Best Homeo Doctor

স্কার্ভি কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

স্কার্ভি (Scurvy) একটি পুষ্টির ঘাটতির কারণে হওয়া রোগ, যা ভিটামিন সি (Vitamin C) এর অভাবে শরীরে দেখা দেয়। ভিটামিন সি শরীরের টিস্যু পুনর্গঠন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং রক্তনালী, দাঁত, ত্বক এবং হাড়ের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি শরীরে দীর্ঘসময় ধরে ভিটামিন সি কম থাকে, তবে স্কার্ভি সৃষ্টি হয়। এটি খুব সহজে চিকিৎসাযোগ্য, তবে যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি গুরুতর হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে জীবনসংহারী হতে পারে।

স্কার্ভির কারণ:

  1. ভিটামিন সি এর অভাব:
    • স্কার্ভি মূলত ভিটামিন সি এর অভাবে ঘটে। ভিটামিন সি (অথবা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) ফল এবং শাকসবজি (বিশেষ করে লেবু, কমলা, আমলকি, টমেটো, সবুজ শাক) থেকে পাওয়া যায়। এই ভিটামিন শরীরের কোলাজেন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা শিরা, রক্তনালি, দাঁত এবং ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  2. অপর্যাপ্ত খাদ্যাভ্যাস:
    • যারা দীর্ঘ সময় ধরে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য (ফল ও শাকসবজি) খাচ্ছেন না, তাদের মধ্যে স্কার্ভি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এটি বিশেষত হতদরিদ্র, অল্প পুষ্টির খাদ্য গ্রহণকারী এবং দুর্বল পুষ্টির জীবনযাপনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  3. দীর্ঘসময় ধরে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া:
    • অত্যধিক প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষিত খাবার খাওয়ার ফলে ভিটামিন সি এর ঘাটতি হতে পারে, কারণ এসব খাবারে ভিটামিন সি অনেক কম থাকে বা একেবারে থাকে না।
  4. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা:
    • চা বা কফি অতিরিক্ত পান করা, অল্প ঘুম, এবং সঠিক পুষ্টি না পাওয়া স্কার্ভির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  5. দীর্ঘস্থায়ী রোগ:
    • কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন কিডনি রোগ, ক্যান্সার, অথবা হজমের সমস্যা (যেমন সেলিয়াক ডিজিজ) শরীরের ভিটামিন সি শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

স্কার্ভির লক্ষণ:

স্কার্ভি প্রাথমিকভাবে তীব্রতা লাভ না করে ধীরে ধীরে লক্ষণ প্রকাশ করে। এর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. দাঁতের সমস্যা:
    • দাঁত হালকা আঘাতে সহজে পড়তে পারে, দাঁত ফুলে ওঠা, দাঁতের গাম হালকা রক্তপাত করা।
    • দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া (গাম ডিজিজ): ভিটামিন সি এর অভাবে দাঁতের মাড়ি নরম হয়ে গিয়ে রক্তপাত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  2. শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণ:
    • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় (যেমন ত্বক, পা, হাত ইত্যাদিতে) রক্তবর্ণ বা নীলাভ দাগ (এবং কখনও কখনও ছোট ছোট ফোঁটা) দেখা দিতে পারে, যা পিটেকিয়াগুলি নামে পরিচিত।
  3. শরীরের দুর্বলতা এবং ক্লান্তি:
    • শরীরে শক্তির অভাব, অস্বস্তি, এবং ক্রমাগত ক্লান্তি অনুভূত হওয়া।
  4. ত্বকের সমস্যাগুলি:
    • ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, খসখসে হওয়া এবং দ্রুত bruise হওয়া (অর্থাৎ, ত্বকে সহজে রক্তক্ষরণ হওয়া)।
  5. মাথা ব্যথা এবং অস্থিরতা:
    • মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা এবং মেজাজে পরিবর্তন হতে পারে।
  6. হাড়ের দুর্বলতা:
    • হাড় ও পেশীর দুর্বলতা এবং ব্যথা অনুভব হওয়া।
  7. অপর্যাপ্ত জখম নিরাময়:
    • শরীরের ক্ষত দ্রুত সেরে ওঠে না এবং ইনফেকশন (সংক্রমণ) হতে পারে। ক্ষত দীর্ঘদিন ধরে শুকোতে পারে।
  8. এম্ফ্যাসিমা (শ্বাস কষ্ট):
    • অতিরিক্ত স্কার্ভি হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে যাদের শ্বাসযন্ত্রের কোনো সমস্যা রয়েছে।
  9. মেন্টাল কনফিউশন (মনোযোগের অভাব):
    • দীর্ঘদিন ভিটামিন সি এর অভাব হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং মনোযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

স্কার্ভির প্রতিকার চিকিৎসা:

  1. ভিটামিন সি এর সাপ্লিমেন্টস:
    • স্কার্ভি চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ভিটামিন সি এর সঠিক পরিমাণ গ্রহণ করা। এটি ফল, শাকসবজি অথবা ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টস এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। প্রতিদিন ৬৫৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত।
    • যেমন: লেবু, কমলা, আমলকি, গাজর, টমেটো, ব্রকলি, কলা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
  2. পুষ্টিকর খাদ্য:
    • স্কার্ভি প্রতিরোধ করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত, যা ভিটামিন সি ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে।
  3. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস:
    • ভিটামিন সি ছাড়াও শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো পুনর্গঠন করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন (যেমন বাদাম, শাকসবজি, বেরি ইত্যাদি)।
  4. বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম:
    • স্কার্ভি হলে শরীরের দুর্বলতা কমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ভাল ঘুম প্রয়োজন। বিশ্রাম শরীরের কোষগুলোর পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
  5. মেডিকেল সাপোর্ট:
    • স্কার্ভির লক্ষণ গুরুতর হলে একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টস এবং অন্যান্য উপকারী খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে গাইড করতে পারেন।
  6. দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা:
    • যদি রোগী দীর্ঘসময় ধরে ভিটামিন সি এর অভাবে ভুগে থাকেন, তবে তাকে পর্যাপ্ত সময় ধরে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সঠিক পুষ্টি ও চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীর সুস্থতা ফিরে আসতে পারে।

স্কার্ভি প্রতিরোধ:

  1. নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া: নিয়মিত ফল এবং শাকসবজি খাওয়া, বিশেষত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার।
  2. প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা: বেশি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাওয়ার থেকে বিরত থাকা, যেগুলোর মধ্যে ভিটামিন সি থাকে না।
  3. শরীরের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা: একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা এবং পুষ্টির অভাব দূর করা।

নোট: স্কার্ভি একটি নিরাময়যোগ্য রোগ, কিন্তু এটি যদি দীর্ঘদিন অচিকিত্সিত থাকে, তবে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *