Best Homeo Doctor

স্নায়ুশুল কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

স্নায়ুশুল (Neuralgia) হলো স্নায়ু বা নার্ভের ব্যথা, যা সাধারণত অত্যন্ত তীব্র এবং চিরস্থায়ী হতে পারে। এটি স্নায়ু দ্বারা প্রেরিত ব্যথার অনুভূতি, যা শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে অনুভূত হয়। স্নায়ুশুল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এবং এর প্রকৃতি ও তীব্রতা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। 

কারণ:

স্নায়ুশুলের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. স্নায়ু আঘাত (Nerve Injury):
    • স্নায়ুতে আঘাতের ফলে স্নায়ুশুল হতে পারে। সাধারণত, যদি স্নায়ু কোনো দুর্ঘটনা বা আঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তা স্নায়ুশুলের কারণ হতে পারে।
  2. অতিরিক্ত চাপ (Excessive Pressure):
    • শরীরের কোনো অংশে দীর্ঘক্ষণ চাপের ফলে স্নায়ুতে ব্যথা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মেরুদণ্ডে চাপ, বা ঘাড়, কোমর ও পায়ের স্নায়ুর ওপর চাপ পড়লে স্নায়ুশুল হতে পারে।
  3. ইনফেকশন (Infection):
    • ভাইরাল সংক্রমণ (যেমন শিংগলস) বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ফলে স্নায়ুশুল সৃষ্টি হতে পারে। শিংগলস এক ধরনের ভাইরাল সংক্রমণ যা স্নায়ুর সংক্রমণ ঘটায় এবং তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  4. ডায়াবেটিস (Diabetes):
    • ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে শর্করার উচ্চমাত্রার কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা স্নায়ুশুল সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের শুলকে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বা পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বলা হয়।
  5. অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis):
    • জয়েন্টে অস্টিওআর্থ্রাইটিস থাকার কারণে স্নায়ুতে চাপ পড়লে স্নায়ুশুল হতে পারে। বিশেষ করে, মেরুদণ্ডের কাঁটা বা ঘাড়ের স্নায়ু চাপের কারণে ব্যথা সৃষ্টি হয়।
  6. টিউমার (Tumor):
    • কখনও কখনও, স্নায়ুর ওপর টিউমারের চাপ পড়লে স্নায়ুশুল হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত স্নায়ুর আঘাত বা উত্তেজনার কারণে হয়।
  7. ভিটামিনের অভাব (Vitamin Deficiency):
    • বিশেষ করে ভিটামিন B12-এর অভাব হলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা স্নায়ুশুলের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  8. মস্তিষ্কের বা মেরুদণ্ডের রোগ (Brain or Spinal Disorders):
    • মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে কোনো অস্বাভাবিকতা বা রোগ (যেমন সেপটিক নিউরাইটিস, মাইলোফাইব্রোসিস ইত্যাদি) স্নায়ুশুল সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

স্নায়ুশুলের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. তীব্র বা ঝাপটানো ব্যথা (Sharp or Shooting Pain):
    • স্নায়ুশুলের প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র বা ঝাপটানো ব্যথা, যা সাধারণত শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে অনুভূত হয়। এটি অতিরিক্ত তীব্র হতে পারে এবং অসহনীয় হতে পারে।
  2. তীব্র পীড়ন বা জ্বালা (Severe Burning or Tingling Sensation):
    • অনেক সময় স্নায়ুশুলে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালা বা চিমটি কাটানোর মতো অনুভূতি হতে পারে।
  3. অস্বাভাবিক অনুভূতি (Abnormal Sensations):
    • স্নায়ুশুলের ক্ষেত্রে, কখনও কখনও অনুভূতি পরিবর্তিত হয় এবং আক্রমণাত্মক বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ অনুভূতি হতে পারে, যেমন শীতলতা বা পিপঁড়ে চলার মতো অনুভূতি।
  4. অনুভূতির অভাব (Numbness or Loss of Sensation):
    • স্নায়ুশুলের ফলে কিছু সময় নির্দিষ্ট জায়গায় অনুভূতির অভাব বা অবশত্ব অনুভূতি হতে পারে। এই অবস্থা সাধারণত হাত বা পায়ে ঘটে।
  5. কমপক্ষে কিছু কাজ করা কঠিন (Difficulty in Performing Certain Tasks):
    • স্নায়ুশুলের কারণে কিছু কার্যক্রম বা কাজ করা কঠিন হতে পারে। যেমন, হাত বা পা নড়াতে বা কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে অসুবিধা হওয়া।
  6. শরীরের একদিকে ব্যথা (Unilateral Pain):
    • স্নায়ুশুল সাধারণত একদিকে হয়, অর্থাৎ শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে ব্যথা অনুভূত হয়।

প্রতিকার:

স্নায়ুশুলের চিকিৎসার কিছু সাধারণ উপায় হলো:

  1. ওষুধ (Medications):
    • পেইনকিলার (Painkillers): সাধারণত ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন, বা অন্য ধরনের পেইনকিলার ব্যবহার করা হয়।
    • অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (Anti-inflammatory Drugs): ব্যথা এবং প্রদাহ কমানোর জন্য NSAIDs (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs) ব্যবহার করা যেতে পারে।
    • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (Antidepressants): কিছু ধরণের স্নায়ুশুল, যেমন স্নায়ু ব্যথা, অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টস দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
    • অ্যান্টিসেপটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (Antiseptic or Antiviral Drugs): যদি শিংগলস বা কোনো ভাইরাল সংক্রমণের কারণে স্নায়ুশুল হয়, তাহলে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
  2. ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy):
    • স্নায়ু সম্পর্কিত ব্যথা কমানোর জন্য ফিজিওথেরাপি কার্যকর হতে পারে। এটি বিশেষ করে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সহায়ক।
  3. গরম বা ঠাণ্ডা প্যাক (Hot or Cold Compress):
    • গরম বা ঠাণ্ডা প্যাক ব্যবহার করলে স্নায়ুশুলের ব্যথা কিছুটা কমে যেতে পারে। গরম বা ঠাণ্ডা প্যাক স্নায়ুর উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  4. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ (Stress Management):
    • মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে অনেক সময় স্নায়ুশুল বেড়ে যেতে পারে, তাই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
  5. সার্জারি (Surgery):
    • কিছু ক্ষেত্রে যদি স্নায়ু বা অন্যান্য সমস্যার কারণে স্নায়ুশুল গুরুতর হয়ে যায়, তাহলে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে। যেমন, স্নায়ু চেপে ধরা বা কোনো টিউমার সরানো।
  6. ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট (Vitamin and Mineral Supplements):
    • বিশেষ করে ভিটামিন B12 এর অভাব হলে স্নায়ু ব্যথা হতে পারে। এই কারণে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে।

শেষ কথা:

স্নায়ুশুল একটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে এর তীব্রতা কমানো সম্ভব। স্নায়ুশুলের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, যাতে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং স্নায়ু ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *