Best Homeo Doctor

হুপিং কাশি কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

হুপিং কাশি (Whooping Cough), যা পারটুসিস (Pertussis) নামেও পরিচিত, একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা কাশি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার সৃষ্টি করে। হুপিং কাশির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, কাশি চলাকালে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং এরপর এক ধরনের “হুপিং” (হালকা শ্বাস বা গলা ফাটানো মতো শব্দ) হয়, যেটি রোগীর কাশি শেষ হওয়ার পর শ্বাস নিতে গিয়ে শোনা যায়। এটি বিশেষত শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, তবে বড়দেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হুপিং কাশির কারণ:

হুপিং কাশি মূলত বোরডেটেলা পারটুসিস (Bordetella pertussis) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। এই ব্যাকটেরিয়া শ্বাসনালীতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে, ফলে কাশি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হয়। এই ব্যাকটেরিয়া শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে সহজেই ছড়াতে পারে, বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে।

হুপিং কাশির প্রধান কারণগুলো:

  1. বোরডেটেলা পারটুসিস ব্যাকটেরিয়া: এই ব্যাকটেরিয়া প্রধানত শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায় এবং কাশি বা শ্বাস নিতে কষ্ট সৃষ্টি করে।
  2. সংক্রমিত ব্যক্তির মাধ্যমে: এই রোগটি প্রধানত আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে নির্গত ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়।
  3. ভ্যাকসিন না নেয়া: যারা পারটুসিস ভ্যাকসিন (ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, এবং পারটুসিসের (DTP) টিকা) নেয়নি, তারা সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

হুপিং কাশির লক্ষণ:

হুপিং কাশি সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. হালকা সর্দি কাশি: প্রথমে সাধারণ সর্দি এবং খুশখুশ কাশি দেখা দেয়।
  2. শ্বাস নিতে কষ্ট: কাশির সাথে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, বিশেষত যখন কাশি খুব তীব্র হয়।
  3. হুপিং শব্দ: কাশি শেষ হওয়ার পর শ্বাস নেয়ার সময় এক ধরনের হালকা “হুপিং” (যেমন গলা ফাটানো শব্দ) শোনা যায়।
  4. পানি বা খাবার খেতে সমস্যা: কাশি এত তীব্র হতে পারে যে রোগী পানি বা খাবার খেতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে।
  5. ক্লান্তি দুর্বলতা: কাশি ও শ্বাসকষ্টের কারণে শরীর দুর্বল হতে পারে, রোগী ক্লান্তি অনুভব করতে পারে।
  6. ভীষণ কাশি: বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাশি এত তীব্র হতে পারে যে এটি বমি বা শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
  7. শিশুদের জন্য বিপজ্জনক: শিশুদের জন্য হুপিং কাশি খুবই বিপজ্জনক হতে পারে এবং এটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বা নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

হুপিং কাশির প্রতিকার:

হুপিং কাশি প্রাথমিকভাবে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ায়, এর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়। তবে এটি চিকিৎসা না হলে কিছু গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। কিছু সাধারণ প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:

  1. অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি: অ্যাজিথ্রোমাইসিন বা এরিিথ্রোমাইসিন (Azithromycin or Erythromycin) এর মতো অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত হুপিং কাশির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
  2. ভ্যাকসিন:
    • ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, এবং পারটুসিস ভ্যাকসিন (DTP): হুপিং কাশি প্রতিরোধে এই টিকা খুবই কার্যকরী। শিশুদের জন্য এটি ২, ৪, ৬, ১৫-১৮ মাস এবং ৪-৬ বছর বয়সে দেওয়া হয়। বড়দের জন্যও রি-ভ্যাকসিনেশন প্রয়োজন হতে পারে।
  3. পানি তরল গ্রহণ: রোগীকে পর্যাপ্ত পানি এবং তরল খাবার দেওয়া উচিত যাতে শরীরে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং কাশি কমে।
  4. কাশি কমাতে সহায়ক ঔষধ: কিছু ক্ষেত্রে, কাশির জন্য বিশেষ ঔষধ ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন কাশি শামক সিরাপ বা ডিকনজেস্ট্যান্টস, তবে এগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।
  5. শ্বাস নেয়ার সহায়ক থেরাপি: শ্বাস নেয়ার সমস্যা হলে, ইনহেলার বা বাষ্প থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে শ্বাসযন্ত্রে আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং কাশি কমে।
  6. বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম: হুপিং কাশি আক্রান্ত রোগীর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।
  7. গরম স্যুপ পুষ্টিকর খাবার: রোগীকে হালকা খাবার যেমন স্যুপ, ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত যা তাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করবে এবং কাশির ফলে শরীরে ক্ষতি কমাবে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  1. ভ্যাকসিনেশন: হুপিং কাশি প্রতিরোধে পারটুসিস (DTP) ভ্যাকসিন গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত শিশুদের জন্য। এটি রোকে বা সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ কমিয়ে দেয়।
  2. পরিষ্কার হাত ধোয়া: যে কোনও শ্বাসজনিত রোগ বা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  3. সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা: হুপিং কাশি রোগীকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা রাখা উচিত, বিশেষত শিশুদের এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে।
  4. মাস্ক পরা: আক্রান্ত ব্যক্তি বা রোগীকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে সংক্রমণ না ছড়ায়।

হুপিং কাশি একটি গুরুতর রোগ হতে পারে, তাই যথাসময়ে চিকিৎসা নেওয়া এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *