হাম (Measles) একটি খুবই সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে বড়দের মধ্যেও এটি হতে পারে। হাম রোগটি মেজলস ভাইরাস (Measles virus) দ্বারা হয়, এবং এটি সাধারণত শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়। হাম প্রায়শই ত্বকে লাল রঙের র্যাশ বা ফুসকুড়ি, কাশি, সর্দি, চোখের প্রদাহ, এবং জ্বরের লক্ষণ নিয়ে উপস্থিত হয়। এই রোগটি খুবই সংক্রামক, এবং এর মাধ্যমে শরীরে অসুস্থতা, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে, অনেক সময় গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
হাম এর কারণ:
- মেজলস ভাইরাস: হাম মূলত মেজলস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই ভাইরাসটি রেসপিরেটরি (শ্বাসতন্ত্র) মাধ্যমে ছড়ায়, যেমন: আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বা নাকের স্রাবের মাধ্যমে।
- ভাইরাসের সংক্রমণ: মেজলস ভাইরাস একে অপরের কাছে খুব সহজেই ছড়ায়, এবং একটি আক্রান্ত ব্যক্তি আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্যদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- অবিশ্বাস বা ভ্যাকসিনের অভাব: যদি একটি শিশুকে মেজলসের জন্য যথাযথ ভ্যাকসিন (MMR – Measles, Mumps, Rubella) না দেওয়া হয়, তবে তাদের হাম হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
হাম এর লক্ষণ:
হাম সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার ১০ থেকে ১২ দিন পরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- জ্বর: হাম সাধারণত খুব তীব্র জ্বরের সাথে শুরু হয়, যা দিন-দিন বাড়তে থাকে।
- র্যাশ (ফুসকুড়ি): হাম রোগের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হলো ত্বকে লাল র্যাশের সৃষ্টি। এই র্যাশ প্রথমে মাথা, গলা এবং মুখে দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে গা এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। র্যাশের সাথে চুলকানি বা ব্যথা থাকতে পারে।
- কাশি এবং সর্দি: হাম রোগে সাধারণত শুকনো কাশি, সর্দি এবং নাক দিয়ে স্রাব দেখা দেয়।
- চোখে প্রদাহ: চোখ লাল হয়ে যাওয়া এবং কনজাংটিভাইটিস (চোখের প্রদাহ) হতে পারে, যা চোখে অস্বস্তি এবং জল পড়তে পারে।
- মুখের মধ্যে ছোট ছোট সাদা দানা (Koplik spots): হাম আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের মধ্যে ছোট সাদা বা ধূসর দানা দেখা যেতে পারে, যা Koplik spots নামে পরিচিত। এই দানা বিশেষত দাঁতের কাছে দেখতে পাওয়া যায় এবং এটি হাম রোগের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষণ।
- শরীরের দুর্বলতা: হাম আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দুর্বলতা, অবসাদ, এবং সামগ্রিক অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- বিভিন্ন সায়ম্পটমস: কিছু সময় গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, অথবা পাতলা ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে।
হাম এর প্রতিকার:
- ভ্যাকসিন (MMR): হাম থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো MMR ভ্যাকসিন। এটি মেজলস, মাম্পস এবং রুবেলা (Rubella) তিনটি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- প্রথম ডোজ ১২-১৫ মাস বয়সে
- দ্বিতীয় ডোজ ৪-৬ বছর বয়সে
- বাধ্যতামূলক বিশ্রাম: হাম আক্রান্ত ব্যক্তি ভালো করে বিশ্রাম নিলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। জ্বর এবং অন্যান্য উপসর্গ কমাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- দ্রুত চিকিৎসা: হাম সাধারণত নিজেই সেরে যায়, তবে রোগীকে প্রতি ঘণ্টায় পর্যাপ্ত পানি পান করানো, জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার এবং কাশি বা সর্দি কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিক নয়: হাম একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। তবে যদি সংক্রমণ বা অন্য কোনও বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করবেন।
- কনট্যাজিয়াস (সংক্রামক) থেকে বিরত থাকা: হাম খুব সহজেই ছড়ায়, তাই আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে এবং নিজেকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। অন্তত ৪ দিন রোগের র্যাশের শুরু হওয়ার পর পর্যন্ত আলাদা থাকা উচিত।
- কপ্লিক স্পটের উপস্থিতি: যদি আপনার শিশুর মুখে Koplik spots দেখা যায়, তবে তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত।
সতর্কতা:
- ভ্যাকসিনেশন: হাম থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল ভ্যাকসিনেশন। এটি রোগের প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং মহামারী প্রতিরোধে সহায়ক।
- হাম রোগ খুবই সংক্রামক, তাই আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।
উপসংহার:
হাম একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা খুব সহজে ছড়ায় এবং এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, র্যাশ, কাশি, সর্দি, এবং চোখে প্রদাহ। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিনেশন এর মাধ্যমে হাম প্রতিরোধ করা সম্ভব।