Best Homeo Doctor

শোথ উদর কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

শোথ উদর (Ascites) হল এমন একটি অবস্থার মধ্যে, যেখানে পেটে অতিরিক্ত তরল জমা হতে থাকে। এটি একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা যা সাধারণত লিভারের সমস্যা, হার্টের অসুস্থতা, বা অন্যান্য শারীরিক অবস্থার কারণে হতে পারে। উদরের শোথ বা পানি জমা হওয়া পেটের আকার বৃদ্ধি এবং চাপ অনুভূতির কারণ হতে পারে, এবং এটি গুরুতর সমস্যার চিহ্ন হতে পারে।

কারণ:

শোথ উদরের প্রধান কারণ সাধারণত পেটের ভিতরে অতিরিক্ত তরল জমা হওয়া, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লিভারের রোগ বা কিডনির অসুস্থতা এর কারণে হয়। কিছু সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হল:

  1. লিভার সিরোসিস (Liver Cirrhosis):
    • এটি একটি খুব সাধারণ কারণ শোথ উদরের। লিভারের ক্ষতি বা সিরোসিসের ফলে লিভারে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে পেটের মধ্যে তরল জমা হতে থাকে। সিরোসিসে লিভার সঙ্কুচিত হয় এবং ফাইব্রোসিস সৃষ্টি হয়, যা পেটের মধ্যে তরল জমা হতে সহায়ক হয়।
  2. হার্টের অসুস্থতা (Heart Failure):
    • যখন হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন রক্ত সঠিকভাবে সঞ্চালিত হয় না এবং তরল শরীরে জমা হতে শুরু করে, বিশেষত পেটের মধ্যে।
  3. কিডনি রোগ (Kidney Disease):
    • কিডনির সমস্যার কারণে শরীরের তরল এবং লবণ (Salt) ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার ফলস্বরূপ পেটের মধ্যে শোথ (তরল জমা) হতে পারে।
  4. ক্যান্সার (Cancer):
    • বিশেষত লিভার, গ্যাস্ট্রিক বা প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার হলে পেটে তরল জমা হতে পারে। ক্যান্সারের কারণে পেটে রক্তপ্রবাহ কমে গিয়ে শোথের সৃষ্টি হতে পারে।
  5. ইনফেকশন (Infection):
    • পেটে ইনফেকশন (যেমন: পেরিটোনাইটিস – Peritonitis) বা অন্যান্য সংক্রমণও শোথ উদরের কারণ হতে পারে, যা পেটের শ্লেষ্মা বা লিনিংতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং তরল জমা হতে পারে।
  6. প্রতিস্থাপনের কারণে (Post-surgical):
    • অপারেশনের পর পেটে তরল জমা হতে পারে, বিশেষত যদি অপারেশনটি লিভার বা পেটের কাছাকাছি হয়ে থাকে।
  7. পুষ্টির অভাব (Malnutrition):
    • শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে (যেমন কুইশিওরকর) পেটের মধ্যে তরল জমা হতে পারে।
  8. হারমোনাল বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা:
    • কিছু হরমোনাল অস্বাভাবিকতা বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা (যেমন থাইরয়েডের সমস্যা) তরল জমার জন্য দায়ী হতে পারে।

লক্ষণ:

শোথ উদরের লক্ষণ সাধারণত পেটে তরল জমার সাথে সম্পর্কিত এবং এগুলি তীব্র হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  1. পেট ফুলে যাওয়া:
    • পেটের আকার অনেক বৃদ্ধি পায় এবং এটি কঠিন বা চাপ অনুভূত হতে পারে। একে “পেটের শোথ” বা “পেটের পানি” বলা হয়।
  2. অস্বস্তি বা চাপ অনুভূতি:
    • পেটে জমা হওয়া তরল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে রোগী অস্বস্তি বা শ্বাস নিতে সমস্যা অনুভব করতে পারে।
  3. গ্যাস বা হজমের সমস্যা:
    • পেটের মধ্যে তরল জমা হওয়ার ফলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, অথবা হজমের সমস্যা হতে পারে।
  4. অতি তৃষ্ণা বা পিপাসা:
    • শরীরের তরল ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভূত হতে পারে।
  5. জ্বর বা ঠাণ্ডা অনুভূতি:
    • যদি পেটের তরলের সঞ্চালন বা ইনফেকশন থাকে, তবে রোগী জ্বর বা ঠাণ্ডা অনুভব করতে পারে।
  6. শ্বাসকষ্ট বা শ্বাসের সমস্যা:
    • পেট ফুলে গিয়ে ডায়াফ্রাম (শ্বাসযন্ত্রের পেশি) চাপ পড়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
  7. শরীরের অতিরিক্ত দুর্বলতা:
    • শরীরে তরল জমার কারণে দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, এবং শক্তি কমে যেতে পারে।
  8. মুত্রের পরিমাণ কম হওয়া:
    • কিডনি বা হার্টের সমস্যা থাকলে মুত্রের পরিমাণ কম হতে পারে, যা শোথ উদরের আরেকটি লক্ষণ হতে পারে।

প্রতিকার:

শোথ উদরের চিকিৎসা তার কারণের ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ প্রতিকার নিচে দেওয়া হলো:

  1. দ্রুত চিকিৎসা (Immediate medical treatment):
    • ডায়ুরেটিক (Diuretics): শোথের কারণে শরীরে জমা হওয়া তরল কমানোর জন্য ডায়ুরেটিক ওষুধ (যেমন ফিউরোসেমাইড) প্রয়োগ করা হয়। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বের করতে সাহায্য করে।
    • এডমিনিস্ট্রেশন অফ আলবিউমিন (Albumin administration): যদি প্রোটিনের অভাব থাকে, তবে আলবিউমিন ইন্ট্রাভেনাস দেওয়া হতে পারে।
  2. লিভার কিডনি সমস্যা সমাধান:
    • যদি শোথ উদর লিভার সিরোসিস বা কিডনি রোগের কারণে হয়, তবে তার নির্দিষ্ট চিকিৎসা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, কিডনি ডায়ালাইসিস, বা লিভারের জন্য উপযুক্ত ড্রাগ প্রয়োগ করা হতে পারে।
  3. পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (Peritoneal Dialysis):
    • কিডনি বা লিভারের সমস্যার কারণে শোথ হলে পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস করা হতে পারে, যাতে পেটের ভিতরে জমে থাকা তরল বের করা যায়।
  4. পেট থেকে তরল বের করার জন্য প্যারাসেনটেসিস (Paracentesis):
    • কিছু ক্ষেত্রে, পেট থেকে অতিরিক্ত তরল বের করার জন্য সার্জারির মাধ্যমে প্যারাসেনটেসিস করা হয়। এতে পেটের মধ্যে ছোট একটি ফুটো করে তরল বের করে দেওয়া হয়।
  5. অপারেশন বা ট্রান্সপ্লান্ট (Surgical treatment or organ transplant):
    • গুরুতর অবস্থায়, বিশেষত লিভারের সিরোসিস বা ক্যান্সারের কারণে শোথ হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হতে পারে।
  6. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
    • পুষ্টির অভাব প্রতিরোধে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ডায়েটে বেশি পরিমাণে সল্ট বা সোডিয়াম না রাখা উচিত।
    • লবণ, ফ্যাট এবং সুগারের মাত্রা কমানো উচিত।
  7. লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
    • অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলি লিভারের সমস্যার উন্নতি ঘটাতে পারে।
    • ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা উচিত।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি পেট ফুলে গিয়ে অস্বস্তি বা চাপ অনুভূত হয়।
  • যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় বা গ্যাসের সমস্যা বাড়ে।
  • যদি শরীরের তীব্র দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব হয়।
  • যদি মুত্রের পরিমাণ কমে যায় বা অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ দেখা দেয়।
  • যদি জ্বর বা ঠাণ্ডা অনুভূতি হয়।

শোথ উদরের চিকিৎসা যদি অবিলম্বে না করা হয়, তবে এটি জীবনসংকট সৃষ্টি করতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *