স্তন টিউমার (Breast Tumor) হলো স্তনে গঠিত একটি অস্বাভাবিক গঠন বা স্ফীতি। স্তন টিউমার বেনাইন (benign) বা ম্যালিগন্যান্ট (malignant) হতে পারে। বেনাইন টিউমার সাধারণত অক্ষতির কারণ হয় না, তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ক্যান্সারের দিকে অগ্রসর হতে পারে। স্তন টিউমারের উপসর্গ এবং চিকিৎসা সাধারণত টিউমারের ধরণ এবং অবস্থার উপর নির্ভর করে।
স্তন টিউমারের কারণ:
স্তন টিউমারের জন্য কিছু সাধারণ কারণ হতে পারে:
- হরমোনাল পরিবর্তন:
- মহিলাদের মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের কারণে হরমোনের পরিবর্তন হতে পারে, যা স্তনে টিউমার তৈরি করতে পারে।
- ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণে হরমোনের অস্বাভাবিকতা বা পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
- ফাইব্রোকিস্টিক স্তন পরিবর্তন (Fibrocystic Breast Changes):
- এটি স্তনে সাধারণ পরিবর্তন, যা কেবলমাত্র সিস্ট বা গুটি তৈরি করে এবং সাধারণত বেনাইন (অক্ষতিকর) হয়।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS):
- এই অবস্থা স্তনের টিউমার তৈরির সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, কারণ এতে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
- জন্মনিরোধক পিলের ব্যবহার:
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে জন্মনিরোধক পিল ব্যবহার করলে স্তনে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
- ধূমপান এবং মদ্যপান:
- অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- জীবনযাপন এবং পুষ্টি:
- সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন না করলে স্তন টিউমারের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
- পারিবারিক ইতিহাস:
- যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তবে স্তন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ে।
- বয়স:
- ৪০ বছরের পরে মহিলাদের স্তনে টিউমারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
স্তন টিউমারের লক্ষণ:
- স্তনে গুটি বা স্ফীতি (Lump):
- স্তনে একটি দৃশ্যমান বা অনুভূত গুটি বা স্ফীতি থাকতে পারে, যা অনেক সময় ব্যথাহীন হয়। তবে ক্যান্সারী টিউমারে এটি কঠিন হতে পারে এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
- ব্যথা বা অস্বস্তি:
- স্তন টিউমারটি ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে, তবে অধিকাংশ বেনাইন টিউমার ব্যথাহীন হয়। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে স্তনে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
- ত্বক পরিবর্তন:
- স্তনের ত্বকে রঙ পরিবর্তন, চুলকানি বা লালচে হওয়া দেখা যেতে পারে।
- স্তন থেকে স্রাব:
- স্তন থেকে রক্ত বা অস্বাভাবিক স্রাব (বিশেষ করে, একপাশ থেকে) বের হতে পারে।
- স্তন বা নিপল থেকে রক্তপাত:
- টিউমারটি ক্যান্সার হয়ে থাকলে স্তন বা নিপল থেকে রক্তপাত হতে পারে।
- নিপল অভ্যন্তরীণভাবে গড়িয়ে যাওয়া:
- কিছু স্তন টিউমারের কারণে নিপল আভ্যন্তরীণ দিকে ঢুকে যেতে পারে।
স্তন টিউমারের প্রতিকার:
- চিকিৎসকের পরামর্শ:
- স্তনে কোনো গুটি বা অস্বাভাবিকতা অনুভূত হলে তৎক্ষণাৎ একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক সাধারণত ফিজিক্যাল পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি বা বায়োপসি পরীক্ষার মাধ্যমে টিউমারের ধরন নির্ধারণ করবেন।
- বেনাইন টিউমার:
- ফাইব্রোএডেনোমা বা অন্যান্য বেনাইন টিউমার সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে, অনেক সময় শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ (monitoring) করা হয়, যদি টিউমারটি ঝুঁকিপূর্ণ না হয়।
- ক্যান্সার:
- স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা হরমোনাল থেরাপি চিকিৎসার অংশ হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় সফল চিকিৎসা সম্ভব।
- হরমোনাল থেরাপি:
- হরমোনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসক হরমোন থেরাপি বা জন্মনিরোধক পিল পরিবর্তন করতে পারেন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
- সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, এবং যথেষ্ট ঘুম স্তনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং টিউমারের ঝুঁকি কমায়।
- ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা:
- স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করা উচিত।
- বয়সে স্তন পরীক্ষা:
- ৪০ বছরের উপরে মহিলাদের জন্য নিয়মিত স্তন পরীক্ষা (ম্যামোগ্রাফি) এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
স্তন টিউমার সাধারণত ভীতির কোনো কারণ নয়, বিশেষত যদি তা বেনাইন হয়। তবে স্তন ক্যান্সার অত্যন্ত গুরুতর এবং এর প্রাথমিক লক্ষণগুলির প্রতি সজাগ থাকতে হবে। যদি কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।