে।
  3. ঘাড়, মুখ বা কান এলাকায় ব্যথা:
    • কিছু শিশুর কান, মুখ বা ঘাড়ের পেছনে ব্যথা অনুভব হয়, কারণ দন্ত ওঠা কখনও কখনও সেই অংশের স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে।
  4. খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া:
    • শিশুরা দন্ত ওঠার সময় কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, যার কারণে তারা খেতে বা দুধ পান করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
  5. অতিরিক্ত লালা পড়া (Salivation):
    • দন্ত ওঠার সময় শিশুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে। এটি একটি সাধারণ লক্ষণ, তবে মাঝে মাঝে এটি শিশুর জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
  6. ঘুমের সমস্যাগুলি:
    • শিশুরা দন্ত ওঠার সময় রাতে ঘুমাতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে। ব্যথা বা অস্বস্তি তাদের ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
  7. তাপমাত্রা বৃদ্ধি (ফিভার):
    • দন্ত ওঠার সময়ে কিছু শিশুর হালকা জ্বর বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যদিও খুব বেশি তাপমাত্রা বাড়া বা প্রচণ্ড জ্বর একটি আলাদা সমস্যা হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

শিশুদের দন্ত কালিন পীড়ার প্রতিকার:

  1. মাড়ি ম্যাসাজ করা:
    • শিশুর মাড়ি আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন। আপনার পরিষ্কার আঙুল দিয়ে শিশুর মাড়ির ওপর হালকা চাপ দিলে কিছুটা আরাম হতে পারে।
  2. দাঁত চিবানোর জন্য নিরাপদ টয়:
    • দন্ত ওঠার সময়ে শিশুরা সাধারণত কিছু চিবাতে চায়। এতে মাড়ি আরাম পায়। কিছু সফট টয় বা রিং বিশেষভাবে তৈরি করা হয় যা শিশুর জন্য নিরাপদ, এগুলি তারা চিবাতে পারে।
  3. শীতলতা উপকারি হতে পারে:
    • শিশুর দন্ত ওঠার ব্যথা কমাতে আপনি শিশুর জন্য শীতল রিং বা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা প্রভাব মাড়ির স্ফীতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে টিপসটি নিশ্চিত করুন যে, টিপটি নিরাপদ এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়।
  4. বিষণ্ণ বা অস্বস্তিকর অবস্থায় সন্তুষ্টি প্রদান:
    • শিশুর অস্বস্তি কমাতে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। তার জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করুন এবং তাকে আপনার কাছে রাখুন। কিছু শিশুকে কোলে নেওয়া বা গল্প বলা শান্তি দিতে পারে।
  5. দুধ বা তরল খাওয়ার সময় পিপে বা শীতল পানীয় ব্যবহার করা:
    • দন্ত উঠানোর সময় শিশুকে কিছু ঠান্ডা পানি বা দুধ খাওয়ালে তার মাড়ির ওপর শীতলতা অনুভূত হয়, যা কিছুটা আরাম দিতে পারে।
  6. বিশ্রাম দেওয়া:
    • শিশুদের বিশ্রাম নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
  7. ব্যথানাশক ব্যবহার (শিশুর উপযোগী):
    • যদি শিশুর ব্যথা সহ্য করা কঠিন হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ব্যথানাশক সিরাপ বা ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শিশুর জন্য কোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে পেডিয়াট্রিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  8. দন্ত কালিন বিশেষ পণ্য ব্যবহার:
    • কিছু শখের দন্ত কালিন জেল বা ক্রিমও বাজারে পাওয়া যায় যা শিশুর মাড়ি মাখানোর জন্য নিরাপদ। তবে, এগুলো ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  9. তাপমাত্রা বৃদ্ধি (ফিভার):
    • শিশু যদি দন্ত উঠানোর সময় সামান্য জ্বর অনুভব করে, তবে ঠান্ডা কাপড় বা স্নান ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু, যদি জ্বর বেশি হয় বা ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  10. প্রাকৃতিক হালকা ঝাঁঝালো খাবার:
    • কিছু শিশুকে শীতল বা নরম খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকতে পারে। তবে, খুব শক্ত বা ঝাঁঝালো খাবার এড়িয়ে চলুন যা তাদের জন্য আরামদায়ক নয়।

শেষ কথা:

শিশুদের দন্ত ওঠার সময় কিছু অস্বস্তি ও ব্যথা অনুভব করা একদম স্বাভাবিক। তবে, বাবা-মা বা অভিভাবকদের উচিত শিশুর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া, এবং শিশুকে সঠিকভাবে সাহায্য ও সমর্থন দেওয়া। যদি দন্ত ওঠার সময় অতিরিক্ত সমস্যার সৃষ্টি হয় বা কোনো অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই শিশুর চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *