Best Homeo Doctor

স্ট্রিকচার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

স্ট্রিকচার (Stricture) হল এক ধরনের শারীরিক অবস্থা যেখানে কোনো শিরা, নালি বা কোনো অঙ্গের পথ সংকুচিত হয়ে যায়, যার ফলে সেখানে রক্ত চলাচল, পুষ্টির প্রবাহ বা অন্যান্য শারীরিক কার্যাবলী বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এটি সাধারণত কোনো আঘাত, প্রদাহ, সংক্রমণ বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে হতে পারে। স্ট্রিকচার বিভিন্ন অঙ্গ বা সিস্টেমে হতে পারে, যেমন মলদ্বার, ইউরেথ্রা, খাদ্যনালী, বা অন্ত্রের মধ্যে।

স্ট্রিকচারের কারণ:

স্ট্রিকচারের পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে:

  1. প্রদাহ বা সংক্রমণ:
    • প্রদাহজনিত রোগ যেমন ক্রোনস ডিজিজ, কলাইটিস, বা গ্যাস্ট্রিক আলসার অন্ত্রের পথকে সংকুচিত করতে পারে, যা স্ট্রিকচার সৃষ্টি করে।
  2. টিউমার বা ক্যান্সার:
    • কোনো টিউমার বা ক্যান্সারের কারণে অঙ্গের পথ সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। এটি সাধারণত টিউমারের বৃদ্ধির কারণে ঘটে।
  3. আঘাত বা অপারেশন:
    • শল্যচিকিৎসা বা কোনো আঘাতের কারণে শিরা বা নালির ক্ষতি হলে বা শল্যচিকিৎসার পর ত্বক বা শিরায় Scar tissue তৈরি হলে স্ট্রিকচার হতে পারে। যেমন, মলদ্বারের শল্যচিকিৎসার পর scar tissue তৈরি হলে মলদ্বারে স্ট্রিকচার হতে পারে।
  4. অনিয়মিত অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল সংক্রমণ:
    • দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের কারণে অঙ্গের শিরা বা নালির গঠন পরিবর্তিত হতে পারে, যা স্ট্রিকচারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  5. যৌন সংক্রমণ বা প্রদাহ:
    • কিছু যৌনরোগ, যেমন গনোরিয়া, বা অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের কারণে ইউরেথ্রার স্ট্রিকচার হতে পারে।
  6. পথের অবরোধ:
    • কোনো অঙ্গের বা শিরার মধ্যে ফোলাভাব, পাথর বা অন্য কোনো রকমের অবরোধ স্ট্রিকচার সৃষ্টি করতে পারে।
  7. জেনেটিক বা বংশগত কারণ:
    • কিছু ক্ষেত্রে স্ট্রিকচার বংশগতভাবে হতে পারে। যেমন, কনজেনিটাল ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার।

স্ট্রিকচারের লক্ষণ:

স্ট্রিকচারের লক্ষণ বা উপসর্গ সেই অঙ্গ বা সিস্টেমের উপর নির্ভর করে যেখানে এটি ঘটে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. মলদ্বারে স্ট্রিকচার:
    • মলত্যাগের সমস্যা: মলত্যাগের সময় ব্যথা, দীর্ঘ সময় লাগা বা অসম্পূর্ণ মলত্যাগ।
    • রক্তপাত: মলদ্বারে স্ট্রিকচারের কারণে রক্তপাত হতে পারে।
    • পেটব্যথা: মলদ্বারের অস্বস্তি বা পেটের ব্যথা।
  2. ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার (মুত্রনালী):
    • মুত্রত্যাগের সমস্যা: ইউরেথ্রা বা মুত্রনালীতে স্ট্রিকচার হলে মুত্রত্যাগে অসুবিধা হতে পারে, যেমন মুত্রপ্রবাহ কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত সময় নেওয়া।
    • অস্বস্তি বা ব্যথা: মুত্রত্যাগের সময় ব্যথা অনুভূতি বা পেটের নিচে চাপ।
    • মুত্রের প্রবাহ দুর্বল হওয়া: মুত্র প্রবাহের শক্তি কমে যাওয়া বা দেরিতে বের হওয়া।
  3. খাদ্যনালীর স্ট্রিকচার:
    • খাবার গিলতে সমস্যা: খাবার বা তরল খেতে গিয়ে গিলতে সমস্যা বা বমি হওয়া।
    • অস্বস্তি বা ব্যথা: গলা বা বুকের মধ্যে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভূতি।
  4. অন্ত্রের স্ট্রিকচার:
    • পেটব্যথা বা ফুলে যাওয়া: অন্ত্রের স্ট্রিকচারের কারণে পেট ফোলা বা ব্যথা হতে পারে।
    • কব্জি বা ডায়রিয়া: মলদ্বারে ব্লক বা স্ট্রিকচারের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।
    • মলদ্বারে রক্তপাত: অন্ত্রের স্ট্রিকচার বা সংক্রমণের কারণে মলদ্বারে রক্তপাত হতে পারে।

স্ট্রিকচারের প্রতিকার:

স্ট্রিকচারের প্রতিকার বা চিকিৎসা সেই সমস্যার উপর নির্ভর করে যেটি এটি সৃষ্টি করেছে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি:

  1. ওষুধ:
    • এন্টিইনফ্লামেটরি ওষুধ: প্রদাহ কমানোর জন্য বিশেষ ধরনের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, যেমন কর্টিকোস্টেরয়েড
    • অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণ থাকলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।
    • ব্যথানাশক: ব্যথা কমানোর জন্য উপযুক্ত পেইনকিলার বা অ্যানালজেসিক ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে।
  2. শল্যচিকিৎসা:
    • স্ট্রিকচার অপসারণ: স্ট্রিকচার যদি গুরুতর হয় বা অন্য কোনো চিকিৎসায় না সেরে, তবে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। এই ধরনের শল্যচিকিৎসার মধ্যে স্ট্রিকচার অপসারণ বা শিরার বা নালির পুনর্গঠন অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
    • স্টেন্ট স্থাপন: কোনো অঙ্গ বা শিরার মধ্যে ব্লক হলে সেখানে একটি স্টেন্ট বসানো হতে পারে, যাতে রক্ত বা অন্যান্য পদার্থ চলাচল করতে পারে।
  3. ব্যালুন ডাইলোটেশন (Balloon Dilation):
    • এই প্রক্রিয়ায় সংকুচিত পথকে প্রশস্ত করতে একটি ব্যালুন ব্যবহার করা হয়, যা ধীরে ধীরে সেই স্থানটিকে প্রশস্ত করে দেয়।
  4. ডায়েট এবং জীবনযাপন:
    • যদি স্ট্রিকচার অন্ত্রের কারণে হয়ে থাকে, তবে খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা উপকারী হতে পারে।
  5. নিয়মিত ফলোআপ:
    • স্ট্রিকচারের চিকিৎসা পরবর্তী পর্যায়ে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, তাই নিয়মিত ফলো-আপ প্রয়োজন।

পরামর্শ:

স্ট্রিকচার একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি চিকিৎসা দ্বারা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যদি স্ট্রিকচারের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি আপনার স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *