Best Homeo Doctor

স্তনে দুধ বেশী হওয়ার কারন,লক্ষন,প্রতিকার

স্তনে দুধ বেশী হওয়া (Hyperlactation) একটি সমস্যা, যখন স্তন থেকে অস্বাভাবিকভাবে বা অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ নিঃসৃত হয়। এটি অনেক মহিলার জন্য অস্বস্তি তৈরি করতে পারে, বিশেষত যদি তা তাদের দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করে।

কারণ:

স্তনে অতিরিক্ত দুধ উৎপাদনের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • প্রোল্যাকটিন হলো সেই হরমোন যা স্তনে দুধ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। যদি প্রোল্যাকটিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তবে স্তনে অতিরিক্ত দুধ উৎপন্ন হতে পারে। এটি হরমোনাল অস্থিরতার কারণে হতে পারে, যেমন থাইরয়েড সমস্যা বা কিছু মেডিকেল অবস্থার কারণে।
  2. অতিরিক্ত স্তনপান:
    • একেবারে প্রথম দিকে, যদি শিশুকে খুব বেশি স্তনপান করানো হয়, তবে স্তনে দুধের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। মায়ের স্তন যদি বার বার খালি না হয়, তবে দুধের উৎপাদন বাড়তে পারে।
  3. যন্ত্রের মাধ্যমে দুধ উত্তোলন:
    • কিছু মায়েরা, বিশেষত যারা পাম্পের মাধ্যমে দুধ বের করেন, তাদের স্তন থেকে অতিরিক্ত দুধ নিঃসৃত হতে পারে, কারণ যন্ত্রের মাধ্যমে দুধ উত্তোলনের ফলে স্তনে স্টিমুলেশন বাড়ে এবং দুধ উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে।
  4. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
    • কিছু ওষুধ, যেমন এন্টিডিপ্রেসেন্ট বা অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ (উচ্চ রক্তচাপের জন্য ব্যবহৃত), স্তনে দুধ উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু প্রোল্যাকটিনের লেভেল বৃদ্ধিকারী ওষুধও এটি করতে পারে।
  5. গর্ভধারণ বা গর্ভধারণ পরবর্তী পরিস্থিতি:
    • গর্ভাবস্থা বা সন্তান প্রসবের পরেও স্তনে অতিরিক্ত দুধ উৎপন্ন হতে পারে, বিশেষ করে যদি মায়ের শরীর স্বাভাবিকভাবে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে।

লক্ষণ:

স্তনে অতিরিক্ত দুধ উৎপাদনের কিছু সাধারণ লক্ষণ হতে পারে:

  1. স্তনে ভারী বা পূর্ণ অনুভূতি:
    স্তন গুলে ভারী হয়ে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত দুধ উৎপাদনের ফলে পূর্ণতা অনুভূত হতে পারে।
  2. দুধ নিঃসৃত হওয়ার সমস্যা:
    স্তনে অল্প সময় পর পর বা শিশু না খাওয়ার পরেও দুধ নিঃসৃত হতে পারে।
  3. শিশু যে পরিমাণ দুধ খাচ্ছে তার বেশি দুধ উৎপাদন:
    শিশুকে স্তনপান করানোর পরেও স্তন থেকে অতিরিক্ত দুধ বের হওয়া।
  4. স্তনে ব্যথা বা অস্বস্তি:
    অতিরিক্ত দুধ উৎপাদনের কারণে স্তনে চাপ অনুভূতি বা ব্যথা হতে পারে।
  5. স্তনফুলা বা কন্ট্যাঞ্জেন্সি:
    স্তনে অতিরিক্ত দুধ জমে গিয়ে ফোলা বা কন্ট্যাঞ্জেন্সি (কঠিন বা শক্ত হয়ে যাওয়া) হতে পারে।

প্রতিকার:

যদি স্তনে অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন হয়, তাহলে কিছু প্রতিকার গ্রহণ করা যেতে পারে:

  1. দুধ উৎপাদন কমানো:
    • স্তনকে পূর্ণ না হতে দেওয়া: স্তন থেকে নিয়মিত দুধ বের করে নেওয়া প্রয়োজন, তবে পাম্প বা শিশুকে খুব বেশি স্তনপান করানো উচিত নয়। স্তন যদি অধিক মাত্রায় পূর্ণ হতে থাকে, তবে দুধের উৎপাদন কমিয়ে আনা যেতে পারে।
    • দুধের উত্তোলন সীমিত করা: পাম্প বা যন্ত্র ব্যবহার করে অতিরিক্ত দুধ উত্তোলন করা কমিয়ে দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণে দুধ উত্তোলন করুন।
  2. হরমোনাল চিকিৎসা:
    • যদি প্রোল্যাকটিনের মাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়, তবে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় হরমোনাল থেরাপি বা ওষুধ প্রদান করতে পারেন।
  3. স্টিমুলেশন কমানো:
    • স্তনে অতিরিক্ত স্টিমুলেশন কমানো উচিত, যেমন বার বার স্তনপান করানো বা পাম্পের মাধ্যমে দুধ উত্তোলন। এতে দুধ উৎপাদন কমে আসতে পারে।
  4. ঠান্ডা বা গরম সেঁক ব্যবহার করা:
    • স্তনে অতিরিক্ত দুধ জমে গেলে বা ফুলে গেলে ঠান্ডা সেঁক (আইস প্যাক) ব্যবহার করা যেতে পারে, যা চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, গরম সেঁকও কিছু ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে যদি দুধ আটকে থাকে এবং স্তনে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
  5. শিশুকে স্তনপান করানোর জন্য সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ:
    • শিশুকে খুব বেশি সময় ধরে স্তনপান না করানোর চেষ্টা করুন। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা অন্তর পর্যাপ্ত সময় স্তনপান করানো উচিত।
  6. পুষ্টি এবং পানি সঠিকভাবে গ্রহণ:
    • যদি মায়ের শরীর যথেষ্ট পুষ্টি ও পানি না পায়, তবে দুধ উৎপাদন সমস্যা তৈরি হতে পারে। সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করা গুরুত্বপূর্ণ।
  7. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
    • যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা এটি কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে থাকে, তবে গাইনোকোলজিস্ট বা ল্যাকটেশন কনসালটেন্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা বিভিন্ন পরীক্ষা বা চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারবেন।

মনে রাখবেন:

  • স্তনে অতিরিক্ত দুধ উৎপাদন অনেক সময় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হতে পারে, বিশেষত গর্ভধারণ বা প্রসবের পর। তবে, যদি এটি স্বাভাবিক না হয় বা মায়ের জন্য সমস্যা তৈরি করে, তাহলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • দুধ কম বা বেশি হওয়া, উভয় সমস্যার জন্য সঠিক চিকিৎসা বা পরামর্শ নেওয়া দরকার, যাতে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য বজায় রাখা যায়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *