Best Homeo Doctor

স্তন প্রদাহ কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

স্তন প্রদাহ (Mastitis) হলো স্তনের টিস্যুতে প্রদাহ বা সেলফ ইনফেকশন। এটি সাধারণত স্তনের শিরা বা গ্ল্যান্ডে সংক্রমণের কারণে ঘটে, এবং এই সমস্যাটি প্রায়ই গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যপানরত অবস্থায় দেখা যায়। স্তন প্রদাহের ফলে স্তনে ব্যথা, লালচে ভাব, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

স্তন প্রদাহের কারণ:

  1. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ:
    • স্তন প্রদাহের প্রধান কারণ হলো স্তন থেকে সংক্রমণ। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া (বিশেষত স্ট্যাফিলোকক্কাস) স্তন গ্ল্যান্ডে প্রবেশ করে এবং সেখানে প্রদাহ সৃষ্টি করে। স্তন্যপান বা দুধ বের হওয়ার সময় স্তনে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে যেতে পারে।
  2. স্তন্যপান চলাকালে স্তনে আঘাত:
    • নবজাতক শিশুর স্তন্যপান করার সময় যদি মায়ের স্তনে কোনও আঘাত বা ক্ষত হয়, তবে সেখান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  3. দুধের সঞ্চয় বা অপ্রকাশ:
    • স্তনে দুধ জমে থাকা, বা পর্যাপ্ত স্তন্যপান না হওয়ার কারণে স্তনে দুধের সঞ্চয় হতে পারে। এটি স্তনে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।
  4. স্তন টিস্যুর ক্ষতি বা ফাটল:
    • স্তন বা তার আশপাশের টিস্যুতে ক্ষত বা ফাটল হওয়ার কারণে সেখান থেকে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে সংক্রমণ সৃষ্টি হতে পারে।
  5. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • স্তন প্রদাহের কারণে প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক হরমোনাল পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা প্রদাহ বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
  6. স্তনের ভেতরের ব্লকেজ:
    • কখনো কখনো স্তনের টিউবগুলো ব্লক হয়ে যেতে পারে, যার ফলে স্তনে দুধ সঠিকভাবে বের হতে পারে না এবং সংক্রমণ সৃষ্টি হয়।
  7. ভুল পজিশনে স্তন্যপান করা:
    • যদি শিশুর স্তন্যপান করার সময় পজিশন ঠিক না থাকে বা শিশুর মুখে স্তন ঠিকভাবে না আসে, তাহলে স্তনে দুধ জমে থাকতে পারে এবং প্রদাহ হতে পারে।
  8. স্তন পাম্পের ব্যবহার:
    • স্তন পাম্পের মাধ্যমে স্তন্যপান করতে গেলে যদি পাম্পটি সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে স্তনে আঘাত বা আর্দ্রতা জমে থাকতে পারে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

স্তন প্রদাহের লক্ষণ:

  1. স্তনে ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • স্তনে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি প্রাথমিকভাবে গা dark ়, লালচে বা স্ফীত হতে পারে।
  2. স্তনে লালচে ভাব বা স্ফীততা:
    • স্তনের নির্দিষ্ট অংশে লালচে ভাব দেখা দেয় এবং এটি স্ফীত হয়ে উঠতে পারে।
  3. জ্বর শীতলতা:
    • স্তন প্রদাহের ফলে শরীরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং শীতলতা বা ঠান্ডা লাগার মতো অনুভূতি হতে পারে।
  4. স্তন থেকে দুধের স্রাব:
    • স্তন প্রদাহের কারণে দুধের স্রাব হতে পারে, বিশেষ করে তা পুঁজ বা রক্তে মিশে থাকতে পারে।
  5. স্তনে গাঁট বা স্ফীত অংশ:
    • স্তনে একটি দৃশ্যমান গাঁট বা স্ফীত অংশ তৈরি হতে পারে, যা প্রদাহের কারণে সৃষ্টি হয়।
  6. শক্ত স্তন বা প্রদাহিত অঞ্চল:
    • স্তনের নির্দিষ্ট জায়গায় শক্ত ভাব এবং চাপ অনুভূত হতে পারে।
  7. মুখে স্বাদ পরিবর্তন:
    • স্তন্যপানকারী শিশু যদি মায়ের স্তন থেকে দুধ খায়, তবে মায়ের দুধের স্বাদ পরিবর্তিত হতে পারে, যা শিশুর খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে।

স্তন প্রদাহের প্রতিকার:

  1. প্রাথমিক চিকিৎসা:
    • প্রথমত, স্তন পরিষ্কার রাখা এবং দুধ নিয়মিতভাবে পরিষ্কারভাবে বের করা জরুরি। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  2. গরম সেঁক:
    • স্তনে গরম সেঁক দিলে প্রদাহ কমে যেতে পারে। এটি রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
  3. দুধ সঠিকভাবে বের করা:
    • স্তন্যপান বা স্তন পাম্পের মাধ্যমে দুধ নিয়মিত বের করা উচিত যাতে স্তনে দুধ জমে না থাকে এবং প্রদাহ না হয়।
  4. বিসিরাই (Antibiotics):
    • যদি স্তন প্রদাহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে পারেন। এটি সংক্রমণ দূর করার জন্য সহায়ক।
  5. বিশ্রাম পর্যাপ্ত পানি পান:
    • পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং বেশি পরিমাণে পানি পান করা খুবই জরুরি, যাতে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকে।
  6. ধীর সঠিকভাবে স্তন্যপান:
    • শিশুকে সঠিক পজিশনে রাখার মাধ্যমে স্তন্যপান করানো উচিত যাতে স্তনে দুধ জমে না থাকে এবং ব্যথা কমে যায়।
  7. এলার্জি বা অন্যান্য জটিলতা:
    • যদি স্তন প্রদাহ থেকে আরও গুরুতর সমস্যা যেমন মাংসপেশীর সংক্রমণ বা অ্যাবসেস সৃষ্টি হয়, তবে সার্জারির মাধ্যমে সেটি বের করার প্রয়োজন হতে পারে।
  8. হরমোনাল চিকিৎসা:
    • যদি স্তন প্রদাহ হরমোনের কারণে হয়ে থাকে, তবে হরমোনাল চিকিৎসা বা পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
  9. ব্যথানাশক বা ওষুধ:
    • প্রদাহ এবং ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

উপসংহার:

স্তন প্রদাহ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে এটি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যপান চলাকালীন সময়ে প্রদাহের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই স্তনের প্রতি সঠিক যত্ন নেয়া উচিত। যদি প্রদাহ বাড়ে বা জটিলতা সৃষ্টি হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *