Best Homeo Doctor

হার্ট অ্যাটাক কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack), যার চিকিৎসা পরিভাষায় মাইocardial Infarction বলা হয়, হলো হৃদপিণ্ডের একটি গুরুতর অবস্থার কারণে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই পরিস্থিতিতে, হৃদপিণ্ডের কোনও একটি অংশের পেশী রক্ত সরবরাহ না পাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি অচল বা মৃত হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক সাধারণত যখন করোনারি আর্টারি (হৃদযন্ত্রের রক্তনালী) সংকুচিত বা ব্লক হয়ে যায়, তখন হয়। এর ফলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ:

১. এথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis):

  • এটি হলো একটি রোগ যেখানে ধমনির দেয়ালে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমে গিয়ে রক্তনালী সংকুচিত বা ব্লক হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে প্লাক বলা হয়। যদি এই প্লাকটি ভেঙে যায় এবং রক্তনালীতে থ্রম্ব (রক্তজমাট) সৃষ্টি করে, তবে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

২. রক্তচাপ বৃদ্ধি (High Blood Pressure):

  • উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন ধমনির দেয়ালে চাপ তৈরি করে এবং এর ফলে ধমনির ক্ষতি হতে পারে। এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. হার্টের বিভিন্ন রোগ (Heart Conditions):

  • হার্ট ফেইলিউর (Heart Failure), এঙ্গিনা (Angina), বা হার্টের অন্য কোনও অসুস্থতা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৪. ধূমপান (Smoking):

  • ধূমপান রক্তনালীর প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া ধূমপান রক্তচাপও বাড়াতে পারে।

৫. অতিরিক্ত মদ্যপান (Excessive Alcohol Consumption):

  • মদ্যপান হৃদযন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর এবং এটি রক্তচাপ বাড়ায়, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

৬. অতিরিক্ত কোলেস্টেরল (High Cholesterol):

  • রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ফ্যাটি পদার্থ জমা হলে এটি ধমনির মধ্যে ব্লক সৃষ্টি করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

৭. অতিরিক্ত শারীরিক চাপ বা মানসিক চাপ (Excessive Physical or Emotional Stress):

  • মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে হার্টের উপর চাপ পড়ে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৮. ডায়াবেটিস (Diabetes):

  • ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কারণ এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে।

৯. অধিক ওজন বা স্থূলতা (Obesity):

  • বেশি ওজন বা স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

১০. বংশগত কারণ (Genetic Factors):

  • যদি আপনার পরিবারের মধ্যে হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তবে আপনারও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি হতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ:

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে আলাদা হতে পারে, তবে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়:

  1. বুকের মাঝখানে তীব্র বা চাপানো ব্যথা (Chest Pain or Pressure):
    • বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা বা চাপ অনুভূতি, যা কিছুক্ষণের জন্য স্থায়ী হতে পারে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে পারে।
    • কখনও কখনও এটি বুকের বাঁ পাশে বা উর্ধ্বতন অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে, যেমন বাহু, পিঠ, ঘাড় বা থুতনি পর্যন্ত।
  2. শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath):
    • হার্ট অ্যাটাকের সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। কিছু ব্যক্তির জন্য শ্বাসকষ্ট আগে থেকেই শুরু হতে পারে।
  3. ঘামানো (Sweating):
    • অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা ঘাম বা ঘাম প্রচুর হতে পারে।
  4. মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা (Dizziness or Lightheadedness):
    • হার্ট অ্যাটাকের সময় মাথা ঘোরা বা অস্বস্তির অনুভূতি হতে পারে।
  5. হৃদস্পন্দন দ্রুত বা অস্বাভাবিক (Rapid or Irregular Heartbeat):
    • হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃদযন্ত্রের স্পন্দন দ্রুত বা অস্বাভাবিক হতে পারে।
  6. অতিরিক্ত ক্লান্তি (Extreme Fatigue):
    • কখনও কখনও খুব বেশি ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভূত হতে পারে, বিশেষত নারীদের মধ্যে।
  7. বমি বা বমির অনুভূতি (Nausea or Vomiting):
    • হার্ট অ্যাটাকের কিছু ক্ষেত্রে বমি বা বমির অনুভূতি হতে পারে।
  8. চোখে ঝাপসা দেখা বা অস্বস্তি (Blurred Vision or Discomfort):
    • কিছু মানুষ হার্ট অ্যাটাকের সময় চোখে ঝাপসা দেখা বা অস্বস্তির অনুভূতি পেতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের প্রতিকার:

হার্ট অ্যাটাকের প্রতিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে কিছু প্রতিকার রয়েছে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে:

  1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (Healthy Diet):
    • লোকোলেস্টেরল (Low-Cholesterol), লোফ্যাট (Low-Fat), এবং লোসোডিয়াম (Low-Sodium) খাদ্যগ্রহণ করা উচিত।
    • তাজা ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং পুরো শস্য খাদ্য বেশি খাওয়া উচিত।
  2. নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ (Regular Physical Activity):
    • নিয়মিত ব্যায়াম হার্টের জন্য উপকারী। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের শারীরিক কার্যকলাপ করা উচিত।
    • দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকার পরিবর্তে শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধির চেষ্টা করা উচিত।
  3. ধূমপান পরিহার (Quit Smoking):
    • ধূমপান রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান পরিহার করা জরুরি।
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণ (Weight Control):
    • অতিরিক্ত ওজন কমানো এবং সঠিক শারীরিক ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। স্থূলতা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  5. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ (Blood Pressure Control):
    • উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ, তাই রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে হবে।
  6. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ (Cholesterol Management):
    • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কোলেস্টেরল কমানো প্রয়োজন।
  7. মানসিক চাপ কমানো (Stress Management):
    • অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থেকে বিরত থাকতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করা যেতে পারে।
  8. যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ (Proper Medication):
    • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল সমস্যার চিকিৎসা যথাযথভাবে করা উচিত। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
  9. ডাক্তারের নিয়মিত চেকআপ (Regular Checkups):
    • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। বিশেষত উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন:

  • বুকের ব্যথা বা চাপ অনুভব হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • যদি শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, অস্বস্তি বা অতিরিক্ত ঘাম হয়।
  • যদি আপনার পরিবারের মধ্যে হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তবে নিয়মিত হৃদরোগের পরীক্ষা করা উচিত।

হার্ট অ্যাটাক খুবই গুরুতর অবস্থা এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *