স্তনের বোটায় প্রদাহ (Breast Abscess or Mastitis):
স্তনের বোটায় প্রদাহ বা স্তনবিষয়ক প্রদাহ, যাকে মেডিক্যাল ভাষায় মাস্টাইটিস (Mastitis) বলা হয়, এটি স্তনে ইনফেকশন বা প্রদাহের একটি অবস্থা, যা সাধারণত গর্ভবতী বা দুধ পান করানো মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে এটি যেকোনো বয়সী মহিলার মধ্যেও হতে পারে। এটি সাধারণত স্তনের টিউব বা দুধের নালিতে সংক্রমণের কারণে ঘটে।
স্তনের বোটায় প্রদাহের কারণ:
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: স্তনের বোটায় প্রদাহের প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা স্তনের দুধের নালিতে প্রবাহিত হয়ে ইনফেকশন সৃষ্টি করে। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত স্তনবৃন্তের মাধ্যমে প্রবেশ করে, বিশেষত যদি স্তনবৃন্তে কোনো ফাটল বা ক্ষত থাকে।
- দুধের প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা: যদি স্তনে দুধের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তবে স্তনব্যথা এবং প্রদাহের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় এবং দুধ পান করানোর সময় স্তনবৃন্ত থেকে দুধ বের না হয়ে আটকে গেলে এটি ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।
- স্তনবৃন্তের ক্ষত বা ফাটল: স্তনবৃন্তে ক্ষত বা ফাটল হলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত দুধ পান করানোর সময় অনুপযুক্ত পদ্ধতিতে শিশুকে স্তন্যপান করানোর কারণে হতে পারে।
- কমপক্ষে বিশ্রাম এবং পুষ্টির অভাব: শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়া এবং সঠিক বিশ্রাম এবং পুষ্টির অভাবও স্তনে প্রদাহের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- দীর্ঘ সময় ধরে দুধ না খাওয়ানো: গর্ভবতী মহিলারা যদি দীর্ঘ সময় ধরে স্তন খালি না করেন বা দুধ না খাওয়ান, তাহলে স্তনের টিউব বা নালি আটকে যেতে পারে, যা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।
স্তনের বোটায় প্রদাহের লক্ষণ:
- স্তনে ব্যথা বা আঘাত: স্তনে তীব্র ব্যথা অনুভব হওয়া, যা সাধারণত প্রদাহিত বা আক্রান্ত এলাকায় থাকে। এটি স্পর্শ করার সময় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
- লালচে ভাব বা শোথ: স্তনের আক্রান্ত এলাকায় লালচে ভাব বা শোথ দেখা যায়, যেখানে প্রদাহ বা ইনফেকশন হয়েছে।
- জ্বর: স্তনে প্রদাহের কারণে শরীরে জ্বর উঠতে পারে। এটি সাধারণত ১০১°F বা তারও বেশি হতে পারে, যা শরীরের প্রদাহের সিগন্যাল দেয়।
- দুধের প্রবাহে বাধা: দুধের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় এবং স্তন থেকে দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা শিশুকে স্তন্যপান করাতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- শরীরের দুর্বলতা: প্রদাহের কারণে শরীরের সামগ্রিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
- পচা গন্ধ (ক্ষতি হওয়ার ক্ষেত্রে): কিছু ক্ষেত্রে, যখন ইনফেকশন বেশ দীর্ঘকাল চলে, তখন স্তনে ক্ষতি হতে পারে, যা থেকে পচা গন্ধ বের হতে পারে।
স্তনের বোটায় প্রদাহের প্রতিকার:
- ব্রেস্ট ফিডিং বা স্তন্যপান (Deworming and Milk Expression): যদি গর্ভবতী মহিলা বা দুধপান করানো মা হন, তবে নিয়মিত স্তন খালি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে স্তন্যপান করানোর মাধ্যমে স্তনের দুধ পরিষ্কার রাখা এবং কোনো ব্লক বা বাধা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। যদি শিশুকে দুধ খাওয়ানো সম্ভব না হয়, তবে দুধ এক্সপ্রেস করার চেষ্টা করতে হবে।
- গরম পানির সেঁক: আক্রান্ত স্তনে গরম পানির সেঁক দেওয়া বা গরম পানির গামছা দিয়ে আক্রান্ত জায়গায় কমপ্লেস প্রয়োগ করা সাহায্য করতে পারে। এটি প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে সহায়ক হতে পারে।
- অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে, চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। এটি প্রদাহ এবং সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করবে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পানি পান: পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, যাতে শরীর দ্রুত পুনরুদ্ধার হয় এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক হয়।
- দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ: স্তনের প্রদাহ বা ইনফেকশন দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি আরও মারাত্মক হতে পারে এবং এটি স্তন থেকে পুঁজ বের হওয়া বা স্তনের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় উপযুক্ত স্তন্যপান পদ্ধতি:
স্তন্যপান করানোর সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। শিশুকে সঠিকভাবে স্তন্যপান করানো এবং স্তনবৃন্তের চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার জন্য সচেতন হতে হবে।
উপসংহার:
স্তনের বোটায় প্রদাহ বা মাস্টাইটিস একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি দ্রুত চিকিৎসা না নেওয়া হলে অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় বা দুধ পান করানোর সময় ঘটে, তবে অন্যান্য মহিলাদেরও হতে পারে। এর প্রতিকার ও নিরাময়ের জন্য সঠিক চিকিৎসা এবং সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি স্তনে প্রদাহ বা ব্যথা অনুভূত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।