Best Homeo Doctor

সান্নিপাতিক জ্বর কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

সান্নিপাতিক জ্বর (Sannikpatic Jor) বা টাইফয়েড জ্বর একটি সংক্রামক রোগ যা সালমোনেলা টাইফি (Salmonella typhi) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি সাধারণত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়, বিশেষ করে যদি খাবার বা পানি দুষিত হয়। এটি প্রধানত পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে গুরুতর হতে পারে।

সান্নিপাতিক জ্বরের কারণ:

সান্নিপাতিক জ্বরের কারণ হল সালমোনেলা টাইফি নামক একটি ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মানব পাচনতন্ত্রে প্রবেশ করে এবং ইন্টেস্টাইন বা পেটের অন্যান্য অংশে সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমণটি খাদ্য বা পানির মাধ্যমে হয়ে থাকে, যা দুষিত বা অপরিষ্কার হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি বা পশুর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

এছাড়া সালমোনেলা পারাটি (Salmonella Paratyphi) নামক ব্যাকটেরিয়াও কিছুটা সামান্য জ্বর সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু টাইফয়েড হিসাবে একে ধরা হয় না।

সান্নিপাতিক জ্বরের লক্ষণ:

সান্নিপাতিক জ্বরের উপসর্গ সাধারণত কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর প্রকাশ পেতে শুরু করে। এর প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে:

  1. উচ্চ জ্বর: বিশেষত জ্বরের তাপমাত্রা ১০৩°F (৩৯.৫°C) বা তার বেশি হতে পারে এবং এটি কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।
  2. মাথাব্যথা: সান্নিপাতিক জ্বরে মাথাব্যথা হতে পারে, যা বেশ তীব্র হতে পারে।
  3. দুর্বলতা বা ক্লান্তি: রোগী ক্লান্ত এবং দুর্বল অনুভব করে, সাধারণ কাজকর্ম করতে অক্ষম হতে পারে।
  4. পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি: বিশেষত পেটের নিচের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
  5. হালকা ডায়রিয়া বা কাঁপুনি: রোগী কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা কাঁপুনি অনুভব করতে পারে।
  6. শরীরে গরম অনুভূতি এবং ঘাম: রাতে ঘাম হওয়া, শরীরে গরম অনুভব করা।
  7. ক্ষুধামন্দা বা বমি বমি ভাব: ক্ষুধামন্দা ও বমি বমি ভাবও দেখা দিতে পারে।
  8. অস্থিরতা বা বিভ্রান্তি: রোগী কখনো কখনো বিভ্রান্ত বা অস্থির হয়ে পড়তে পারে।

সান্নিপাতিক জ্বরের প্রতিকার:

সান্নিপাতিক জ্বরের প্রতিকার মূলত অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা করা হয়।

  1. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা:
    • ফ্লুরোকুইনোলোনস (যেমন সিপ্রোফ্লোক্সাসিন) এবং সিফ্রোফ্লক্সাসিন এই ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়।
    • সেফট্রিয়াক্সোন এবং ক্লোরামফেনিকোল এক্সট্রিম ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে।
  2. অ্যান্টিবায়োটিকের উপর চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক সিলেকশন করা প্রয়োজন, কারণ ভাইরাসের স্ট্রেন অনুসারে চিকিত্সার ধরন পরিবর্তিত হতে পারে।
  3. বিশ্রাম এবং সঠিক পুষ্টি:
    • রোগীর বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, যাতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
    • হালকা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি।
  4. পানি খাবার সুরক্ষা:
    • খাবার এবং পানির সুরক্ষা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানে খাবার বা পানি না খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  5. টিকা:
    • টাইফয়েডের টিকা (Typhoid Vaccine) গ্রহণ করা সান্নিপাতিক জ্বরের প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে যারা টাইফয়েড সংক্রমণযুক্ত অঞ্চলে ভ্রমণ করছেন তাদের জন্য।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  1. খাবার পানির সুরক্ষা:
    • পরিষ্কার খাবার ও পানি ব্যবহার করুন এবং বাইরে থেকে খাবার গ্রহণ না করার চেষ্টা করুন।
    • পানি সঠিকভাবে ফুটিয়ে খেতে হবে।
  2. হাত ধোয়ার অভ্যাস:
    • খাবার খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি।
  3. পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা:
    • পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
  4. প্রতিরোধমূলক টিকা:
    • টাইফয়েডের টিকা নেওয়া সান্নিপাতিক জ্বরের প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

সারাংশ:

সান্নিপাতিক জ্বর বা টাইফয়েড একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ, যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ছড়ায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই, সান্নিপাতিক জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *