Best Homeo Doctor

হার্পিস কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

হার্পিস (Herpes) একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা মানব শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে। হার্পিস সাধারণত ত্বক বা মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এবং এর দুটি প্রধান ধরন হল হার্পিস সিম্পলক্স ভাইরাস (HSV-1) এবং হার্পিস সিম্পলক্স ভাইরাস (HSV-2)

হার্পিসের কারণ:

  1. হার্পিস সিম্পলক্স ভাইরাস (HSV):
    • HSV-1 সাধারণত মুখমণ্ডলে (মুখের আশপাশে, ঠোঁটের চারপাশে, মুখগহ্বরে) সংক্রমণ সৃষ্টি করে, এবং সাধারণত ঠোঁটের ফুসকুড়ি বা ঠোঁটের হার্পিস (cold sores) হিসেবে পরিচিত।
    • HSV-2 সাধারণত যৌনাঙ্গের (জেনিটাল) অংশে সংক্রমণ সৃষ্টি করে, যা সাধারণত যৌন সংক্রামক রোগ হিসেবে পরিচিত।
  2. অবস্থান সংক্রমণ:
    • এই ভাইরাস সাধারণত ত্বকের মাধ্যমে বা মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়, যা মুখ, যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অংশে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
    • যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে HSV-2 সাধারণত সংক্রমিত হয়, তবে HSV-1-ও যৌনমুখী সংক্রামক হতে পারে, বিশেষ করে মুখ থেকে যৌনাঙ্গে সংক্রমণ ঘটলে।
  3. বিশেষত্ব:
    • একবার আক্রান্ত হলে, হার্পিস ভাইরাস শরীরে স্থায়ীভাবে থাকতে পারে এবং পুনরায় সক্রিয় হতে পারে যখন শরীর দুর্বল বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

হার্পিসের লক্ষণ:

  1. ঠোঁটে ফুসকুড়ি বা ব্লিস্টার:
    • HSV-1-এর সংক্রমণে সাধারণত ঠোঁটে ছোট ছোট ফুসকুড়ি (cold sores) বা ছোট ছোট ফোস্কা দেখা যায়, যা ব্যথাযুক্ত হতে পারে।
  2. যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি বা ্যাশ:
    • HSV-2 সংক্রমণ হওয়ার পর, যৌনাঙ্গের চারপাশে বা পেটে র‍্যাশ, ফুসকুড়ি বা ক্ষত দেখা দিতে পারে।
  3. ব্যথা জ্বালাপোড়া:
    • আক্রান্ত এলাকায় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে, বিশেষত যখন ফুসকুড়ি বের হয়।
  4. জ্বর, সর্দিকাশি শরীর ব্যথা:
    • হার্পিস সংক্রমণের সময় সাধারণত শরীরের অন্য অংশেও অসুস্থতা দেখা দিতে পারে, যেমন জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ইত্যাদি।
  5. লিম্ফ নোডের বৃদ্ধি:
    • হার্পিস সংক্রমণের ফলে নিকটবর্তী লিম্ফ নোডে (যেমন গলার নোড) ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  6. অস্বস্তি বা চুলকানি:
    • ফুসকুড়ি বা ক্ষত হওয়ার আগেই আক্রান্ত স্থানে অস্বস্তি বা চুলকানির অনুভূতি হতে পারে।

হার্পিসের প্রতিকার:

  1. এন্টিভাইরাল চিকিৎসা:
    • হার্পিসের জন্য সাধারণত এন্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন এসিক্লোভির (Acyclovir), ভালাসিক্লোভির (Valacyclovir) বা ফামসিক্লোভির (Famciclovir)। এই ওষুধগুলো ভাইরাসের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং লক্ষণগুলো কমাতে সহায়তা করে।
    • যদিও এন্টিভাইরাল চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে ভাইরাসটি নির্মূল করতে পারে না, তবে তা ভাইরাসের বিস্তার এবং পুনরাবৃত্তির সংখ্যা কমাতে সহায়তা করে।
  2. ব্যথা কমানোর জন্য পেইনকিলার:
    • আক্রান্ত স্থানে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় পেইনকিলার ব্যবহার করা যেতে পারে।
  3. গরম বা ঠান্ডা সেঁক:
    • ফুসকুড়ি বা ক্ষতের জায়গায় গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া ব্যথা বা অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  4. প্রতিষেধক ব্যবস্থা:
    • হার্পিস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে, সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত যেমন:
      • যৌন সম্পর্কের সময় কনডম ব্যবহার করা।
      • সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক বা অন্যান্য শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।
      • ঠোঁটের হার্পিস থাকলে মুখে হাত না দেওয়া এবং কাউকে ছোঁয়া থেকে বিরত থাকা।
  5. ভিটামিন সি এবং :
    • সঠিক পুষ্টির মাধ্যমে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এর ব্যবহার হার্পিসের লক্ষণ হালকা করতে সহায়তা করতে পারে।
  6. স্ট্রেস কমানো:
    • হার্পিস পুনরায় সক্রিয় হতে পারে যখন শরীর মানসিক বা শারীরিক চাপের মধ্যে থাকে, তাই স্ট্রেস কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  7. হরমোনাল পরিবর্তন মোকাবিলা:
    • গর্ভাবস্থা বা অন্যান্য হরমোনাল পরিবর্তনও হার্পিসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। এতে যদি সমস্যা হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার:

হার্পিস একটি সাধারণ ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা জীবনে একাধিকবার হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে হার্পিসের প্রভাব কমানো সম্ভব। তবে, এই ভাইরাসের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব না হলেও, চিকিৎসা ও যত্নে পুনরাবৃত্তি এবং লক্ষণগুলো হ্রাস করা যায়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *