হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে রক্ত জমে যাওয়া একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে এবং এর জন্য দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। এটি সাধারণত মূত্রাশয়ের (urinary bladder) সমস্যা বা পেশীর সমস্যা, বা প্রস্রাবের নালী বা কিডনির কোনো সমস্যার কারণে ঘটে। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নির্ণয় বা প্রতিকার করা সম্ভব নয়। তবে এখানে কিছু সাধারণ কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কারণ:
১. প্রস্রাবের পথে ব্লক বা বাধা:
- মূত্রাশয়ের পাথর (Urinary stones): মূত্রাশয়ে পাথর বা পাথরের টুকরা আটকে গেলে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং রক্তপাতও হতে পারে।
- প্রোস্টেট সমস্যা (Prostate issues): পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি বা সমস্যা (যেমন BPH বা প্রোস্টেট ক্যান্সার) মূত্রাশয়ের ব্লকেজ তৈরি করতে পারে।
- মূত্রনালীতে সংক্রমণ বা ফোলা (Urinary tract infection, UTI): মূত্রনালীতে সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং রক্তও থাকতে পারে।
- কিডনি সমস্যা:
- কিডনির পাথর (Kidney stones): কিডনিতে পাথর থাকলে প্রস্রাবে রক্ত যেতে পারে এবং প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে।
- কিডনির ইনফেকশন (Kidney infection): কিডনির প্রদাহ বা ইনফেকশনও প্রস্রাবে রক্ত এবং প্রস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা:
- কোলন বা মলাশয়ের সমস্যাও কখনও কখনও প্রস্রাবে রক্ত আনতে পারে এবং মূত্রাশয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- ট্রমা বা আঘাত:
- কোনো দুর্ঘটনা বা আঘাতের কারণে মূত্রাশয়ের বা কিডনির ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে প্রস্রাবে রক্ত পড়তে পারে।
- ফেসিক্যাল ব্লাড ক্লটিং ডিসঅর্ডার:
- কখনও কখনও কিছু রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা (clotting disorders) বা রক্তের অসুস্থতা, যেমন থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, রক্ত জমাট বাধার কারণে প্রস্রাবে রক্ত জমা হতে পারে।
লক্ষণ:
- প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া: হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে, যদিও প্রস্রাব করতে ইচ্ছা হয়।
- প্রস্রাবে রক্ত: রক্তের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে যা প্রস্রাবে মিশে বা ফোঁটা ফোঁটা আকারে বের হতে পারে।
- পেটে বা পিঠে ব্যথা: কিডনি বা মূত্রাশয়ের সমস্যা থাকলে পেটে বা পিঠে ব্যথা হতে পারে।
- বমি বা ঘুরাঘুরি অনুভূতি: যদি কিডনি বা মূত্রাশয়ে সমস্যা হয়, তখন বমি বা মাথা ঘুরানো অনুভূতি হতে পারে।
- থাকা বা শ্বাসকষ্ট: রক্ত জমে যাওয়ার কারণে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন শ্বাসকষ্ট বা দুর্বলতা।
প্রতিকার:
- দ্রুত চিকিৎসা: এই ধরনের সমস্যা ঘটলে দ্রুত একজন ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রস্রাবের সমস্যার ক্ষেত্রে দেরি করা বিপদজনক হতে পারে।
- চিকিৎসা নির্ধারণ:
- ইনফেকশন বা ব্লকেজের চিকিৎসা: যদি এটি ইনফেকশন বা ব্লকেজের কারণে হয়, তবে চিকিৎসক উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা পাথর অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।
- কিডনি সমস্যা বা পাথর: কিডনির পাথর বা অন্য সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার বা মেডিকেশন প্রয়োজন হতে পারে।
- শল্যচিকিৎসা: যদি মূত্রাশয়ে আঘাত বা বড় ধরনের সমস্যা থাকে, তবে শল্যচিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
এছাড়া, অনেক সময় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান করা, এবং প্রস্রাবের নিয়মিত পরীক্ষা এসব সমস্যা এড়াতে সহায়ক হতে পারে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।