স্তনে দুধ কম হওয়া (Low Milk Supply) একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষত নতুন মায়েদের মধ্যে, যা তাদের মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা প্রভাবিত করতে পারে। স্তনে দুধ কম হওয়া অনেক কারণে হতে পারে এবং বিভিন্ন উপায়ে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
কারণ:
স্তনে দুধ কম হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ:
- মায়ের খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির অভাব: সঠিক পুষ্টির অভাব বা খাদ্যসামগ্রী না খাওয়ার কারণে দুধের উৎপাদন কম হতে পারে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পাওয়া: অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ঘুমের অভাব মায়ের দুধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।
- মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন হরমোনের সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে, হরমোনাল সমস্যা (যেমন প্রোল্যাকটিনের অভাব) স্তনে দুধ কম হওয়ার কারণ হতে পারে।
- প্রাথমিক স্তনপান না হওয়া: নবজাতক শিশুর প্রথম দিকে পর্যাপ্ত স্তনপান না করলে দুধের উৎপাদন কম হতে পারে।
- গর্ভধারণ পরবর্তী সমস্যা: যদি গর্ভধারণের সময় বা প্রসব পরবর্তী কোনো জটিলতা থাকে, যেমন ইনফেকশন বা শল্যচিকিৎসা, তবে দুধ কম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- প্রচুর চাপ বা মানসিক সমস্যা: মানসিক চাপ বা উদ্বেগও স্তনের দুধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।
- অতিরিক্ত দুধ তোলার অভ্যাস না থাকা: যদি শিশুকে নিয়মিত স্তনপান করানোর পরিবর্তে অনেক সময় ধরে না দেওয়া হয়, তবে স্তনে দুধ কম হতে পারে।
- মহিলার বয়স: কিছু মহিলার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্তনে দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে।
- অধিক হরমোন ব্যবহারের কারণে সমস্যা: কিছু দ্যূত বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কারণে স্তনে দুধ কম হতে পারে।
লক্ষণ:
স্তনে দুধ কম হওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ:
- শিশু ক্ষুধার্ত বা কাঁদছে: শিশুকে যথাযথভাবে স্তনপান করানো সত্ত্বেও যদি সে ক্ষুধার্ত থাকে বা কাঁদে, এটি দুধের অভাবের লক্ষণ হতে পারে।
- শিশুর ওজন বৃদ্ধি কম হওয়া: শিশুর ওজন সঠিকভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া বা যথেষ্ট পরিমাণে দুধ না খাওয়া।
- স্তন থেকে অল্প পরিমাণে দুধ বের হওয়া: স্তনে দুধ কম হলে, শিশুর স্তনপান করার সময় খুব অল্প দুধ বের হয়।
- স্তনে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূতি: সাধারণত স্তনে দুধ উৎপাদন হলে চাপ অনুভূত হয়, কিন্তু দুধ কম হলে এমন অনুভূতি না থাকা।
- স্তন খালি মনে হওয়া: স্তনপান শেষে স্তন খালি বা তৃপ্তি না পাওয়া।
- শিশু দীর্ঘ সময় ধরে স্তনপান করে না: শিশুর স্তনপান কম হয়ে গেলে, এটি দুধের উৎপাদন কম হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
প্রতিকার:
স্তনে দুধ কম হলে কিছু কার্যকর প্রতিকার আছে যা মায়েরা অনুসরণ করতে পারেন:
- শিশুকে নিয়মিত স্তনপান করানো: শিশুকে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর স্তনপান করানোর চেষ্টা করুন, যাতে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
- স্তন থেকে দুধ নিঃসরণ: দুধ বের করতে একবারে দুই স্তন থেকেই দুধ খাওয়ানো, যাতে স্তন যথাসম্ভব খালি হয় এবং দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যদি শিশু ঠিকমতো স্তনপান না করতে পারে, তবে বুকের দুধ বের করার জন্য পাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সঠিক পুষ্টি গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে দুধের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। বেশি পরিমাণে পানি, দুধ, ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- বিশ্রাম এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখা: যথেষ্ট বিশ্রাম এবং চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ স্তনে দুধ উৎপাদন কমাতে পারে।
- গরম কাপড় ব্যবহার করা: স্তনে গরম কাপড় বা সেঁক দেওয়ার মাধ্যমে দুধের উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।
- ফিডিং সাপ্লিমেন্ট: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ কিছু খাবার যেমন জিরা, ত্রিফলা, মেথি, আদা, বাদাম, ভেজা খেজুর ইত্যাদি দুধের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
- দুধ উৎপাদনকারী ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে, মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চিকিৎসক কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
- থেরাপি বা পরামর্শ: যদি মায়ের দুধ কম হওয়ার কারণ কোনো শারীরিক বা হরমোনাল সমস্যা হয়, তবে গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিছু সাধারণ খাবার যা দুধের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে:
- মেথি (Fenugreek): মেথি গাছের বীজ দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- ত্রিফলা: এটি দুধের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে।
- বাদাম ও শস্য: প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি যুক্ত খাবার দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- গরম দুধ: দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গরম দুধ খাওয়া ভাল।
মনে রাখুন:
- দুধ কম হওয়ার বিষয়টি অনেক সময় স্বাভাবিক হতে পারে এবং এটি সময়ের সাথে সাথে উন্নতি করতে পারে।
- যদি স্তনে দুধ কম হতে থাকে এবং শিশুর জন্য যথেষ্ট দুধ প্রদান সম্ভব না হয়, তাহলে শিশুকে ফর্মুলা দুধ দেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।
- কোনো সমস্যা বা উদ্বেগ থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।