সাধারণ জ্বর (Fever) হলো শরীরের তাপমাত্রার স্বাভাবিক সীমার বাইরে বৃদ্ধি পাওয়া, যা সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঘটে। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬.৫–৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। যখন শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়, তখন তাকে জ্বর বলা হয়।
সাধারণ জ্বরের কারণ:
সাধারণ জ্বর অনেক কারণে হতে পারে, যার মধ্যে কিছু প্রধান কারণ হল:
- ভাইরাল সংক্রমণ: সর্দি, ফ্লু, চিকুন গুনিয়া, ডেঙ্গু, জাপানী এনসেফালাইটিস, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড ইত্যাদি।
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: টনসিলাইটিস, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), টিউবারকিউলোসিস (TB) ইত্যাদি।
- ইনফেকশন: শরীরের অন্য অঙ্গের ইনফেকশন যেমন কিডনি ইনফেকশন বা শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন।
- অটোইমিউন রোগ: যেমন লুপাস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
- টক্সিক রিঅ্যাকশন: কোনো ড্রাগ বা ভ্যাকসিন গ্রহণের পর।
- গরমের স্ট্রোক: গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বিপদজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
- অন্যান্য শারীরিক অবস্থা: যেমন ক্যান্সার বা টিউমার, স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যা।
সাধারণ জ্বরের লক্ষণ:
- তাপমাত্রা বৃদ্ধি: শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়।
- কম্পন বা শীতল অনুভূতি: শরীর কাঁপতে পারে বা শীতল অনুভূতি হতে পারে।
- মাথাব্যথা: জ্বরের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
- শরীরের ব্যথা: বিশেষ করে পেশী বা অস্থিসন্ধির মধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- ক্লান্তি বা অবসাদ: শরীরে শক্তির অভাব এবং দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
- ঘাম হওয়া বা ঠাণ্ডা লাগা: শরীর ঘামতে পারে অথবা ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
- বমি বা বমি ভাব: কিছু ক্ষেত্রে বমি বা বমি ভাবও হতে পারে।
সাধারণ জ্বরের প্রতিকার:
- পানির পরিমাণ বাড়ানো: জ্বরের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে, তাই প্রচুর পানি, ডাবের পানি, স্যালাইন পান করতে হবে।
- প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন: জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
- বিশ্রাম: শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে। জ্বর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজ করতে সাহায্য করে, এবং বিশ্রাম তা আরও ত্বরান্বিত করে।
- শরীর ঠান্ডা রাখা: ঠাণ্ডা পানিতে শরীর মুছে বা ঠান্ডা সেঁক (cold compress) ব্যবহার করতে পারেন।
- গরম কাপড় পরিধান না করা: গরম কাপড় পরিধান করলে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই হালকা পোশাক পরুন।
- পুষ্টিকর খাবার: ভালো পুষ্টি গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত সেরে উঠবে, তবে খাবারের ক্ষেত্রে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তবে তরল খাবার বা স্যুপ খেতে পারেন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:
- জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি সময় ধরে চলে।
- তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে যায়।
- শ্বাসকষ্ট বা তীব্র মাথাব্যথা।
- গা ঘোরানো, কনফিউশন বা অপরিচিত আচরণ দেখা দেয়।
- শরীরের র্যাশ বা অন্য কোন গুরুতর লক্ষণ।
- শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি বা গর্ভবতী মহিলার জ্বর: বিশেষত এই গ্রুপে যেকোনো জ্বর দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাধারণ জ্বর একটি সাধারণ এবং স্বাভাবিক শরীরিক প্রতিক্রিয়া, তবে যদি কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি না করাই ভালো।