Best Homeo Doctor

সবিরাম জ্বর কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

সবিরাম জ্বর (Persistent or Continuous Fever) এমন একটি জ্বর যা কয়েক দিন বা সপ্তাহ ধরে অবিরত থাকে এবং কমে না। এটি সাধারণত শরীরের তাপমাত্রার স্থিতিশীল বৃদ্ধির কারণে ঘটে, যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এই ধরনের জ্বর সাধারণত কোনো গুরুতর সংক্রমণ বা অসুস্থতার ইঙ্গিত হতে পারে।

কারণ:

সবিরাম জ্বরের বিভিন্ন কারণ হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হল:

  1. সংক্রমণ:
    • ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ফাঙ্গাস দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ। যেমন: টিউবারকুলোসিস (TB), টাইফয়েড, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ভাইরাল ফিভার ইত্যাদি।
  2. অটোইমিউন ডিজিজ:
    • শরীরের ইমিউন সিস্টেম যখন নিজেই শরীরের টিস্যু বা অঙ্গকে আক্রমণ করে, তখন এটি সবিরাম জ্বরের কারণ হতে পারে। যেমন: লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
  3. ক্যান্সার:
    • কিছু ক্যান্সার, বিশেষত লিম্ফোমা বা লিউকেমিয়া, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  4. হরমোনাল সমস্যা:
    • কিছু থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যা (যেমন: হাইপারথাইরয়ডিজম) বা অ্যাডিসনের ডিজিজ (Adrenal Gland Disorders) সবিরাম জ্বরের কারণ হতে পারে।
  5. হিস্ট্রিকাল ইনফেকশন:
    • গেলক এবং চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের মতো রোগের ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
  6. এনফ্লেমেটরি কন্ডিশন:
    • কিছু প্রকারের প্রদাহজনিত সমস্যা, যেমন ইনফ্লেমেটরি বাওল ডিজিজ (IBD) বা ক্রোন ডিজিজ এর ফলে দীর্ঘকালীন জ্বর হতে পারে।
  7. ড্রাগ রিঅ্যাকশন:
    • কিছু ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন) বা ড্রাগ ফিভার হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী জ্বর সৃষ্টি করে।
  8. সংক্রামক রোগের পরে জটিলতা:
    • কিছু ক্ষেত্রে, সংক্রামক রোগের পর বা তাদের চিকিৎসার পরে, জ্বর দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে।
  9. বিভিন্ন সংক্রমণের পরবর্তী অবস্থা:
    • যেমন, একাধিক সংক্রমণের পর (পুনরায় ইনফেকশন) অথবা পেটের ইনফেকশন বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের পরেও জ্বর থাকতে পারে।

লক্ষণ:

সবিরাম জ্বরের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  1. দীর্ঘস্থায়ী জ্বর:
    • শরীরের তাপমাত্রা ১০২°F (38.9°C) বা তার বেশি থাকে এবং এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে চলে।
  2. শরীরের দুর্বলতা:
    • দীর্ঘকালীন জ্বরের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  3. শরীরের অস্বস্তি:
    • সারা শরীরে অস্বস্তি, ব্যথা এবং অস্বাভাবিক তাপ অনুভূতি থাকতে পারে।
  4. শরীরে ঠাণ্ডা লাগা বা ঘাম হওয়া:
    • অনেক সময় ঘাম বা ঠাণ্ডা লাগা অনুভূত হতে পারে, বিশেষত রাতের দিকে।
  5. শরীরের অন্যান্য সমস্যা:
    • যদি কোনো সংক্রমণ বা অসুখের কারণে জ্বর হয়ে থাকে, তবে সেগুলির পাশাপাশি হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, এবং পেটে ব্যথা এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  6. হালকা সর্দি বা শ্বাসকষ্ট:
    • কিছু ক্ষেত্রে, যদি ভাইরাল ইনফেকশন থাকে তবে সর্দি বা শ্বাসকষ্ট সহ জ্বর হতে পারে।
  7. বিরক্তি বা বিভ্রান্তি:
    • বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে জ্বরের সাথে মস্তিষ্কের বিভ্রান্তি বা অবসাদ হতে পারে।

প্রতিকার:

সবিরাম জ্বরের চিকিৎসা কারণ অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ প্রতিকার নিম্নে দেওয়া হলো:

  1. চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • যেহেতু সবিরাম জ্বর অনেক গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে, তাই এর মূল কারণ নির্ধারণ করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা:
    • যদি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে জ্বর হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হতে পারে।
  3. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন:
    • সাধারণ জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন দেওয়া যেতে পারে। তবে ডোজ এবং ব্যবহারের সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  4. প্রচুর পানি পান করা:
    • শরীরের তাপমাত্রা কমাতে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ।
  5. বিশ্রাম:
    • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
  6. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
    • যদি সবিরাম জ্বর কোনো ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ দ্বারা হয়ে থাকে, তবে সেই রোগের প্রতিরোধের জন্য টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে হতে পারে (যেমন টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা পোলিও টিকা)।
  7. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:
    • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন: ফল, শাকসবজি, প্রোটিন।
  8. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা:
    • গরম সেঁক বা ঠাণ্ডা সেঁক দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্নান বা গরম পানি দিয়ে সেঁক দেওয়া জ্বর কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  9. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা জ্বরের জন্য চিকিৎসককে যোগাযোগ করা:
    • যদি জ্বর ৩-৫ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা শরীরের অন্যান্য লক্ষণ যেমন, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দেয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে:

  1. দিন বা তার বেশি সময় ধরে জ্বর থাকলে।
  2. জ্বরের সাথে ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা বা দুর্বলতা বেশি হলে।
  3. জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড গা ঘোরা বা বিভ্রান্তি দেখা দিলে।
  4. শরীরে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে (যেমন: ত্বকের ্যাশ, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট)
  5. যদি আপনি কোনো গুরুতর অসুখের ইতিহাস থাকেন।

উপসংহার:

সবিরাম জ্বর অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং এটি কখনো কখনো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *