Best Homeo Doctor

সরভঙ্গ কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

সরভঙ্গ (Sore throat) একটি সাধারণ সমস্যা, যা গলার ভিতরের অংশে ব্যথা, খুশখুশি বা অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি, শুষ্কতা বা অন্যান্য শারীরিক কারণে হতে পারে। সরভঙ্গের কারণে গলা খুসখুস করতে পারে, ব্যথা অনুভূত হয় এবং কখনও কখনও গলায় ফোলা বা প্রদাহ হতে পারে।

সরভঙ্গের কারণ:

  1. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ (Viral Infection):
    • সর্দি বা ফ্লু (flu) সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যার ফলে গলার প্রদাহ বা সরভঙ্গ হতে পারে।
    • কোভিড১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা (flu), এডিনোভাইরাস (adenovirus), রহিওভাইরাস (rhinovirus) ইত্যাদি ভাইরাস সরভঙ্গের কারণ হতে পারে।
  2. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ (Bacterial Infection):
    • স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Streptococcus) ব্যাকটেরিয়া গলায় ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে, যা স্ট্রেপ্ট থ্রোট (strep throat) নামে পরিচিত।
    • এটি গলায় প্রদাহ, ফোলা এবং লাল হয়ে যাওয়ার কারণে গলার ভিতরে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  3. অ্যালার্জি (Allergies):
    • ধুলা, পলল, পশুর পশম বা গরম/শীতল বাতাসের জন্য গলার মধ্যে শুষ্কতা বা প্রদাহ হতে পারে, যা সরভঙ্গের কারণ হতে পারে।
  4. শুষ্ক বাতাস (Dry Air):
    • শীতকালে বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে শুষ্ক বাতাসে গলা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যা সরভঙ্গের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
  5. গলা অতিরিক্ত ব্যবহার (Overuse of the Throat):
    • দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, চিৎকার করা বা গান গাওয়া গলার পেশিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার কারণে সরভঙ্গ হতে পারে।
  6. তামাক সেবন বা এলকোহল (Smoking or Alcohol Consumption):
    • তামাক সেবন বা অতিরিক্ত এলকোহল গ্রহণের ফলে গলার শ্লেষ্মা শুষ্ক হয়ে গিয়ে সরভঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে।
  7. গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাগিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD):
    • গ্যাস্ট্রিক এসিড খাদ্যনালী বা গলায় ফিরে আসলে (এসিড রিফ্লাক্স), এটি গলার ভিতর প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা সরভঙ্গের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
  8. গলার ইনফেকশন বা প্রদাহ (Throat Infections or Inflammation):
    • ফ্যারিঞ্জাইটিস (Pharyngitis) বা ল্যারিঞ্জাইটিস (Laryngitis) গলার প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং সরভঙ্গ হতে পারে।
  9. খাদ্য বা পানীয়ের কারণে (Food or Drink-related Issues):
    • অতিরিক্ত মশলাদার বা অ্যাসিডিক খাবার খাওয়ার কারণে গলায় অস্বস্তি বা সরভঙ্গ হতে পারে।

সরভঙ্গের লক্ষণ:

  1. গলায় ব্যথা (Sore Throat):
    • গলার ভিতর তীব্র বা মাঝারি ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা swallowing বা কথা বলার সময় বাড়তে পারে।
  2. গলার শুষ্কতা (Dryness in the Throat):
    • গলার শুষ্কতা বা খুশখুশি অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত রাতে।
  3. গলা ফুলে যাওয়া (Swelling of the Throat):
    • গলার ভিতর বা খাদ্যনালীতে ফুলে যাওয়ার অনুভূতি থাকতে পারে।
  4. কণ্ঠ পরিবর্তন (Change in Voice):
    • সরভঙ্গের কারণে কণ্ঠ ভারী বা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং কণ্ঠনালীতে অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে।
  5. কাশি (Coughing):
    • গলার প্রদাহের কারণে কাশি হতে পারে, যা আরও ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  6. শ্বাসকষ্ট (Difficulty Breathing):
    • গলার প্রদাহ ও শ্লেষ্মার কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
  7. জ্বর (Fever):
    • ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে জ্বর হতে পারে।
  8. বাহ্যিক লক্ষণ (External Symptoms):
    • গলার মধ্যে লালচে বা ফোলা দাগ দেখা দিতে পারে।
  9. শরীরের অবসাদ (Fatigue):
    • শরীর দুর্বল বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষত ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে।

সরভঙ্গের প্রতিকার:

  1. গরম পানি বা গরম পানীয় (Warm Water or Drinks):
    • গরম পানি বা গরম চা খাওয়া গলার শিথিলতা তৈরি করতে পারে। মধু ও লেবু মিশিয়ে গরম পানীয় পান করা গলার জন্য উপকারী হতে পারে।
  2. গার্গল (Salt Gargle):
    • গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন, এটি গলার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা উপশম করে।
  3. বিভিন্ন হালকা খাবার (Light Foods):
    • অতিরিক্ত মশলাদার, তীব্র বা অ্যানালিজিং খাবার পরিহার করুন। হালকা স্যুপ, পিউরি, বা সেদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  4. প্রচুর পানি পান (Hydration):
    • শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করা উচিত। এটি গলার শুষ্কতা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
  5. বাষ্প শ্বাস নেওয়া (Steam Inhalation):
    • গরম পানির বাষ্প শ্বাস নিলে গলা শিথিল হবে এবং শ্লেষ্মা বা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
  6. অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ (Anti-inflammatory Medications):
    • গলার ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাধারণত প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেনের মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  7. কণ্ঠের বিশ্রাম (Voice Rest):
    • অতিরিক্ত কথা বলা বা চিৎকার করা থেকে বিরত থাকুন এবং গলার বিশ্রাম দিন। এটি গলার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
  8. শরীরের অবস্থা শিথিল করা (Relaxing the Body):
    • ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং শিথিলতা জরুরি। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
  9. অ্যালার্জির চিকিৎসা (Allergy Medication):
    • যদি সরভঙ্গ অ্যালার্জির কারণে হয়ে থাকে, তবে অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন হেসটামাইন (antihistamines)।
  10. চিকিৎসকের পরামর্শ (Consult a Doctor):
  • যদি সরভঙ্গ দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, যেমন উচ্চ জ্বর, গলার মধ্যে পুঁজ, বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে:

  • যদি গলা ব্যথা ৫-৭ দিনের বেশি থাকে।
  • যদি গলায় রক্ত দেখা যায়।
  • যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
  • যদি জ্বর উচ্চমাত্রায় থাকে (১০১°F বা তার বেশি)।
  • যদি গলার ভিতর একদম কিছু আটকে যাওয়ার অনুভূতি হয়।
  • যদি গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়।

সরভঙ্গ সাধারণত অস্থায়ী এবং সহজ প্রতিকার দ্বারা নিরাময়যোগ্য। তবে যদি সমস্যা গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *