স্তন ক্যান্সার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) হচ্ছে স্তনের কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বৃদ্ধি হওয়া ক্যান্সার, যা পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার, যদিও পুরুষদের মধ্যে এটি কম হলেও দেখা যেতে পারে। স্তন ক্যান্সার যখন প্রথমে গঠিত হয়, তখন তা সাধারণত স্তনের শ্বেতকণিকা বা ডাক্টাল কোষ থেকে শুরু হয়।

কারণ:

স্তন ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা না গেলেও কিছু ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে যা স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে:

1. জেনেটিক কারণ: পরিবারে যদি কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকে, তাহলে অন্য সদস্যদেরও এই রোগের ঝুঁকি থাকে। কিছু জিন যেমন BRCA1 এবং BRCA2 স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
2. হরমোনাল প্রভাব: হরমোনের উচ্চমাত্রা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দীর্ঘকাল ধরে ঋতুস্রাব (menstruation) হওয়া বা মেনোপজে যাওয়ার বয়সের বিলম্ব, হরমোনাল থেরাপি ব্যবহারের কারণে এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
3. বয়স: স্তন ক্যান্সার সাধারণত বয়স ৫০ বছরের পর বেশি দেখা যায়।
4. ধূমপান: ধূমপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
5. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং শারীরিকভাবে কম সক্রিয় থাকা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
6. ওজন: বিশেষ করে মেনোপজ পরবর্তী স্থূলতা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
7. রেডিয়েশন এক্সপোজার: অতিরিক্ত এক্সরে বা রেডিয়েশনে এক্সপোজার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।

লক্ষণ:

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে সুপ্ত থাকতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

1. স্তনের মধ্যে গুটি বা স্ফীতির অনুভূতি: স্তনে একটি গুটি বা স্ফীতি অনুভূত হতে পারে যা সাধারণত স্থায়ী এবং সাফ করে ফেললে ফিরে আসে।
2. স্তনের আকার বা আকারের পরিবর্তন: স্তন বা স্তনের আকৃতিতে কোন পরিবর্তন অনুভূত হওয়া বা স্তনের ত্বকে ফোলাভাব আসা।
3. স্তনের ত্বক পরিবর্তন: স্তনের ত্বক শক্ত বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। ত্বকে আঁচল বা কমলাল ভাব আসতে পারে।
4. গলা বা বগলে গুটি অনুভূত হওয়া: গলা বা বগলে লিম্ফ নোডে গুটি বা স্ফীতি অনুভূত হতে পারে।
5. রক্ত মিশ্রিত বা অস্বাভাবিক স্রাব: স্তন থেকে কোন স্রাব বের হলে, বিশেষত রক্ত বা স্রাবের কোনও অস্বাভাবিক গন্ধ থাকলে।
6. বুকের ত্বক বা স্তনের শুষ্কতা: স্তনের ত্বকে শুষ্কতা, লালচে ভাব বা লালচে শীথিলতা দেখা যেতে পারে।
7. ব্যথা বা অস্বস্তি: স্তন বা স্তনের চারপাশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।

প্রতিকার:

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরণ, পর্যায় এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুসারে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি:

1. সার্জারি (অস্ত্রোপচার): ক্যান্সার আক্রান্ত স্তনের অংশ বা সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ করা যেতে পারে। এটি “মাস্টেকটোমি” নামেও পরিচিত।
2. কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য শক্তিশালী ঔষধ ব্যবহার করে। এটি অপারেশনের পরে বা ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়লে ব্যবহৃত হতে পারে।
3. রেডিয়েশন থেরাপি: ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করতে রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হতে পারে, বিশেষত অপারেশনের পর বা কেমোথেরাপির সঙ্গে।
4. হরমোন থেরাপি: যদি স্তন ক্যান্সার হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়, তবে হরমোন থেরাপি করা হতে পারে যা ক্যান্সারের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনকে বাধা দেয়।
5. টার্গেটেড থেরাপি: এই থেরাপিতে ক্যান্সারের কোষের উপর সুনির্দিষ্টভাবে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়, যার মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করা যায়।
6. ইমিউনোথেরাপি: শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করে ক্যান্সারের কোষগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।
7. স্টেম সেল থেরাপি: এটি কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে যেখানে রক্তের শ্বেতকণিকার বৃদ্ধি বা উৎপাদন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

প্রতিরোধ:

স্তন ক্যান্সারের প্রতিরোধের জন্য কিছু ব্যবস্থাও নেয়া যেতে পারে:

1. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
2. ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার: তামাক এবং অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন।
3. স্তন পরীক্ষা: নিয়মিত স্তন স্ব-কানুন পরীক্ষা (Breast Self-Examination) এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্তন স্ক্রীনিং পরীক্ষা (ম্যামোগ্রাফি) করা।
4. হরমোন থেরাপি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা: দীর্ঘ মেয়াদী হরমোনাল থেরাপি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন, বিশেষ করে মেনোপজ পরবর্তী সময়ে।
5. জেনেটিক পরীক্ষা: যদি পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে স্তন ক্যান্সার থাকে, তবে জেনেটিক পরীক্ষা করে ঝুঁকি বুঝে চিকিৎসা নেওয়া।

উপসংহার:

স্তন ক্যান্সার দ্রুত শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী সুস্থ হতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো লক্ষণ বা সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।