Best Homeo Doctor

শিশুরা খেতে না চাইলে তার কারন,লক্ষন,প্রতিকার

শিশুরা খেতে না চাইলে (Loss of Appetite in Children) একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায়ই শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। শিশুদের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে একাধিক কারণে, তবে এটি সাধারণত একটি অস্থায়ী সমস্যা হয়, যা কিছু সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করলে সমাধান করা যেতে পারে। তবে কখনও কখনও এটি গুরুতর সমস্যার সূচকও হতে পারে, তাই এর কারণ ও উপসর্গগুলো বুঝে প্রতিকার করা গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর খেতে না চাওয়ার কারণ:

  1. অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস:
    • অনেক সময় শিশুরা অতিরিক্ত মিষ্টি বা জাঙ্ক ফুড খেলে সঠিক পুষ্টি না পেয়ে খাবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
  2. মানসিক বা আবেগগত চাপ:
    • স্কুলের চাপ, মানসিক উদ্বেগ, পারিবারিক সমস্যা, বা নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে শিশুর খিদে কমে যেতে পারে।
  3. অতিরিক্ত খেলা বা শারীরিক পরিশ্রম:
    • যদি শিশুরা খেলার সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে, তখন তারা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
  4. সুসংগত সময়সূচির অভাব:
    • অনিয়মিত সময়সূচিতে খাবার খাওয়ার ফলে শিশু খাবার এড়িয়ে চলে। খাবারের সময়সূচি ঠিক না থাকলে বা অনেক সময় অতিবাহিত হলে শিশুর খিদে কমে যেতে পারে।
  5. স্বাস্থ্যগত সমস্যা:
    • কোনো ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, গলা ব্যথা, পেটের সমস্যা, বা পেট ফোলা থাকলে শিশুর খেতে না চাইতে পারে।
    • কিছু শিশুর হজমের সমস্যা (যেমন অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা কোষ্ঠকাঠিন্য) থাকলে খাওয়া সমস্যা হতে পারে।
  6. দাঁতের সমস্যা:
    • দাঁত উঠা বা মাড়ি ব্যথা হলে শিশুরা খেতে আগ্রহী হয় না এবং তারা খাবার এড়িয়ে চলতে পারে।
  7. অতিরিক্ত পিপাসা বা পানির সমস্যা:
    • অনেক সময় শিশুরা বেশি পানি বা পানীয় খেয়ে ফেললে খাবার খেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
  8. প্রিয় খাবারের অভাব:
    • যখন শিশুর খাবারের পছন্দ অনুযায়ী খাবার না দেওয়া হয়, তখন তারা খেতে অনীহা দেখাতে পারে।
  9. পুষ্টির অভাব:
    • কিছু শিশুরে খেতে না চাওয়ার পেছনে ভিটামিন বা মিনারেল অভাব (যেমন আয়রন, ভিটামিন D) থাকতে পারে।

শিশুর খেতে না চাওয়ার লক্ষণ:

  1. খাবারের প্রতি অনীহা:
    • শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া এবং নিয়মিত খাবার খেতে না চাওয়া।
  2. অস্বাভাবিক ক্ষুধার অভাব:
    • দিনের বড় একটা সময় বা খাবারের সময় ক্ষুধা অনুভব না করা বা খুব কম খাওয়া।
  3. অতিরিক্ত পিপাসা:
    • শিশুর পানি বা অন্যান্য পানীয় খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়া, যার কারণে খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়।
  4. শরীরের দুর্বলতা বা ক্লান্তি:
    • নিয়মিত খাবার না খাওয়ার কারণে শিশুর শরীরে শক্তির অভাব হতে পারে এবং তারা দুর্বল বা ক্লান্ত অনুভব করতে পারে।
  5. খাবার বেছে খাওয়া:
    • কিছু শিশু এক ধরনের খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখায়, কিন্তু অন্যান্য খাবার খেতে চায় না।
  6. শারীরিক অসুস্থতা:
    • গলা ব্যথা, পেট ব্যথা, বা অন্য শারীরিক অসুস্থতা হলে শিশু খেতে চায় না।

শিশুর খেতে না চাওয়ার প্রতিকার:

  1. রুটিন এবং সঠিক সময়সূচি:
    • খাবারের সময়সূচি সঠিকভাবে নির্ধারণ করুন এবং নিয়মিত খাবার পরিবেশন করুন। শিশুদের জন্য সুষম ও নির্দিষ্ট সময়ের খাবার তৈরি করা জরুরি।
  2. খাবার পরিবেশ:
    • খাবারের পরিবেশকে আনন্দদায়ক এবং শান্তিপূর্ণ রাখুন। শিশুর সামনে খাবার রাখার সময় তাকে চাপে না ফেলে, হাসিমুখে এবং ধীরে ধীরে খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন।
  3. ভিন্ন রকম খাবারের পরিবেশন:
    • একঘেয়েমি কাটাতে খাবারে ভিন্নতা আনুন। শিশুর পছন্দ অনুযায়ী নতুন খাবার চেষ্টা করুন এবং তার পছন্দের খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন।
  4. ছোট পরিমাণে খাবার পরিবেশন:
    • একসাথে অনেক খাবার পরিবেশন না করে, ছোট ছোট পরিমাণে খাবার দিন। এতে শিশুর জন্য খাওয়া সহজ এবং আরামদায়ক হবে।
  5. শিশুকে সহায়তা করা:
    • শিশুকে নিজে নিজে খাবার খেতে উৎসাহিত করুন, এবং তাকে খাবারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিন। এতে তার খাওয়ার আগ্রহ বাড়বে।
  6. নতুন খাবার পরিচয় করানো:
    • শিশুদের নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করাতে হলে সেটা ধীরে ধীরে করুন। শুরুতে তেমন কিছু ভিন্ন খাবার পরিবেশন না করাই ভালো।
  7. আবেগগত সহানুভূতি:
    • শিশুর মানসিক অবস্থা বা আবেগের প্রতি মনোযোগ দিন। যদি সে মানসিকভাবে চাপ বা উদ্বেগ অনুভব করে, তার সাথে কথা বলুন এবং তাকে শান্ত করতে সাহায্য করুন।
  8. খাবার পরিপুষ্টিকর হওয়া উচিত:
    • শিশুকে পুষ্টিকর, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার দিন, যেমন সবজি, ফল, দুধ, ডাল, মাছ ইত্যাদি, যাতে তাদের পুষ্টির ঘাটতি না হয়।
  9. দাঁত বা মাড়ির সমস্যা চিহ্নিত করা:
    • দাঁত ওঠার সময় বা মাড়ি ব্যথার কারণে যদি শিশুর খাওয়ার সমস্যা হয়, তবে একটি ভালো দাঁতের ডাক্তার থেকে পরামর্শ নিতে হবে।
  10. চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • যদি শিশুর খেতে না চাওয়ার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা যদি এর পেছনে কোনো শারীরিক সমস্যা (যেমন সংক্রমণ, হজমের সমস্যা, বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা) থাকে, তাহলে একজন পেডিয়াট্রিশিয়ান বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথা:

শিশুদের খেতে না চাওয়ার সমস্যা সাধারণত সাময়িক হয় এবং এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে, যদি এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলে বা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *